স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করায় প্রতিবন্ধী নারীকে তুলে নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ

স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করায় প্রতিবন্ধী নারীকে তুলে নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ

বরিশাল আদালতে স্বামীর বিরুদ্ধে করা মামলার সাক্ষী দিতে এসে শারীরিক প্রতিবন্ধী এক গৃহবধূ সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরে এক পথচারী তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের গাইনী বিভাগে ভর্তি করেন। জ্ঞান ফেরার পর ওই গৃহবধূ জানান, তার স্বামী প্রবির মিত্র, ননদের স্বামী গৌরাঙ্গ চন্দ্র ও মানবসহ ৫ থেকে ৭ জন তাকে অপহরণ করে ধর্ষণ করেছে। মঙ্গলবার ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের (ওসিসি) এসআই মো.শাহিন সাংবাদিকদের এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তার স্বামী প্রবীর পিরোজপুরের নেছারাবাদের কুড়িয়ানা আদাবাড়ি এলাকার বিনেন্দ্র মিত্রের ছেলে। নির্যাতিতার বাড়ি গৌরনদীর নলচিড়া গ্রামে। নির্যাতিতার মা জানান, ২০১৩ সালে পারিবারিকভাবে প্রবিরের সঙ্গে তার মেয়ের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় জামাইকে যৌতুক হিসেবে নগদ ২ লাখ টাকা, ২ ভরি স্বর্ণালংকার ও মূল্যবান মালামাল দেওয়া হয়। এক বছরের মাথায় তাদের একটি সন্তান হয়। সন্তান জন্ম নেওয়ার পর প্রবীরের আসল রূপ বের হয়। প্রবীর আরও এক লাখ টাকা যৌতুকের জন্য তার মেয়েকে শারীরিক নির্যাতন শুরু করে। ধীরে ধীরে এ নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়তে থাকে। এর মধ্যে প্রবীরের পরকিয়া প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টিও জানতে পারে তার মেয়ে। এরপর পরকিয়া নিয়ে কথা বললে প্রবীর তার মেয়ের ওপর অমানুষিক শারীরিক নির্যাতন চালাতে থাকে। নির্যাতনে জর্জরিত হয়ে মেয়ে প্রায়ই বাড়ি এসে তাদের জানাতো। তাদের ধারণা ছিল ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু কোনভাবেই ঠিক হয় না। উল্টো কথায় কথায় তার মেয়ের ওপর নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় প্রবীর। কোনও ভাবেই ওই সংসারে টিকতে না পেরে তার মেয়ে সেখান থেকে চলে আসে। প্রবীরের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে দু’টি মামলা দায়ের করে। মামলা দায়েরের পর প্রবীর আরও ক্ষুব্ধ হয়ে বিভিন্ন সময় তার মেয়েকে হত্যার হুমকি দেয় এবং মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দেয়। কিন্তু তার মেয়ে মামলা তুলতে রাজী না হওয়ায় তারা হুমকি-ধামকি চালিয়ে যেতে থাকে। তিনি আরও জানান, তার মেয়ে ১৬ এপ্রিল মামলার সাক্ষী দিতে বরিশাল আদালতে যায়। আদালত থেকে বের হওয়ার সময় অপরচিত এক ব্যক্তি তাকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর তার মুখে রুমল চেপে ধরলে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। জ্ঞান ফিরলে সে দেখে তাকে একটি ঘরের মধ্যে আটকে রাখা হয়েছে। সেখানে তার স্বামী প্রবীর,ননদের জামাই গৌরাঙ্গ ও মানবসহ ৫/৭ জন তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। নির্যাতন সয্য করতে না পেরে সে আবারও জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এরপর তার মেয়েকে সড়কের পাশে ফেলে রেখে তারা চলে যায়। পরে এক পথচারী তাকে উদ্ধার করে শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। ওই পথচারীই তাদের খবর দেয়। খবর পেয়ে তিনি মেডিক্যালে এসে দেখেন মেয়ের অবস্থা গুরুতর। ২১ এপ্রিল ওই গৃহবধূকে ওসিসিতে পাঠানো হয়েছে। এদিকে গণধর্ষণের মামলা থেকে রেহাই পেতে প্রবীর ১৮ এপ্রিল পূর্বের মামলায় আত্মসমর্পণ করলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এ ব্যাপারে শেরেবাংলা মেডিক্যালের গাইনী বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. খুরশীদ জাহান বলেন,‘গণধর্ষণের কারণে ওই গৃহবধূ মা হওয়ার ক্ষমতা হারানোর সম্ভবনা রয়েছে। তাকে আমরা ভালোভাবে পরীক্ষানীরিক্ষা করছি। তাছাড়া তার নিরাপত্তার বিষয়টি চিন্তা করে তাকে ওসিসিতে স্থানান্তর করা হয়েছে। ওসিসি’র এসআই মো. শাহিন জানিয়েছেন,ওই গৃহবধূ সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। জ্ঞান ফেরার পর গৃহবধূ স্বামীসহ তিনজনের নাম বলতে পেরেছেন। তবে তাকে কে বা কারা মেডিক্যালে ভর্তি করেছে সে বিষয়ে কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে কোতোয়ালি মডেল থানায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোতোয়ালি থানার ওসি নুরুল ইসলাম বলেন,‘এ ব্যাপারে কেউ পুলিশকে কিছু জানায়নি। তাই আমরা দেরিতে জানতে পেরেছি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।