হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ

হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ

বরিশালে জুয়ার আসর থেকে আটক করা হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামীকে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ১৫ মার্চ গৌরনদী উপজেলার একটি জুয়ার আসর থেকে ২জনকে আটক করে গৌরনদী থানা পুলিশ। এদের মধ্যে বেল্লাল ফকির নামে একজন ওই থানার একটি হত্যা মামলার এক নম্বর পলাতক আসামী ছিলেন। গত ১৬ মার্চ তাকে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করে ছেড়ে দেওয়া হয়।
জুয়ার আসর থেকে আটক দুইজন স্থানীয় আ. খালেক ফকিরের ছেলে বেল্লাল ফকির এবং আলাউদ্দিন ব্যাপারীর ছেলে মাসুদ ব্যাপারী।
অভিযোগ উঠেছে যোগসাজসে পলাতক আসামী না দেখিয়ে ভ্রাম্যমান আদালতে জরিমানা করে বেল্লাল ফকিরকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় বরিশাল জেলা পুলিশে তোলপাড় চলছে।

এব্যাপারে গৌরনদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম সরোয়ার ভোরের আলোকে বলেন, ওয়ারেন্টভুক্ত আসামীকে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়। এটা ভিত্তিহীন অভিযোগ। থানা থেকে হত্যা মামলায় বেল্লালের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হয়েছে। এরপর আদালত থেকে ওয়ারেন্ট আসার আগ আর কাউকে গ্রেপ্তার কিংবা ধরা যাবে না। তাছাড়া হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী বেল্লালের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট গৌরনদী থানায় পৌাঁছায় ১৬ মার্চ। আর ১৫ মার্চ জুয়া খেলার অপরাধে আটক হওয়ায় বেল্লালকে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পুলিশ কোনভাবেই জানতে পারেনি যে তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট দেওয়া হয়েছে। তাই পুলিশ বিষয়টি জানতে পারেনি।

জানা যায়, গত ১৫মার্চ রাত সাড়ে ১০টার দিকে গৌরনদীর পূর্ব ডুমুরিয়া গ্রামের সরদার বাড়ি সংলগ্ন একটি জুয়ার আসরে হানা দিয়ে বেল্লাল ফকির এবং মাসুদ ব্যাপারী নামে দুইজনকে আটক করে পুলিশ। এদের মধ্যে বেল্লাল ফকির ওই এলাকায় সংঘটিত কবির ফরিক হত্যা মামলার চার্জশীটভুক্ত আসামী। তার বিরুদ্ধে আদালতের ওয়ারেন্টও রয়েছে। বিষয়টি ওই রাতেই স্থানীয় সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান মিজান থানা পুলিশকে অবহিত করেন। বিষয়টি জানার পরও ওয়ারেন্টের বিষয়টি গোপন রেখে পরদিন ১৬ মার্চ তাদের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ভ্রাম্যমান আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারক ইসরাত জাহান জুয়া খেলার অপরাধে ওই দুই ব্যক্তিকে ১ হাজার টাকা করে মোট ২ হাজার টাকা জরিমানা করেন। জরিমানার টাকা আদায়ের পর পুলিশ তাদের ছেড়ে দেয়।
এদিকে গত ১৭ মার্চ হত্যা মামলার আসামীকে জুয়া খেলার অপরাধে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে লঘু দন্ড দিয়ে ছেড়ে দেয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে গৌরনদী উপজেলায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। 

গৌরনদী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মাহবুবুর রহমান জানান, বেল্লাল ফকির হত্যা মামলার আসামী সেটা পুলিশের জানা ছিলো না। তাকে জুয়ার আসর থেকে ধরা হয়েছে। ওই অপরাধে ভ্রাম্যমান আদালত তাকে আর্থিক জরিমানা করে মুক্তির নির্দেশ দেন। পুলিশ তাকে মুক্তি দেয়। বেল্লালের বিরুদ্ধে ১৬ মার্চ সকাল পর্যন্ত থানায় কোন ওয়ারেন্ট ছিলো না বলেও তিনি দাবি করেন। 

এব্যাপারে বরিশালের গৌরনদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবব্দুর রব হাওলাদার ভোরের আলোকে বলেন, বিষয়টি আজকেই আমি জেনেছি। পরে খবর নিয়ে জানতে পারি আটককৃত বেল্লাল একটি হত্যা মামলার চাজসীটভুক্ত পলাতক আসামী। পুলিশ তাকে চিহ্নিত করতে পারেনি। জুয়া খেলার অপরাধে আটক করা বেল্লালকে ভ্রাম্যমান আদালতে সোপর্দ করে আর্থিক জরিমানার পর ছেড়ে দেয়া হয় ১৬ মার্চ। আর বেল্লালের  বিরুদ্ধে গৌরনদী থানায় ওয়ারেন্ট এসেছে পরদিন ১৭ মার্চ। পুলিশ এখন ওই আসামীগে গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে। এব্যাপারে সেরকম কোন অভিযোগ উঠলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আদালত সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ২৮ নভেম্বর দুপরে আমগাছের ডাল ও পাতার ভাগাভাগি নিয়েগৌরনদী উপজেলায় পূর্ব ডুমুরিয়া গ্রামের শাহআলম ফকিরের পরিবারের সাথে ও তার প্রতিবেশী বেল্লাল ফকিকের পরিবারের ঝগড়া হয়। এর এক পর্যায়ে বেল্লাল ফকির লাঠি দিয়ে শাহআলমের ভাই কবির ফকিকের মাথায় আঘাত করেন। এতে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তাকে প্রথমে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেলে এবং পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন স্বজনরা। ওই ঘটনার ৬দিন পর ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কবির ফকির মারা যায়। 

এদিকে মারামারির ঘটনায় শাহআলম ফকির বাদি হয়ে ২৯ নভেম্বর বেল্লাল ফকির ও তার ভাই আহমেদ ফকিরকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন। কবির মারা যাওয়ার পর ওই মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়। ওই মামলায় (জিআর-৩৬৭/১৮) বেল্লালের ভাই আহমেদ ফকির আদালত থেকে জামিন নিয়ে পলাতক রয়েছেন। এই মামলার ১ নম্বর আসামী বেল্লালের বিরুদ্ধে গত ১১ মার্চ আদালত থেকে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারী হয়।

কবির ফকির হত্যা মামলার চার্জশীটভূক্ত ১ নম্বর আসামী বেল্লাল ফকিরের বিরুদ্ধে আদালতের ওয়ারেন্ট (গ্রেপ্তারী পরোয়ানা) জারী আছে বলে নিশ্চিত করেছেন বরিশালের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের জিআরও এএসআই লুৎফর রহমান।