হাসপাতালে জায়গা না হওয়ায় ডায়রিয়া রোগী প্যান্ডেলে

হাসপাতালে জায়গা না হওয়ায় ডায়রিয়া রোগী প্যান্ডেলে

বরিশালে করোনার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে যায়রিয়া। হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ড, মেঝে ছাড়িয়ে রোগী স্থান হয়েছিল গাছতলায়। সেখানেই গাছের সঙ্গে স্যালাইন বেঁধে চলছিল চিকিৎসা। গাছতলার রোগীদের দুরাবস্থা ঘোচাতে ডায়রিয়া ওয়ার্ডের সামনে প্যান্ডেলে  নির্মাণ করেছে কর্তৃপক্ষ।

বৃহস্পতিবার বিকেলে হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ড ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বরিশাল সদর (জেনারেল) হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের সামনের খালি জায়গায় প্যান্ডেল করা হয়েছে। অস্থায়ী ওই প্যান্ডেলের ভেতরে ৯টি বেড দিয়ে ডায়রিয়া আক্রান্ত অতিরিক্ত রোগীদের রেখে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। এরপরও জায়গা সংকুলান না হওয়ায় সরাসরি মাটিতে প্লাস্টিকের মাদুরেও থাকতে হচ্ছে রোগীদের।

বরিশাল সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগীর চাপ যে কোন সমেয়র চেয়ে বেশি ছিল। এত রোগীর জায়গা দেওয়া ওয়ার্ডে সম্ভব হয়নি।  ফলে ডায়রিয়া রোগীদের বারান্দাসহ ওয়ার্ডের সামনের খোলা জায়গাতেও রাখতে হয়েছে। ওয়ার্ডের সামনের খালি জায়গায় যাতে রোগীদের খোলা আকাশের নিচে প্রখর রোদের মধ্যে থাকতে না হয়, সেজন্য অস্থায়ী প্যান্ডেল করা হয়েছে। বৃষ্টিতে সমস্যা না হয় সেজন্য ত্রিপল দেওয়া হয়েছে।

রায়রিয়া ওয়ার্ডের রোগী ও স্বজনরা জানান, রোগী ভর্তির সময় মাত্র একটি স্যালাইন সরকারিভাবে দেওয়া হয়। এরপর যত স্যালাইন প্রয়োজন তা বাইরের দোকান থেকে কিনতে হচ্ছে। পুরো ডায়রিয়া ওয়ার্ড অপরিচ্ছন্ন ও নোংড়া। এখানে এসে নতুন করে ডায়রিয়াসহ অন্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। 
ডায়রিয়া ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রোগীর স্বজন হোমায়রা বেগম বলেন, ওয়ার্ডের ভেতরের মেঝেতে রোগীদের কারণে হাঁটা যাচ্ছে না। তার ওপর ভীষণ অপরিষ্কার। তাই তার রোগী নিয়ে ওয়ার্ডের সামনের মাঠে প্যান্ডেলের নিচে এসেছেন। এখানে বেড পেলেও স্যালাইন ঝোলানোর স্ট্যান্ড পাননি। গাছের ডাল দিয়ে স্ট্যান্ড বানিয়ে নিয়েছেন। তার দেখাদেখি পাশের রোগীরাও সেভাবে স্যালাইন স্ট্যান্ড বানিয়ে নিয়েছেন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার আগ পর্যন্ত এ হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৫৪ জন রোগী চিকিৎসাধীন ছিল। এ নিয়ে গত ২ সপ্তাহে এ হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ড থেকে প্রায় ৮০০ রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন।

 স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগের সহকারী পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ ম-ল জানিয়েছেন, চলতি মাসের শুরু থেকে করোনার পাশাপাশি বরিশালে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। এ পর্যন্ত বিভাগের ৬ জেলায় মোট ২১ হাজার ৫০০ রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। মূলত সব জেলায় আক্রান্তের সংখ্যাই বেশি। তবে বেশি আক্রান্ত বরগুনা জেলায়। এখানকার লোকজন গরমের এ সময়টাতে বাসী খাচ্ছেন, আর নদীর পানি সঠিকভাবে পরিশোধন না করেই পান করছেন। এ কারণেও অনেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন।

বরিশাল জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়র্ড ইনচার্জ সিনিয়র স্টাফ নার্স আয়শা আক্তার জানান, সরকারিভাবে যে ওষুধ এবং স্যালাইন বরাদ্দ আছে সেগুলো রোগীদের যথাসাধ্য দেওয়া হচ্ছে। আর রোগীদের চাপ থাকলেও লোকবল সংকট নিয়েই ওয়ার্ড পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা সবসময় চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
বরিশাল জেনারেল হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডা. মলয় কৃষ্ণ বড়াল জানান, জেনারেল হাসপাতালে মাত্র ৪ শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ড। এরমধ্যে পুরুষ ওয়ার্ডে দু’টি শয্যা এবং দু’টি শয্যা মহিলা ওয়ার্ডে। তবে এখানে ১০টি করে মহিলা ও পুরুষ ওয়ার্ডের মধ্যে মোট ২৪টি শয্যার ব্যবস্থা করা হয়েছিলো। কিন্ত সম্প্রতি যে হারে রোগী বাড়ছে তাতে চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনাসহ সবকিছুতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ অবস্থায় প্যান্ডেল করে হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের সামনে আরও ৯টি শয্যা বসানো হয়েছে।