হিংসা নয়, যুক্তি উত্থাপন করুন

গত কয়েকদিন ধরে একটি কলেজের নামকরণ নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে নানামূখি বক্তব্য উঠে এসেছে। অসালিন মন্তব্য করতেও ছাড়েননি অনেকে। কেউ কেউ আবার রঙ মাখিয়ে দিয়ে সাম্প্রদায়িকতা উসকে দেওয়ার চেষ্টাও করে চলেছেন। যা কোনভাবেই কাম্য নয়। সরকরি বরিশাল কলেজের নাম ‘সরকারি বরিশাল অশ্বিনী কুমার কলেজ কিংবা সরকরি অশ্বিনী কুমার কলেজ বরিশাল করতে সরকার একটি প্রস্তাবনা গ্রহণ করেছে। এর পক্ষে বিপক্ষে মত থাকবে এমনটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই মত দিতে গিয়ে ধর্মের আশ্রয় নেওয়া কিংবা কাউকে ধর্ম দিয়ে আঘাত কিংবা খাটো করার চেষ্টা চলছে। এখান থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা দরকার। আর এজন্য আমাদের অবশ্যই হিংসা বিশ্বেষ না ছড়িয়ে যুক্তি দিয়ে বিষয়টি দেখা উচিত।
ধর্মীয় উসকানীদাতারা বিষয়টিকে ভিন্ন দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন এবং করবেন। সেবিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। কোনভাবেই যেন এটাকে সম্প্রদায়িকতার মোড়কে আবদ্ধ করা না হয়। হিংসা ছড়ানো ছাড়াও অনেকে অহেতুক কিছু বথা বলার চেষ্টা করছেন। কেউ বলছেন সরকারি বরিশাল অশ্বিনী কুমার কলেজ হলে আমাদের সনদের কি হবে? আমিও যেহেতু ওই কলেজের একজন নগন্য ছাত্র, তাই বলতে চাই, আমরা যে বছর কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে বেড়িয়েছি ওই বছরই কলেজটি জাতীয়করণ হয়। আমরা কিন্তু সরকারি কলেজের সনদ পাইনি। আমাদের সনদে লেখা আছে বরিশাল কলেজ এবং ওই সনদ পেয়েছি যশোর বোর্ড থেকে। বরিশাল কলেজ দেয়নি। পরবর্তী সময় যশোর বোর্ডের বেশ কিছু কলেজ বরিশাল বোর্ডের অধীন চলে এসেছে। আমাদের সনদ কিন্তু বাতিল হয়নি কিংবা আমাদের কোথাও উচ্চ মাধ্যমিকের সনদ দিতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়নি। সারা দেশেই কলেজ বিশ^বিদ্যালয় পরিবর্তনের অসংখ্য নজির আছে। তাদের সনদ কিন্তু বাতিল হয়নি। সুতারাং এটা একটা অহেতুক যুক্তি। এই যুক্তি থেকে সরে আসার আহ্বান জানাতেই পারি।
আবার কেউ কেউ বলবার চেষ্টা করেছেন ওই সম্পত্তি অশ্বিনী কুমারের স্বজনরা বিক্রি করে গেছেন। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। অশ্বিনী দত্তের পরিবার বাড়ি ছেড়ে চলে গেলে ওই সম্পত্তি পাকিস্তান সরকার অ্যাকুইজশন করে। ১৯৭০ সালের ১৮ আগস্ট প্রায় দেড় একর সম্পত্তি বরিশাল নাইট কলেজকে নামমাত্র মূল্যে হস্তান্তর করে পাকিস্তান সরকার। যার মূল্য ছিল ৪০ হাজার ২৯৫ টাকা ২৪ পয়সা। সুতরাং যারা বলেন ওই সম্পত্তি অশ্বিনী কুমারের স্বজনেরা বিক্রি করে গেছেন সেটা কল্পনাপ্রসূত। এর পক্ষে প্রমাণ চাইলে আমরা তা দিতে পারবো।
নামকরণের যে বিষয়টি বর্তমান সরকার গ্রহণ করেছে সেটা অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত। আর অশ্বিনী কুমারের নাম বরিশালের সঙ্গে যুক্ত হলে কোনভাবেই এর মর্যাদা কিংবা সম্মান হানি হবে না বরং বাড়বে। কারণ অবিভক্ত ভারতে দুইজন মহাত্মর জন্ম হয়েছিল। তাদের মধ্যে একজন হচ্ছেন মহাত্মা গান্ধি আর অপরজন হচ্ছেন আমাদের বরিশালের মহাত্মা অশি^নী কুমার। তিনি তো আমাদের বরিশালকেই বিশ্বে মর্যাদার আসনে আসীন করে গেছেন। তাই কেবল বিরোধিতা কিংবা যারা বলছেন বরিশালের ঐতিহ্য নষ্ট হয়ে যাবে। তাদের জন্য বলি, বরিশাল সরকারি অশি নী কুমার কলেজ হলে কি বরিশালের নাম মুছে যাওয়ার সুযোগ আছে? অবশ্যই বলবো নাই। কারণ বরিশালের সঙ্গে অশ্বিনীর নাম যুক্ত হলে আমরা সমৃদ্ধই হবো। তাই কেবল বিরোধিতার জন্য কথা না বলে যুক্তি দিয়ে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরকারের দেওয়া প্রস্তাবনার সঙ্গে থাকার আহ্বান জানাই। বিষয়টি নিয়ে যেন কেউ অন্ধকারে ঢিল ছোঁড়ার সুযোগ না পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখি। কোনভাবেই যেন আমাদের সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা না হয়। সেব্যাপারে, রাজনৈতিক দল, নেতাকর্মী, সামাজিক সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবীদের দায়িত্ব নিতে হবে।
তই বলি, সরকারি বরিশাল কলেজের নামকরণ নিয়ে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে সেটার যৌক্তিক সমাধন করুন। এই নগরে আমরা যারা বাস করছি তারা সবাই কোন না কোনভাবে একজন অন্যজনের সহযোগী। এই সুন্দর পরিবেশ কোনভাবেই নষ্ট হতে দেওয়া ঠিক হবে না। আসুন হিংসা নয়, পক্ষে বিপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেই সমাধান খুঁজি।