হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জের বাসিন্দাদের দুর্ভোগ কমাতে শায়েস্তাবাদে সেতু নির্মাণের দাবি

হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জের বাসিন্দাদের দুর্ভোগ কমাতে শায়েস্তাবাদে সেতু নির্মাণের দাবি

হিজলা, মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা, কাজিরহাট থানার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি শায়েস্তাবাদের আড়িয়াল খা নদীতে সেতু নির্মাণ। ছোট্ট একটা সেতু নির্মাণ না হওয়ায় জেলা সদরের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন জনপদ হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে বিশাল এই এলাকা। উচ্চ শিক্ষায় পিছিয়ে যাচ্ছে এই এলাকার শিক্ষার্থীরা বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীরা। পিছিয়ে থাকছে অর্থনৈতিক উন্নয়নেও। তাই দ্রুত সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদে সেতু নির্মাণের দাবি করছেন তারা।

এদিকে বরিশাল সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদ ইউনিয়নের রামকাঠি, চুরামন, পানবাড়িয়া, হায়াৎসার, চরআইচা, সাতবিঘা, পিতম্বরকাঠি এলাকার বাসিন্দারাও একযুগেরও বেশি সময় ধরে দাবি তুলে আসছে। তারাও বরিশাল সদরের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন রয়েছেন। সন্ধ্যার পর এই এলাকার বাসিন্দারা জেলা সদরে আসতে যেতে পারেন না।

তবে সাংসদ পংকজ নাথ, বরিশাল সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু বলেছেন, শায়েস্তাবাদে সেতু নির্মাণ হলে জেলা সদরের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন উপজেলাগুলো যুক্ত হবে। যার ফলে শিক্ষা, চিকিৎসা এবং অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে তিন উপজেলার কয়েক লাখ বাসিন্দা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বরিশাল সদর থেকে মাত্র ৭ কিলোমিটার দূরে শায়েস্তাবাদ আড়িয়াল খা নদী। এই নদীর খেয়া পাড় হয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ বরিশাল শহরে আসছে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগ মেহেন্দিগঞ্জ, হিজলা এবং মুলাদী উপজেলার বাসিন্দা। এর সঙ্গে শায়েস্তাবাদ ইউনিয়নের একাংশে বাসিন্দাও রয়েছে। প্রতিদিন এই খেয়াঘাটে এসে তাদের দুর্ভোগে পড়তে হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশালের শায়েস্তাবাদ এলাকাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কবি বেগম সুফিয়া কামাল, বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে একত্রে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামী ফ্লাইট সার্জেন্ট জহিরুল হক, সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ^াসের বাড়ি এই ইউনিয়নে। এ ছাড়াও সাবেক জাতীয় দলের ফুটবলার এমদাদসহ অনেক গুণি মানুষের জন্ম এখানে। অথচ সেই ইউনিয়ননের একটি অংশ এখনো জেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্ন রয়ে গেছে। কেবল একটি সেতু নির্মাণ হলে শায়েস্তবাদ নয়, সঙ্গে অন্য তিনটি উপজেলার সঙ্গেও জেলা সদরের যোগাযোগ সহজতর হবে।

বরিশাল সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদ ইউনিয়নের চুরামন খেয়াঘাটে ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. মোস্তফা জানান, সদর উপজেলার বাসিন্দা হয়েও বিচ্ছিন্ন হয়ে আছি। সন্ধ্যার পর আর কোনভাবে জেলা সদরে আসা সম্ভব হয় না। একটা ব্রিজ না থাকার কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানালেও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেই।

মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার দরির চর ইউনিনের বাসিন্দা মো. মহসিন আলমের সঙ্গে কথা হয় শায়েস্তাবাদ নদীর খেয়াঘাটে। তিনি বলেন, যদি এই নদীতে একটি সেতু হয়, তাহলে আমরা আর দ্বীপ উপজেলার বাসিন্দা থাকবো না। দিনে ২/৩বার জেলা সদরে আসা যাওয়া করা সম্ভব হবে। সেতু না থাকায় ৪৫ কিলোমিটার ঘুরে গাড়িতে বরিশাল যেতে হয়। সেখানে মীরগঞ্জ খেয়া পার হতে অনেক সময় প্রয়োজন। মীরগঞ্জ পৌঁছানোর আগে এই খেয়া পার হয়ে বরিশালে পৌঁছানো যায়। তাই মেহেন্দিগঞ্জ, হিজালা কাজিহাটের বাসিন্দারা মীরগঞ্জ না গিয়ে শায়েস্তাবদের এই খেয়া পার হয়ে বরিশালে আসা-যাাওয়া করে। তাছাড়া মায়েস্তাবাদ হয়ে পরিশাল পৌছাতে মাত্র ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার পথ। সময় লাগে মাত্র ৩০ মিনিট।

শায়েস্তাবাদ ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য মো. হানিফ রাঢ়ী বলেন, হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জের সংসদ সদস্য পংকজ নাথ দ্রুত বরিশালে পৌঁছাতে আড়িয়াল খা নদের কদমতলী এলাকায় শেখ হাসিনা সেতু নির্মাণ করছেন। ওই সেতুর কাজ প্রায় ৮০ ভাগ শেষ হয়েছে। কিন্তু ওই সেতু হলেও কোন লাভ হবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত শায়েস্তাদ ইউনিয়নে সেতু নির্মাণ না হবে। কদমতলী সেতু থেকে রামকঠি পর্যন্ত দূরত্ব মাত্র তিন কিলোমিটার। আর রামকাঠি থেকে বরিশাল সদরের দূরত্ব মাত্র ৭ কিলোমিটার।

শায়েস্তাবদা ইউনিয়নের ৭ হাজার বিঘা এলাকার বাসিন্দা মো. মিজানুর রহমান বলেন, ওদিক দিয়ে (মীরগঞ্জ) গেলে ৩ থেকে ৪০০ টাকা খরচ হয়। সময়ও বেশি লাগে। আর এদিক শায়েস্তাবাদ খেয়া পার হয়ে গেলে ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বরিশাল পৌঁছানো যায়। তাই আমরা এই পথ ব্যবহার করি।
শায়েস্তাবাদ ইউনিয়নের বাসিন্দ মো. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, রাতে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন জনপদে পরিণত হয় শায়েস্তাবাদের রামকাঠি, চুরামন, পানবাড়িয়া, হায়াৎসার, কদমতলা, ভাসনচর, কাজিরহাট, হিজলা, মেহেন্দিগঞ্জের পুরো এলাকা। রাতে কেউ অসুস্থ হলে বরিশালে নিয়ে আসা সম্ভব হয় না। বিভাগীয় শহরের পাশে থেকেও আমরা বিচ্ছন্ন জনপদের বাসিন্দা হয়েগেছি। সাংসদ, মন্ত্রী, এক সময়ের রাস্ট্রপতি এলাকার থাকার পরও আমরা সেতুর সুবিধা পাচ্ছি না।

শায়েস্তাবাদ ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. আজিজুর রহমান বলেন, ২০১৪ সালে শায়েস্তাবাদ আড়িয়াল খা নদীতে সেতু নির্মাণের দাবিতে ৫ হাজার মানুষের স্বাক্ষরসহ মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছিল। সাংসদ পংকজ নাথ, এবং তখনকার বরিশালের সাংসদ শওকত হোসেন হিরণের ডিওসহ ওই স্মারকলিপি দেওয়া হয়।

বরিশাল সদর উপজেলা চেয়রম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু ভোরের আলোকে বলেন, শায়েস্তাবাদে একটি সেতু নির্মাণ হলে মেহেন্দিগঞ্জ, হিজলা, কাজিরহাট থানাসহ মুলাদী উপজেলার একাংশের মানুষের বিভাগীয় সদরের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হবে। এর আগেও আমরা একটা উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি। বরিশাল সদর আসনের সাংসদ এবং পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীও বিষয়টি জানেন। এব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

এব্যাপারে হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ আসনের সাংসদ পংকজ নাথ ভোরের আলোকে বলেন, সড়ক যোগাযোগ সহজ না হওয়ায় মেহেন্দিগঞ্জ-হিজলা ও কাজিরহাট এলাকার হাজার হাজার শিক্ষার্থী উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের জন্য বিভাগীয় ও জেলা সদর বরিশালে আসতে পারছে না। তিন উপজেলায় কয়েক লাখ মানুষের জন্য একটি সেতু সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে পারে। বরিশালের সঙ্গে ওই তিন উপজেলার যোগাযোগের জন্য কদমতলী নদীতে শেখ হাসিনা সেতুর কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। এখন আড়িয়াল খা নদীতে একটি সেতু হলে তিন উপজেলার বাসিন্দাদের দুর্ভোগ কমে আসবে। সেভাবেই ডিপিপি তৈরি হচ্ছে। আপাতত শায়েস্তাবাদে একটি ফেরি সার্ভিস চালুরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও বরিশাল সদর আসনের সাংসদ কর্নেল (অব:) জাহিদ ফারুক শামিম ভোরের আলোকে বলেন, সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদের সেতুর দাবি আগে থাকলেও এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে আমাকে কেউ বলেনি কিংবা কেউ ডিও নেয়নি। আমি বিষয়টি জানলাম। ওই এলাকা পরিদর্শন করে অবশ্যই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।