১ মার্চ থেকে বরিশাল, ভোলাসহ কয়েক স্থানে ৬০ দিন মাছ ধরা নিষিদ্ধ

১ মার্চ থেকে বরিশাল, ভোলাসহ কয়েক স্থানে ৬০ দিন মাছ ধরা নিষিদ্ধ

মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ভোলার মেঘনা-তেতুলিয়া নদীর অভয়আশ্রমে পহেলা মার্চ থেকে দুই মাসের জন্য সব ধরনের মাছ শিকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এতে করে ভোলাসহ উপকূলের প্রায় দুই লক্ষাধিক জেলে বেকার হয়ে পড়বে। বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না থাকায় মহাজন ও এনজিওর ঋণগ্ৰস্ত জেলে পরিবারগুলোকে নানা সংকটে দিন কাটাতে হবে। তাই এই দুই মাস এনজিওগুলোর কিস্তি বন্ধ রাখার পাশাপাশি সঠিক সময়ে সরকারি জেলে প্রণোদনা চাল বিতরণের দাবি করছেন‌ জেলেরা।

জানা গেছে, প্রতি বছরের মতো এবারও পহেলা মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ২ মাস ভোলার ভেদুরিয়া থেকে চর রুস্তম ১০০ কিলোমিটার এবং ইলিশা থেকে চর পিয়াল পর্যন্ত ৯০ কিলোমিটারসহ মোট ১৯০ কিলোমিটার নদীতে মাছ ধরা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। মাছের অভয়াশ্রম হওয়ায় ভোলার মেঘনা-তেতুঁলিয়া নদীতে এই ১৯০ কিলোমিটার অংশে ইলিশসহ সব ধরণের মাছ শিকার, বাজারজাত, সংরক্ষণ, পরিবহন ও বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞার জারি করেছে সরকার।

ভোলা সদরের ইলিশা, রাজাপুর, ধনিয়া তুলাতলি, নাছির মাঝি, ভোলার খাল এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সরকারি নিষেধাজ্ঞাকে স্বাগত জানিয়ে জেলেরা নৌকা, জালসহ মাছ ধরার সব সরঞ্জাম নদী থেকে সরিয়ে নিতে শুরু করেছে। মাছ ধরা বন্ধ থাকায় এই দুই মাস জেলার সাত উপজেলার দুই লক্ষাধিক জেলে বেকার হয়ে পড়বে। বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে চরম বিপাকে পড়বে এসব জেলেরা।

নিষেধাজ্ঞাকালীন সরকারের বরাদ্দকৃত প্রণোদনা চাল দেয়ার কথা থাকলেও সঠিক সময়ে সেই চাল তারা পান না বলে অভিযোগ তাদের। তাই বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও চালের পরিবর্তে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নিবন্ধিত জেলেদের নগদ টাকা দেয়া হলে তারা উপকৃত হতো বলে জানান।

এছাড়া অধিকাংশ জেলারা বেসরকারি এনজিও সংস্থার কাছে ঋণগ্রস্ত থাকায় ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা নিয়েও রয়েছেন চরম দুশ্চিন্তায়। জেলেরা বলছেন, কিস্তি পরিশোধের জন্য বাধ্য হয়ে নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও নদীতে নামতে হয় তাদের। তাই নিষেধাজ্ঞার দুই মাস ঋণের কিস্তি বন্ধ রাখার দাবি জেলেদের।

সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের ভোলার খাল মাঝঘাট এলাকার জেলে ফিরোজ মাঝি, জয়নাল মাঝি ও রিপন মিয়া বলেন, যেহেতু দুই মাস তাদের উপার্জন থাকবে না, তাই দ্রুত যেন তাদের জন্য বরাদ্দ দেয়া চাল বিতরণ করা হয়। সেইসঙ্গে নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সময় বিভিন্ন ব্যাংক ও এনজিও থেকে নেয়া ঋণের কিস্তির টাকা আদায় বন্ধ রাখতে অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।

অপরদিকে ইলিশা মাছঘাট এলাকার জেলে ইউসুফ, হারুন ও জামাল মাঝি জানান, সরকারি বরাদ্দকৃত চাল দেয়া নিয়ে বিভিন্ন ধরনের গড়িমসি হয়। নিষেধাজ্ঞা কালীন জেলেরা সঠিক সময়ে প্রণদনার চাল হাতে না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে নদীতে নামতে হয়। তাই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নিবন্ধিত জেলেদের নগদ টাকা দেয়া হলে তারা উপকৃত হতো।

ভোলা সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. জামাল হোসাইন জানান, দুই মাস নিষেধাজ্ঞাকালীন নিবন্ধিত ৯২ হাজার ৬৬১ জেলে পরিবারের বিপরীতে ৭ হাজার ৪১৩ মেট্রিকটন চাল সরকারিভাবে বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব জেলেদের এসব চাল বিতরণ করার আশ্বাস দেন তিনি।
উল্লেখ্য, ভোলা জেলায় দুই লক্ষাধিক জেলের মধ্যে নিবন্ধিত জেলে রয়েছে এক লক্ষ ৪৬ হাজার ৯৩১। এর মধ্যে সরকারের বরাদ্দকৃত প্রণদনার চাল পাচ্ছেন ৯২ হাজার ৬৬১ জেলে।এদিকে, জাটকা রক্ষায় পহেলা মার্চ থেকে দুই মাস লক্ষ্মীপুরের মেঘনায় সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একই সময়ে মাছ ক্রয়-বিক্রয়, মজুদ ও পরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে মৎস্য বিভাগ। এছাড়া নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে বিকল্প কর্মসংস্থান ও পুনর্বাসনের আওতায় জেলায় এ বছর প্রায় ২৫ হাজার জেলেকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হবে।

জানা যায়, জাটকা রক্ষা ও ইলিশ মাছের বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০০৬ সাল থেকে চাঁদপুরের ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত মেঘনা নদীর নিম্ন অববাহিকার ১০০ কিলোমিটার নৌ-সীমাকে ইলিশের অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, মেঘনা নদীর অভয়াশ্রমে মাছ ধরা বন্ধ রাখার জন্য জেলে পল্লীসহ মাছঘাট এলাকা এবং উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে নানা ধরনের সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। লিফলেট, পোস্টার ও মাইকিং করার মাধ্যমে এলাকায় প্রচার-প্রচারণাও চালানো হচ্ছে। এছাড়া মাছ ধরা প্রতিরোধের জন্য মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সিন্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম জানান, নিষিদ্ধ সময়ে জেলেদের মাছ ধরা থেকে বিরত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ওই সময় বিকল্প কর্মসংস্থার ও পুনর্বাসনের আওতায় জেলায় এ বছর প্রায় ২৫ হাজার জেলেকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হবে। নিষিদ্ধ সময়ে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকতে জেলেসহ সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ তোহিদুল ইসলাম জানান, দুই মাস মেঘনা মাছ ধরা বন্ধ রাখার ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আইন ভঙ্গ করে নদীতে জাটকা ইলিশ ধরার চেষ্টা করলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি মৎস্য বিভাগ, কোস্টগার্ড, নৌ-পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে এ ব্যাপারে সর্তক থাকার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

এছাড়া শরীয়তপুরের নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ উপজেলা এবং চাঁদপুরের মতলব উপজেলার মধ্যে অবস্থিত পদ্মা নদীর ২০ কিলোমিটার এলাকা; বরিশালের হিজলা, মেদেন্দীগঞ্জ ও বরিশাল সদর উপজেলার কালাবদর, গজারিয়া ও মেঘনা নদীর প্রায় ৮২ কিলোমিটার এলাকায় মাছ ধরা নিষেধ।