মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবি বরিশালে

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি বাহিনী, রাজাকার, আলবদর কৃতক বাঙালী গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবি দেশব্যাপী গণহত্যার দাবি জানিয়ে এ প্রতিবাদ সমাবেশে বরিশালে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
শনিবার ৪ মার্চ বিকেল ৫টায় বরিশাল মুক্তিযুদ্ধের গণহত্যার স্বাক্ষী টর্চার সেল ও বধ্যভূমিতে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
প্রতিবাদী সমাবেশ শুরু হয় বধ্যভূমির বেধী ও জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন এর মাধ্যমে এরপর জাতীয় সংগীত পরিবেশন করে প্রতিবাদী সমাবেশ শুরু হয়। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বরিশাল সেক্টর কমান্ডার ফোরাম ৭১ এর সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা পুতুল ঘোষ।
প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথি বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর উপস্থিতিতে মূখ্য আলোচক ছিলেন
সেক্টর কমান্ডার ফোরাম ১৯৭১ মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবিব।
সভায় আলোচকরা বলেন, বরিশালের টর্চার সেলে হাজার হাজার নিরীহ বাঙালি নারী-পুরুষকে পাশবিক এবং শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করেছে পাক বাহিনী। দৈনিক গড়ে ৬ হাজারের বেশি মানুষ হত্যা করেছে তারা। যার কোন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেয়নি জাতিসংঘ। কম্বোডিয়ায় যুদ্ধকালে দৈনিক গড়ে ১২০০ মানুষ হত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ। এ অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধকালীন পাক বাহিনীর বর্বরতার চিত্র নতুন প্রজন্মকে জানাতে ওই গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দাবি করেন তারা।
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী তরুণরা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক বাহিনী সারা দেশে নিরীহ মানুষের উপর ব্যাপক নির্যাতন চালিয়েছে। তাদের বর্বরতার বিষয়টি নতুন প্রজন্মকে জানাতে এর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেয়া উচিত বলে মন্তব্য তাদের।
সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের বিভাগীয় সভাপতি প্রদীপ কুমার ঘোষ পুতুল বলেন, মুক্তিযুদ্ধকালীন ৮ মাস সন্মুখযুদ্ধ করেছে মুক্তিকামী বাঙালিরা। অথচ আন্তর্জাতিক বিশ্বে অনেকেই বলেন, ৭১ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হয়েছে। বিষয়টি স্পষ্ট করতে পাক বাহিনীর বর্বরতার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি জরুরি।
বরিশাল মেট্রো পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় সারা দেশে পাক বাহিনী বর্বর নির্যাতন করেছে। যার অন্যতম বরিশাল। ত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। ওই সময়কার ঘটনাবলী নতুন প্রজন্মের অনেকেই জানেন না। নতুন প্রজন্মের মাঝে মুক্তিযুদ্ধকালীন ইতিহাস জানাতে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেয়া উচিত।
গণহত্যার স্বীকৃতির দাবিতে ইতিপূর্বে জাতিসংঘে আবেদন নিবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের মহাসচিব হারুন হাবীব। জাতিসংঘ এবং আমেরিকা তাদের ভুল শুধরে বাংলাদেশে গণহত্যার স্বীকৃতি দেবে আশা তার।
ফোরামের সহসভাপতি মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ম. হামিদ বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষ করে জাতিসংঘের বাংলাদেশে গণহত্যার স্বীকৃতি দেয়া উচিত। যাতে গণহত্যার বিচার এগিয়ে নেয়া যায়।
সেক্টরস কমান্ডারস ফোরামের সভাপতি নুরুল আলম বলেন, ২০০৬ সালে যুদ্ধপারাধীদের বিচারের দাবিতে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম গঠিত হয়েছিলো। যুদ্ধাপরাধের বিচার হয়েছে এবং চলছে। এখন গণহত্যার স্বীকৃতির দাবিতে সারা দেশে ধারাবাহিক প্রতিবাদী সমাবেশ করবেন তারা। যার সূচনা হলো বরিশালের প্রতিবাদী সমাবেশের মধ্য দিয়ে।
সেক্টর কমান্ডার ফোরামের এই দাবি যথার্থ বলে মনে করেন বরিশাল সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সাদিক আবদুল্লাহ। এই স্বীকৃতি না পেলে মুক্তিযুদ্ধকালীন অনেক কিছু নতুন প্রজন্মের অজানা থেকে যাবে বলে আশংকা তার। ওয়াপদা কলোনির পরিত্যক্ত টর্চার সেলটি ২০২০ সালে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিকায়ন করে সিটি করপোরেশন।