১৭ বছর আগের শিক্ষকরা বাদ, নতুন শিক্ষক নিয়োগ করে এমপিওর আবেদন

১৭ বছর আগের শিক্ষকরা বাদ, নতুন শিক্ষক নিয়োগ করে এমপিওর আবেদন

বরিশালে মর্ডান টেকনিক্যাল এন্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজ কতৃপক্ষের বিরুদ্ধে ১৭ বছর আগের রেজুলেশ বদলের অভিযোগ উঠেছে। একই সঙ্গে মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে  ওই সময়ে নিয়োগ দেওয়া শিক্ষকদের বাদ দিয়ে নতুন শিক্ষক নেওয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। ২০১৯ সালে এমপিওভুক্তির হওয়ার পর ওই জালিয়াতি শুরু করে কলেজ কর্তৃপক্ষ।  এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) বরিশাল পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী রুহুল আমীনকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।

২০০৪ সালে রূপাতলীর মর্ডান টেকনিক্যাল এন্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজেবিধি মোতাবেক লাইব্রেরীয়ান হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন মোসাম্মৎ আফসানা ফেরদৌসী। প্রায় ১৭ বছর আগে কর্তৃপক্ষ রেজুলেশন করে তাকে নিয়োগ দেন। এত বছর পর তিনিসহ কয়েকজন শিক্ষককে বাদ দিয়ে উৎকোচ নিয়ে নতুন শিক্ষক নিতে রেজুলেশন পরিবর্তন করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। এব্যাপারে লাইব্রেরীয়ান মোসাম্মৎ আফসানা ফেরদৌসী লিখিত অভিযোগ করেন কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে। এই আবেদনের প্রেক্ষিতে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর ওই কলেজের সকল এমপিওভূক্তির প্রক্রিয়া স্থগিত করে। একই সঙ্গে লাইব্রেরীয়ানের অভিযোগ তদন্তের জন্য কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) বরিশাল পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী রুহুল আমীনকে তদন্তের নির্দেশ দেয়।

অভিযোগ উঠেছে, মর্ডান টেকনিক্যাল এন্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজে ১৫ থেকে ১৭ বছর আগে ৩ ধাপে ৭জন শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছিলো তখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভূক্ত (মান্থলী পেমেন্ট অর্ডার) ছিলো না। ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠানটি এমপিভূক্ত হওয়ার পর ১৫ থেকে ১৭ বছর আগে রেজুলেশন করে নিয়োগকরা শিক্ষকদের বাদ দিতে রেজুলেশন, হাজিরা খাতা এবং নিয়োগ সংক্রান্ত যাবতীয় কাগজপত্র পাল্টে ফেলে কর্তৃপক্ষ। ওই সময় নিয়োগ করা শিক্ষকদের বদলে জালিয়াতির মাধ্যমে নতুন করে ৬জন শিক্ষক নিয়োগ দেখানো হয় মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে। এখন তাদের এমপিভুক্তির জন্য কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে আবেদন পাঠানো হয়েছে।

তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার কথা স্বীকার করে প্রকৌশলী রুহুল আমীন বলেন, গত সপ্তাহে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে এক চিঠিতে মর্ডান টেকনিক্যাল এন্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজে শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত অনিয়ম তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়। তিনি ইতিমধ্যে ২বার ওই কলেজে গিয়ে কাগজপত্র যাচাই করেছেন। কাগজপত্র দেখে তিনি নিজেও কনফিউজড। যথাশিঘ্র তদন্ত সম্পন্ন করে অধিদপ্তরে প্রতিবেদন পাঠানোর কথা বলেন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরীর পলিটেকনিক রোডে ২০০৩ সালে একটি ভাড়া বাড়িতে মর্ডান টেকনিক্যাল এন্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠানটি কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অনুমোদনপ্রাপ্ত হয়। ২০০৪ সালে কলেজের তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুনিম হাসান, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড প্রতিনিধি আবু বক্কর সিদ্দিক ও সরকারি কমার্শিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলামসহ সংশ্লিøষ্টদের উপস্থিতিতে মো. সেলিম রেজা, ফারহানা আফরিন, শিল্পী রানী ও মো. মজিবুর রহমানকে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। একই সময়ে ৬জন কর্মচারীও নিয়োগ দেয়া হয়। ২০০৫ সালে মো. নুরুন্নবী মিলন এবং ২০০৬ সালে সুরমা আক্তার ও মো. আবু জাফর মিয়াকে সংশ্লিষ্টদের উপস্থিতিতে বিধি মোতাবেক লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়। মাত্র ১ হাজার টাকা সন্মানিতে পাঠ দান করাতেন তারা। ২০১৯ সালে এমপিওভুক্ত হওয়ার পূর্বের নিয়োগ পাওয়া ৬ জনকে সুকৌশলে বাদ দেওয়া হয়।

বাদ পড়া শিক্ষকদের একজন মো. আবু জাফর অভিযোগ করেন, পূর্বের রেজুলেশন, হাজিরা খাতাসহ নিয়োগ সংক্রান্ত যাবতীয় কাগজপত্র বাদ দিয়ে নতুন করে তৈরি করা কাগজপত্র দিয়ে মোটা অংকের বিনিময়ে শিক্ষক নিয়োগ দেখিয়ে এমপিওর জন্য আবেদন করা হয়েছে। অথচ দীর্ঘদিন ধরে শ্রম দেয়ার পরও অন্যায়ভাবে তাদের বাদ দেয়া হয়েছে। তিনি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং বিচার দাবি করেন। একই অভিযোগ করেছেন এমপিওভূক্তির আবেদন থেকে বাদ পড়া অন্যান্য শিক্ষকরা। 

কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশে এই অভিযোগের তদন্তকারী অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রকৌশলী রুহুল আমীন বলেন, তিনি অভিযোগকারীদের সাক্ষ্যগ্রহণ করছেন। অভিযোগ তদন্ত করে কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন প্রেরণ করবেন।