২০ মাস ধরে বরিশালের শেবাচিমে বার্ন ইউনিটের কার্যক্রম বন্ধ

২০ মাস ধরে বন্ধ বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (শেবাচিম) বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট। এ কারণে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের অগ্নিদগ্ধ মুমূর্ষু রোগীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠাতে হয়। সামান্য দগ্ধ আশঙ্কামুক্ত রোগীদের নামমাত্র চিকিৎসা দেওয়া হয় সার্জারি ওয়ার্ডে।
এদিকে, বরিশালে পরপর ৩টি নৌযানে বিস্ফোরণের ঘটনায় হতাহতদের স্থানীয়ভাবে যথাযথ চিকিৎসা দিতে না পাড়ায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে অনেকে। সব শেষ বৃহস্পতিবার রাতে ঝালকাঠীর সুগন্ধা নদীতে যাত্রীবাহী লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দগ্ধ ৭৪ জনকে ভর্তি করা হয় বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে। কিন্তু বার্ন ইউনিট বন্ধ থাকায় তাদের নামমাত্র চিকিৎসা দেওয়া হয় সার্জারি ওয়ার্ডের মেঝেতে এবং বারান্দায়। এ অবস্থায় দ্রুত সময়ের মধ্যে শেবাচিমের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট চালুর দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
২০১৫ সালের ১২ মার্চ হাসপাতালের নিচ তলায় ৮ শয্যা বিশিষ্ট বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট চালু করা হয়। ওয়ার্ড পরিচালনার দায়িত্ব পান সহকারী অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান। বছর খানেক পর ডা. হাবিবুর রহমান অবসরে গেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাখাওয়াত হোসেনকে বরিশাল শেবাচিমের বার্ন ইউনিটে পদায়ন করা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত তিনি নতুন কর্মস্থলে যোগদান করেননি। পরে সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. একেএম আজাদ সজলকে শেবাচিমের বার্ন ইউনিটের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তার সাথে ছিলেন প্রশিক্ষিত ১৬ জন সেবিকা। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বার্ন ইউনিটকে ৩০ শয্যায় উন্নীত করা হয়।
২০২০ সালে ২৮ এপ্রিল নগরীর কালীবাড়ি রোডের একটি বেসরকারি ক্লিনিকের লিফটের নিচে ডা. একেএম আজাদ সজলের রহস্যজনক মৃত্যু হয়। একমাত্র চিকিৎসকের মৃত্যুতে চিকিৎসক শূন্যতার কারণে ওই বছরের ১৫ মে আনুষ্ঠানিকভাবে শেবাচিমের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট বন্ধ করে দেওয়া হয়।
সার্জারি বিশেষজ্ঞরা জানান, আগুনে কোনো রোগীর শরীরের ১০ থেকে ৩০ শতাংশ পুরে গেলে সার্জারি ইউনিটে তার চিকিৎসা করা যায়। কিন্তু এর বেশি দগ্ধ হলে তাদের অবশ্যই বার্ন ইউনিটে বিশেষায়িত চিকিৎসা প্রয়োজন হয়।
২০১৯ সালে কীর্তনখোলা নদীতে একটি তেলবাহী জাহাজে বিস্ফোরণে ৬ জন দগ্ধ হয়। ওই ঘটনায় দগ্ধদের প্রথমে শেবাচিমের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। পরে তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করা হয় ঢাকায়।
গত ১২ নভেম্বর ঝালকাঠীর সুগন্ধা নদীতে একটি তেলের জাহাজ বিস্ফোরণে ৬ জন দগ্ধ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই একজন নিহত হয়। আর দগ্ধ ৫ জনকে ভর্তি করা হয় শেবাচিমের সার্জারি বিভাগে। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের প্রেরণ করা ঢাকায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান পাঁচজন।
সব শেষ বৃহস্পতিবার রাতে ঝালকাঠীর সুগন্ধা নদীতে একটি যাত্রীবাহী লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে ৪০ জন নিহত এবং শতাধিক আহত হয়। আহতদের মধ্যে ৭৪ জনকে ভর্তি করা হয় শেবাচিম হাসপাতালে। কিন্তু শেবাচিমে বার্ন ইউনিট না থাকায় তাদের সার্জারি ওয়ার্ডে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
রোগীর স্বজনরা জানান, সার্জারি ওয়ার্ডে দগ্ধ রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা হচ্ছে না। সেখানে শুধু আইভি স্যালাইন এবং মলম ছাড়া আর কোনো চিকিৎসা নেই। দক্ষিণাঞ্চলের উন্নত চিকিৎসার একমাত্র ভরসাস্থল শেবাচিম হাসপাতালের বার্ন ইউনিট ২০ মাস ধরে বন্ধ থাকায় দগ্ধ রোগীরা যথাযথ চিকিৎসা পাচ্ছে না। তারা অবিলম্বে শেবাচিমের বার্ন ইউনিট চালুর দাবি জানিয়েছেন।
শের-ই বাংলা মেডিকেলের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম জানান, চিকিৎসক সংকটের কারণে বার্ন ইউনিটের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে। চিকিৎসক পদায়ন করা হলেই শেবাচিমের বার্ন ইউনিট চালু করা হবে।
বরিশাল সদর আসনের এমপি কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক বলেন, একনেকের বৈঠকে বরিশাল শেবাচিমের বার্ন ইউনিট পাশ হয়েছে। বরিশালে পূর্ণাঙ্গ বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হবে। আগামী ১ বছরের মধ্যে এই বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতালের কাজ শুরু হবে।