৩৫টি চাকরির অফার পেয়েছেন দুদকের চাকরি হারানো শরীফ

৩৫টি চাকরির অফার পেয়েছেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে চাকরি হারানো দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিন। একইসঙ্গে তাকে লাখ টাকা বেতন দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে কোম্পানিগুলো। তবে যে কোম্পানির মাধ্যমে দেশ ও মানুষের সেবায় কাজ করতে পারবেন সেই কোম্পানিতে যোগ দেবেন বলে জানিয়েছেন শরীফ।
শরীফ উদ্দিন বলেন, বুধবার পর্যন্ত দেশের ৩৫টি বড় বড় কোম্পানি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে চাকরি দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে এয়ারলাইন্স কোম্পানি, বিদেশি নিরাপত্তা কোম্পানি, হোটেল ট্যুরিজম কোম্পানিও রয়েছে। এয়ারলাইন্স কোম্পানি মাসে ২ লাখ টাকা বেতনে তাদের প্রতিষ্ঠানের সিইও পদে নিয়োগের জন্য আমাকে জয়েনিং লেটারও দিয়েছে। আমি যাচাই-বাছাই করে যে কোম্পানির মাধ্যমে দেশ ও মানুষের সেবায় কাজ করতে পারবো ওই কোম্পানিতে যোগদান করবো।
দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে ভূমিকা রাখায় ঘটনাচক্রে চাকরি হারান দুদকের পুরস্কারপ্রাপ্ত এই সাবেক কর্মকর্তা। চাকরি ফেরতের আবেদন নিয়ে দীর্ঘদিন দুদকের পেছনে ছুটেছেন মো. শরীফ উদ্দিন। কিন্তু তার আবেদনে সাড়া দেয়া হয়নি। এমনকি তিনি চাকরি ফেরত চেয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করলেও দুদক থেকে তার বিরুদ্ধে আইনজীবী নিয়োগ দেয়া হয়।
চাকরি হারানোর পর আর্থিক অনটনে পড়েন শরীফ উদ্দিন। পারিবারিক সিদ্ধান্তে তিনি ভাইয়ের কনফেকশনারিতে কাজ শুরু করেন। এ নিয়ে গত ৬ নভেম্বর বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। এরপর বিভিন্ন দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান থেকে চাকরির প্রস্তাব আসতে শুরু করে শরীফের কাছে।
উল্লেখ্য, প্রায় সাড়ে তিন বছর দুদকের চট্টগ্রাম সমন্বিত কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন শরীফ উদ্দিন। সে সময় এনআইডি সার্ভার ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি ভোটার করার অভিযোগে ২০২১ সালের জুনে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) একজন পরিচালক, ৬ কর্মীসহ আরও ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন তিনি। এ মামলার পরপর ওই বছরের ১৬ জুন তাঁকে চট্টগ্রাম থেকে পটুয়াখালীতে বদলি করা হয়। এর আট মাসের মাথায় চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি শরীফকে দুদক থেকে চাকরিচ্যুত করা হয়। চাকরিচ্যুতির আদেশে বলা হয়, দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) বিধিমালা-২০০৮ এর বিধি ৫৪(২)তে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে মো. শরীফ উদ্দিন, উপ-সহকারী পরিচালক, দুদক, সমন্বিত জেলা কার্যক্রম, পটুয়াখালীকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হলো। তিনি বিধি মোতাবেক ৯০ দিনের বেতন এবং প্রযোজ্য সুযোগ-সুবিধা পাবেন।
বিনা নোটিশে শরীফকে চাকরিচ্যুত করা হলেও এর বিপরীতে কোনো কারণ উল্লেখ করেনি সংস্থাটি। তার চাকরি ফেরত দিতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় মানববন্ধন ও সমাবেশ হয়েছে। জাতীয় সংসদেও বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দুদক কর্মকর্তারাও মাঠে নেমেছিলেন। এত কিছুর পরও চাকরি ফেরত পাননি শরীফ, যে কারণে জীবন চালাতে তিনি মুদি দোকানের চাকরি নিতে বাধ্য হয়েছিলেন