৮ ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার পৌর সদরের একটি বাড়িতে টানা ৮ ঘণ্টা শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান চালিয়ে ২টি আগ্নেয়াস্ত্র ও বিপুল পরিমাণে বিস্ফোরকসহ ৪ জঙ্গি আটক করেছে র্যাব-১২।
পৌর সদরের শেরখালি উকিলপাড়া এলাকার জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী শামছুল হক রাজার বাড়িতে শুক্রবার ভোর ৫টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত এই অভিযান পরিচালিত হয়।
অভিযান শেষে বিনা রক্তপাতে জেএমবির পাবনা-সিরাজগঞ্জ জেলার আঞ্চলিক কমান্ডারসহ ৪ জঙ্গিকে আটক করা হয়। তারা হলেন পাবনার ভাঙ্গুরা উপজেলার কিরণ ওরফে হামীম শামীম (২২), সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার আমিনুল ইসলাম শান্ত (২৫), সাথিয়া উপজেলার নাঈমুল ইসলাম (২১) ও দিনাজপুর জেলার আতিউর রহমান (২২)। তারা সবাই পাবনার বেড়া উপজেলার আল হেরা স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র।
অভিযান শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) কর্নেল তোফায়েল মোস্তোফা সরোয়ার বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে রাজশাহীর শাহ মখদুম থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে জেএমবির রাজশাহী বিভাগীয় কমান্ডার জুয়েল আলী ওরফে মাহমুদসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, শাহজাদপুরের এই স্থানে তাদের আরও কয়েকজন সদস্য অবস্থান করছে।
তিনি বলেন, ওই তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার ভোর ৫ টার দিকে শাহজাদপুরে র্যাবের একটি দল অভিযান শুরু করে। সেখানে অবস্থানরত জঙ্গিরা র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে র্যাবকে লক্ষ করে এলোপাতাড়ি গুলি বর্ষণ শুরু করে। হতাহতের ঘটনা এড়াতে র্যাবের দলটি কৌশল পরিবর্তন করে বাড়িটি ঘিরে ফেলে। এরপর হ্যান্ড মাইকের মাধ্যমে তাদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হয়। এতে সারা না দিয়ে তারা র্যাবকে বোমা মেরে এলাকা উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। ফলে র্যাব আবার কৌশল পরিবর্তন করে।
তিনি আরও বলেন, হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ র্যাবের একটি শক্তিশালী টিম ঘটনাস্থলে আসেন। এ ছাড়া এলাকাবাসীকে সতর্ক অবস্থানে রাখা হয়। ওই বাড়ির আশপাশের লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়। খবর পেয়ে সিরাজগঞ্জ ডিবি, সিআইডিসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক টিম ঘটনাস্থলে এসে কাজ শুরু করেন। এরপর র্যাবের টিমটি সকাল ১০টার দিকে নতুন করে অভিযান শুরু করে ও ওই জঙ্গি আস্তানায় প্রবেশ করে। এ সময় জঙ্গিরা আত্মসমর্পণে রাজি হয়। পরে র্যাবের দলটি তাদের কৌশলে আটক করে বাড়ির বাইরে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়।
তিনি জানান, পরে বাড়িটি তল্লাশি করে জঙ্গিদের বেশ কিছু সাংগঠনিক বই, দুইটি বিদেশি পিস্তল, বিপুল পরিমাণ গান পাউডার, বোমা তৈরির সরঞ্জাম, রাসায়নিক বিস্ফোরক দ্রব্য ও দলের একটি পতাকা উদ্ধার করা হয়। এছাড়া ওই বাড়ি থেকে উদ্ধার ৬টি শক্তিশালী তাজা বোমা নিষ্ক্রিয় করে বাড়িটি সিলগালা করে দেয়া হয়।
এ বিষয়ে স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, বেড়ার আল হেরা স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিষয়ে আগে থেকেই নানা গুঞ্জন শোনা গেলেও শাহজাদপুরে জঙ্গি তৎপরতা ছিল না। হঠাৎ করে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পাওয়ায় তাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
আব্দুল্লাহ আল মামুন নামে বাড়িওয়ালার এক নিকট আত্মীয় জানান, প্রায় ২৫ দিন আগে দুই ছাত্র এসে এ বাড়িটি ভাড়া নেয়। ওই দুই ছাত্রের অভিভাবকের জাতীয় পরিচয়পত্র নিশ্চিত হয়েই তাদের ভাড়া দেওয়া হয়।