‘প্রতি সিটেই লোক যাবে’, ভাড়াও দ্বিগুণ

‘প্রতি সিটেই লোক যাবে’, ভাড়াও দ্বিগুণ

এবারের আর ১০টি সাধারণ ঈদের মতো নয়। করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট মহাসংকটের মধ্যে এসেছে এবারের ঈদুল আজহা।

মহামারির এ সময়ে স্বাভাবিক জীবন-যাপনে ভাটা পড়লেও আপনজনের সান্নিধ্যে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে বাড়ি ফিরছে রাজধানীবাসী।
করোনার সংক্রমণ যতটা সম্ভব এড়াতে এবারের ঈদযাত্রাতেও গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। গাড়ির প্রতি দুই সিটে একজন করে যাত্রী তোলার বাধ্যবাধকতা রয়েছে পরিবহনগুলোর। কিন্তু সরকারের এ নির্দেশনা মানার বালাই নেই অনেক গণপরিবহনেই। খোদ সরকার নিয়ন্ত্রিত বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) বাসের টিকেট বিক্রেতা বলছেন, 'প্রতি সিটে লোক যাবে'।

শুক্রবার (৩১ জুলাই) সকালে রাজধানীর কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ডে বিআরটিসি 'ঈদ স্পেশাল সার্ভিস' একটি দোতলা বাসের টিকেট বিক্রিতে এ চিত্র দেখা গেছে।

সাধারণত বিআরটিসির নির্ধারিত কাউন্টার নয়, অন্যান্য কাউন্টারের সামনে একটি টেবিল আর চেয়ার নিয়ে বগুড়া-রংপুরগামী বিআরটিসির দোতলা বাসের টিকেট বিক্রি করছিলেন একজন। সঙ্গে আরো তিন-চারজন গন্তব্য এবং বাস ছাড়ার সময় জানিয়ে আশে-পাশে হাঁক-ডাক দিচ্ছিলেন।

প্রতিটি টিকেট হাজার টাকায় বিক্রি করছেন চেয়ার-টেবিলে বসা ব্যক্তিটি। সামনেই নির্ধারিত বাসটি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে টিকেটও কিনছিলেন অনেকেই। তবে প্রতিটি সিট মার্কিং করে টিকেট বিক্রি করছিলেন তারা। আশরাফ নামে এক যাত্রী প্রতি দুই সিটে একজন বসবে কি-না জানতে চাইলে টিকেট বিক্রেতার সরল উত্তর, 'প্রতি সিটে লোক যাবে, প্রতি সিটেই যাত্রী বসবে। 'সব সিটেরই টিকেট বিক্রি করা হচ্ছে

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিক্রেতা বলেন, ‘এটা বিআরটিসির ঈদ স্পেশাল সার্ভিস। আমাদের দুই সিটে একজন করে নিলে পোষাবে না। '

তাহলে ভাড়া দ্বিগুণ অর্থাৎ এক হাজার টাকা কেন রাখছেন, জানতে চাইলে তার উত্তর, 'যাওয়ার ভাড়া ৫০০, আসার ভাড়া ৫০০। বাসটা যাত্রী নিয়ে যাবে, কিন্তু আসার সময়তো খালি আসবে। এজন্য আপ-ডাউন ভাড়া মিলিয়ে এক হাজার টাকা। '

এভাবে সরকারি নির্দেশনা না মেনে বাড়তি যাত্রী তোলায় কোনো সমস্যা হবে কি-না বা পথে কোনো চেকিং হলে যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়বে কি-না এমন কথা তুলতেই বাসটির চালক মানিকের উত্তর, 'একাবারে রিজার্ভ কইরা টান দিব, কোনো জায়গায় থামব না। এসব নিয়া কোনো সমস্যা হইব না। '

এদিকে, বিআরটিসি দোতলা বাসের টিকেট বিক্রি করা হলেও যাত্রীদের দেওয়া হচ্ছিল কিশান স্পেশাল সার্ভিস নামে অন্য একটি পরিবহনের টিকেট। শুধুমাত্র সিট মার্কিংয়ের জন্য সামনে দু’টি বিআরটিসির টিকেট রাখা ছিল। বিআরটিসির বাসে অন্য টিকেট কেন, যাত্রীদের এমন প্রশ্নের জবাবে বিক্রেতা জানান, বিআরটিসির টিকেট শেষ হয়ে গেছে, তাই অন্য টিকেট দেওয়া হচ্ছে। কোনো সমস্যা নেই। জাস্ট টাইমে বাস ছেড়ে যাবে।

পাশ থেকেই যাত্রীদের প্রতি ওই টিকেট বিক্রেতার সহযোগীদের আশ্বাস, 'দোতলা বাস হইলেও লং রুটে ভালো টান আছে। টিকেট নেন, শেষ হইলে পাইবেন না। '

এদিকে, শুধু বিআরটিসির এ দোতলা বাস নয়, কম পরিচিত এমন আরো বেশ কয়েকটি বাসের ক্ষেত্রেও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে টিকেট বিক্রি করতে দেখা যায়নি। ঈদযাত্রায় বাস সংকটের কারণে প্রতিটি সিটই দ্বিগুণ বা তার বেশি দামে টিকেট বিক্রি করতে দেখা গেছে। এর ফলে করোনার প্রভাব আরো ব্যাপক হওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকেই। বাড়তি দামেই টিকেট কিনছেন যাত্রীরা, 

রংপুর-বিরামপুর রুটে মিন্টু এন্টারপ্রাইজ পরিবহনেও টিকেট বিক্রির জন্য হাঁক-ডাক দিচ্ছিলেন কয়েকজন। একজনের কাছে প্রতি সিটে যাত্রী বসবে, নাকি দুই সিটে একজন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রতি সিটেই যাত্রী বসবে। এমনিতেই টিকেট নাই, এর মধ্যে দুই সিটে একজন বসবে কীভাবে?’ পাশ থেকেই আরেকজনের সরাসরি জবাব, ‘বাস ফুল ভর্তি হয়ে যাবে, গেলে টিকেট লন। ’


ভোরের আলো/ভিঅ/৩১/২০২০