‘মাহফুজ আনাম ও ডেইলি স্টার হিন্দু ধর্ম নিয়ে ষড়যন্ত্রে মেতেছে’

‘মাহফুজ আনাম ও ডেইলি স্টার হিন্দু ধর্ম নিয়ে ষড়যন্ত্রে মেতেছে’

বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের যুগ্ম মহাসচিব শ্যামল কান্তি নাথ বলেছেন, হিন্দু আইন নিয়ে দেশে ষড়যন্ত্র চলছে। এই ষড়যন্ত্রের মূল হোতা ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম ও তার স্ত্রী শাহীন আনাম। তাদের পরামর্শে ২০২০ সালে আইন মন্ত্রণালয়ে আইন কমিশন হিন্দু ধর্মীয় আইন সংশোধনের প্রস্তাব পাঠিয়েছে। উক্ত আইন প্রণয়নের যেসব সংগঠন সহযোগিতা করেছে তাদের মধ্যে ইউএনডিপি ও একটি আন্তর্জাতিক এনজিওর অর্থায়নে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন এটার খসড়া তৈরির দায়িত্ব পালন করে। তার আগে ২০১০-১১ সালে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ধর্মীয় আইন সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। আন্তর্জাতিক সকল জিও এবং দেশীয় যে সংগঠনের দায়িত্ব পালন করেছে তারা কেউই হিন্দুদের প্রতিনিধিত্ব করে না। তাছাড়া আইন কমিশন বলছেন, তারা ঢাকা, রাজশাহী ও চিটাগাংয়ে মাত্র ২৪৬ জনের একটি টিমের সঙ্গে কথা বলে এটা চূড়ান্ত করেছে। এর মধ্যে বিচারপতি আছেন, ব্যবসায়ী আছেন, ছাত্র আছেন ও কৃষক আছেন। শুধুমাত্র ২৪৬ জনের মতামতের ওপর ভিত্তি করে হিন্দু ধর্মীয় আইন সংস্কারের প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন, এটি কেন? বাংলাদেশের দুই লক্ষাধিক হিন্দু মানুষ রয়েছেন। সেখানে ২৪৬ জনের মতামতের ভিত্তিতে কিভাবে তারা এ আইনের খসড়া তৈরি করে? প্রশ্ন হচ্ছে কারা এই কমিশন গঠন করেছে? আইন ও সালিশ কেন্দ্র, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ হিন্দুদের প্রতিনিধিত্ব করে না।

রবিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে হিন্দু ধর্মীয় আইন পরিবর্তন প্রচেষ্টার প্রতিবাদে হিন্দু সম্প্রদায়ের সকল ধর্মীয় সংগঠনের সমন্বয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

শ্যামল কান্তি নাথ বলেন, এসব প্রত্যেকটি সংগঠনের মালিক-কর্তৃপক্ষ মুসলিম। এরপরও তারা কেন এই উদ্যোগ গ্রহণ করবেন, এমন প্রশ্ন ছুড়ে দেন তিনি। 

তিনি বলেন, সরকারের সমর্থনপুষ্ট বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু পরিষদ উদযাপন পরিষদ, সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটি আছে। তাদেরকেও আইনের তৈরির সঙ্গে ইনভলভ করেনি। হিন্দু আইন তৈরির নেপথ্য একটি হিন্দু পরিষদ নেই, একজন হিন্দু সংগঠন নেই। এই প্রশ্নটি সবচেয়ে বড়। এই কমিশন যখন আইনটি প্রণয়ন করতে চায় তারা তখন উদাহরণ দিয়েছে ভারত এবং নেপালের। নেপাল হচ্ছে বিশ্বের একমাত্র হিন্দুরাষ্ট্র সেখানে যদি হিন্দু আইন সংস্কার হয় বাংলাদেশে কেন সংশোধন হবে না? আমরা বলেছি, নেপালের মন্দির, হিন্দুদের বাড়িঘর কেউ লুটপাট করেনি। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট অত্যন্ত স্পর্শকাতর। এখানে হিন্দুরা প্রতিনিয়ত নির্যাতিত হচ্ছে। এখানে হিন্দুদের ধর্মীয় আইন সংস্কারের পরিবেশ নেই। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, প্রথম আলো তারা এই ষড়যন্ত্রের পেছনে জড়িত।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের হিন্দুরা নির্যাতিত হয়েছে তখন প্রথম আলো-ডেইলি স্টার অথবা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন কেউই প্রকাশ্যে হিন্দুদের পাশে দাঁড়ায়নি। কোনোদিন তারা হিন্দুদের পক্ষে মাঠে নামেনি। অথচ তারা হিন্দু আইন সংস্কারের পক্ষে কথা বলছে এটি কেন?

ডেইলি স্টারের একটি কলাম ছাপা হয়েছিল। সেখানে একটি বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে। কলামে সেই কেইস স্টাডি উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দেননি। তিনি এখানে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন। এরকম একটি ভুয়া বানোয়াট গাঁজাখুড়ি গল্প লিখেছে ডেইলি স্টার। অথচ এই কলামে নিচে ডেইলি স্টার লিখে দিয়েছে-এই কলামের জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়। শাহানা নামের সেই লেখকের সাফাই যশোরের এক হিন্দু নারী নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়া হয়েছে। এটা লেখার কারণে অন্যান্য পত্রিকাতেও ছাপা হয়। এতে হিন্দু ধর্ম নিয়ে বিভ্রান্তি তেরি হয়েছে। এর দায় মাহফুজ আনাম এড়াতে পারেন না। 

তিনি আরো বলেন, মাহফুজ আনামদের প্রস্তাবে আইন কমিশন তাদের প্রস্তাবিত আইনে বলেছে হিন্দুরা যেখানেই যান সেখানে একাধিক বিয়ে করেন। এসব কথাবার্তা কেন তারা লিখেছেন তা আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়। আমরা এই চক্রের বিচার চাই।

তিনি বলেন, দেবেশ ভট্টাচার্যের উদ্ধৃতি দিয়ে মাহফুজ আনামের পরামর্শে আইন কমিশন তাদের খসড়া আইনে ভট্টাচার্যের একটি উদ্ধৃতি যুক্ত করেছেন। তিনি ২০১০ সালে মারা যান। তার বক্তব্য কোথায় পেলেন এত পরে তারা?