অকৃতকার্য শিক্ষার্থীরাদের অভিনন্দন-ড.কামাল

অকৃতকার্য শিক্ষার্থীরাদের অভিনন্দন-ড.কামাল

গতকাল এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট হয়েছে। প্রায় ২০ লক্ষ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। প্রায় ৮৪% শিক্ষার্থী কৃতকার্য হয় এবং অকৃতকার্য হয় ১৬% শিক্ষার্থী। সচারাচর  লক্ষ্য করলে দেখা যায় শুধুমাত্র কৃতকার্য  শিক্ষার্থীদের  জন্য শুভকামনা এবং অভিনন্দন জানানো হয়। কিন্তু দেশ বরেন্য শিক্ষাবিদ, নজরুল গবেষক  ডক্টর মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন  ফেসবুক পেজে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন। পাঠকের জন্য  ডক্টর মুহাম্মদ কামাল উদ্দিনের ফেসবুক স্ট্যাটাসটি  তুলে ধরা হলো :

প্রিয় অকৃতকার্য হওয়া শিক্ষার্থীরা!! তোমাদের অভিনন্দন।

ব্যর্থতা জীবনের শেষ কথা নয়-
গতকাল এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। দারুণ অভিনন্দনের জোয়ার। শুধু A+, সর্বনাশা এই A+ আমার কোন মেধাবী অথচ পিছিয়ে পড়েছে, কৃতকার্য হতে পারেনি-এমন মানুষের জন্য শুভেচ্ছা নিয়ে আসেনি। এটি প্রতিবছর হয়। এক গবেষণায় দেখা গেছে যারা ফেল করল দায় তাদের ২৫% আর শিক্ষা সুশাসনের দায় ৭৫%, শিক্ষার এই যোগ বিয়োগের মাঝে কিন্তু পুরো দায়টাই নিতে হয় শিক্ষার্থীকে।

টাইমলাইন গুলো ঘুরলে মনে হয়, এইদেশে সব তারাই অর্জন করে বসেছে। অথচ প্রতিবছর এই মেধাবীরাই শেষ বিচারে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা, মেধা অন্বেষণ পরীক্ষা, মেডিক্যাল ভর্তি সবখানে অকৃতকার্য হচ্ছে। ভাবনার বিষয়। আমি বলছি না এটি দোষের। তারা বহু চেষ্টা করে এই ফল অর্জন করেছে। কিন্তু ঐ ছেলেটি ঐ মেয়েটি যে প্রয়োজনীয় চেষ্টা করেও ফেল করল তাকে কেউ শান্তনা দিল না, অথচ দায়টা তাদেরও রয়েছে। আজকাল কিছু অথর্ব মান বলতেও বুঝে জিপিএ ৫ পাওয়াকে।

শিক্ষা কোনদিকে, পরিবেশ কোনদিকে, নৈতিকতা কোন দিকে? কোন খেয়াল নাই। শুধু একটা জিপিএ মানেই সব অর্জন। সব কিছু।

প্রিয় অকৃতকার্য হওয়া শিক্ষার্থীরা!! তোমাদের অভিনন্দন।
কোন কাজে ব্যর্থ হলে জীবন শেষ এমন নয়। বরং ভাবতে থাকো এটা জীবনের একটা 'কমা' মানে স্বল্প বিরতি, 'ফুলস্টপ' বা শেষ নয়। পরাজিত তারাই হয় যারা লড়াই করে না-আজই লড়াই শুরু হউক। জীবনে জয়-পরাজয়, হাসি-কান্না থাকবেই। হতাশ হয়ে মন খারাপ করে বসে থাকা চলে না।

জীবনের শুরুতে ফেল করেছ, তার মানেই তুমি ঘুরে দাঁড়ানোর পথ খুঁজে পেয়েছ। পরাজয়ের এই কঠিন স্বাদ, তোমার জীবনে বহু সম্ভাবনার পথ খুলে দিল। সেটি তুমি বিশ্বাস করেই এগিয়ে যাও। আমি তোমাদের কথা শুনতে চাই যারা ২০২৪ সালে অকৃতকার্য হয়েছ। তোমাদের অভিনন্দন দিতে চাই। তোমাদের পাশে দাঁড়াতে চাই। এসো। শেয়ার করি। যারা ফেলকে সর্বস্বান্ত হওয়া হিসাবে দেখতে চায় তাদের বলতে চাই, আপনি সম্ভাবনাকে শেষ করে দিচ্ছেন।

নিজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন না আনলে আপনি কখনোই ভাগ্যের গতিপথের বাঁক বদল করতে পারবেন না। হতে পারে আপনি পরিবারের তথাকথিত ‘বোঝা’, হতে পারে বন্ধুমহলের সবচেয়ে ভিতু মানুষটি আপনি, হতে পারে একটা ভালো চাকরির আশায় থেকে থেকে হতাশায় নিজেকে জীবনযুদ্ধের পরাজিত এক সৈনিক বলে ধরে নিয়েছেন। কিন্তু বিশ্বাস করুন, আপনি এখনো হেরে যাননি, সময় এখনো ফুরায়নি। দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের জীবনে বড় ভূমিকা পালন করে। কাজের শুরুতেই কাঙ্ক্ষিত প্রাপ্তি না পেয়ে হাল ছেড়ে দিলে জীবনে কখনোই মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবেন না। মনে সাহস আনুন। হাল ছেড়ে না দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পা বাড়ান। শুধু একটা সাহসী পদক্ষেপ আপনার সৌভাগ্যের পথ মসৃণ করে দিতে পারে।

জীবনের যে ক্ষেত্রেই আপনি সফল হতে চান, আপনাকে নিজের যত্ন নিতে শিখতে হবে। যদি আপনি নিজেকে সবচাইতে বেশি গুরুত্ব দিতে না পারেন, তাহলে আপনি জীবনের ভারসাম্য খুঁজে পাবেন না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির অসউইজ কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প থেকে ফিরে আসা মনোবিজ্ঞানী এডিথ এজের নিজেকে সবসময় পর্বতারোহী মনে করেন।

"একজন পর্বতারোহী যখন ওপরে উঠতে থাকেন, তিনি পিছলে পড়েন, দুই তিন ধাপ নিচে নেমে যান। কিন্তু ওপরে ওঠা থামান না তিনি।
আমি সেরকম, পিছলে পড়ি কিন্তু ওপরে ওঠা থামাই না আমি, কোনদিন থামাবও না।"

বিখ্যাত কমেডিয়ান এবং লেখক জো ব্রান্ড বলছেন, অন্যরা আপনার সম্পর্কে কী পাত্তা দেবার অত দরকার নেই। কারণ নিজের সম্পর্কে আপনার যে ধারণা তা অন্যের অনুমোদনের ছাড়াই আপনি বিশ্বাস করতে পারেন। "আমি ভাবি না অন্যেরা আমার সম্পর্কে কী ভাবছে। আমি আমার নিজের চেহারা পছন্দ করি, কিন্তু আরো বহু মানুষ তা পছন্দ করে না বলেই মনে হয়।" "আমি বিশ্বাস করতে শিখেছি, আমাকে কেমন দেখায় সেটা সব সময় গুরুত্বপূর্ণ নয়।" "আমার বন্ধু বা যারা আমাকে ভালোবাসে তাদের কাছেও সেটা ততটা বড় ব্যাপার না। এটা মনে রাখা জরুরী বলে আমি মনে করি।"

এই সময়ে তাদের পাশে থাকি। একটু কাছে ডেকে বলি, সাহস দিই। এই মহা দুর্দিনে তাদের পাশে দাঁড়াই। আবার বলি, তোমাকে দিয়ে হবে। তুমি আরো বহুজনের মত পারবে। আমরা সকলেই তোমার পাশে আছি।