অড়িয়াল খাঁ নদের ভাঙনে পাল্টে যাচ্ছে বাবুগঞ্জের ৫ গ্রাম

আগ্রাসী আড়িয়াল খাঁ নদের ভাঙনে পাল্টে যাচ্ছে বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুর ও চাঁদপাশা ইউনিয়নের ৫টি গ্রামের মানচিত্র। গ্রামগুলি হচ্ছে রহমতপুর ইউনিয়নের লোহালিয়া, সিংহেরকাঠী, চাঁদপাশা ইউনিয়নের রফিয়াদী, আরজিকালিকাপুর ও ভবানীপুর। এর মধ্যে রয়েছে বড় মীরগঞ্জ ও ছোট মীরগঞ্জ নামের দুটি বাজার। নদে প্রবল ¯্রােত এবং ভাঙনের তীব্রতায় দিশেহারা হয়ে পরেছে ওই এলাকাগুলির সকল পেশার মানুষ। জোয়ারের পানিতে নদের কানায় কানায় পূর্ণ থাকলেও থেমে নেই ভাঙন। গতবছর রহমতপুর ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহি ছোট মীরগঞ্জ বাজার আড়িয়াল খাঁ নদের গর্ভে বিলীন হওয়ায় পার্শবর্তী এলাকায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
জোয়ারের পানি ও নদীর ¯্রােত বৃদ্ধি পাওয়ায় গত শুক্রবার থেকে প্রবল ভাঙন দেখা দেওয়ায় বর্তমানে বাজারটি আবারো ঝুঁকিতে পরেছে। সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সিংহেরকাঠি গ্রামের নদের পারের ঘর-বাড়ি অনত্র সরিয়ে নেয়া হচ্ছে , গাছপালা কেটে ফেলা হচ্ছে। গত দুইদিনের ভাঙনে ছোট মীরগঞ্জ বাজারের একটি মসজিদ, স্ব-মীল ও কয়েকটি দোকান বিলীন হয়েছে। ঝুকিতে রয়েছে ২৬টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, পানের বরজ, ফসলি জমি ও বসত ভিটা হারা মানুষগুলো দূশ্চিন্তায় প্রহর গুনছে। আতঙ্কে রাত কাটাচ্ছে তীরবর্তি পরিবারগুলো। ছোট মীরগঞ্জ বাজারের মুদি ব্যবসায়ী আলা বক্স বলেন, তার প্রতিষ্ঠান চার বার ভেঙেছে। এবার ভাঙনের কবলে পরলে পথে বসতে হবে। আমরা গ্রামবাসি অস্তিত্ব সংকটে পরতে যাচ্ছি। কেউ কেউ পরিবার নিয়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। আড়িয়াল খাঁ নদের ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থ সূর্য আলম বলেন, আমার ও বড় ভাই শাহ আলমের ঘর ভাঙন কবলে পরেছে। এছাড়া গত দুই দিনে এই এলাকার কয়েকটি পরিবার ভাঙনে নিঃস্ব হয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কেউ ২কেজি চাল দিয়ে সাহায্য করেনি। আমাদের খোঁজ নেয়নি কেউ। ভাঙন কবলিত সিংহেরকাঠী এলাকার ইউপি সদস্য জামাল হোসেন পুতুল বলেন, প্রতিবছরই নদী ভাঙ্গনে এলাকার ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হয়ে থাকে। গত বছর ২০২০ সালে ছোট মীরগঞ্জ সম্পূর্ণটা ভেঙ্গে গেলে বাজারটি সড়িয়ে নেয়া হয়। কিন্তু এক বছর পার না হতেই আবার ভাঙনের কবলে পরেছে। ইতিমধ্যে বাজারটির ৪টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, স্বমিল, মসজিদ, বসতঘর ভেঙ্গে অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলিতে অবহিত করা হলেও এখন পর্যন্ত কার্যকরি কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। দ্রুত ভাঙন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে জোয়ারের পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে ভাঙন কবলিত এলাকাগুলি ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হবে এমনটাই বলছেন ভুক্তভোগীরা। নদী ভাঙন এলাকার শতাধীক পরিবার গৃহ ও ভূমীহীন হওয়ার আশংকায় রয়েছে। চাঁদপাশা ইউপি চেয়ারম্যান আনিচুর রহমান সবুজ বলেন, আমার ইউনিয়নের তিনটি গ্রামের শতাধীক পরিবার ইতিমধ্যে গৃহহীন হয়ে পরেছে। তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এলাকা থেকে, অনেকে সড়কের পাশে ঠাই নিয়েছে। তিনি বলেন নদী ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে চাঁদপাশা ও রহমতপুর ইউনিয়নের মানচিত্র পাল্টে যাবে।
এ ব্যাপারে বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস বলেন, মীরগঞ্জ থেকে দক্ষিন দিকে আড়িয়াল খাঁ নদের পশ্চিম পার’র ৩ কিলোমিটার এলাকা ভাঙন রোধের আওতায় এনে বরাদ্দ চেয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।