উদীচী ও বরিশাল নাটকের আয়োজনে বরিশাল মুক্ত দিবসের অনুষ্ঠান

উদীচী ও বরিশাল নাটকের আয়োজনে বরিশাল মুক্ত দিবসের অনুষ্ঠান

৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা।বরিশাল নগরের আমতলা মোড়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মরক ভাস্কর্য বিজয় বিহঙ্গ পাদদেশে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে নিয়ে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে উদীচী, বরিশাল নাটক, জাতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ ও উত্তরণের শিল্পীকর্মীরা। পরে প্রদীপ প্রজ্জলন, আলোচনা, আবৃত্তি ও সঙ্গীতানুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বরিশাল মুক্ত দিবস পালিত হয়।

বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী বরিশাল জেলা সংসদ ও বরিশাল নাটক-এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত বরিশাল মুক্ত দিবসের আলোচনায় বক্তারা জাতীয় পতাকার মর্যাদা রক্ষার আহ্বান জানান।

৮ ডিসেম্বর বরিশাল মুক্ত দিবস। এই দিন পাক হানাদার মুক্ত হয় বরিশাল। অর্থাৎ ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের ৭ দিন আগে বীর মুক্তিযোদ্ধারা বরিশালকে শত্রু মুক্ত করে বাংলাদেশের পাতাকা উত্তোলন করেন। মুক্ত দিবস এবং মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে উজ্জীবীত করার জন্য বরিশালের বিজয় বিহঙ্গ পাদদেশে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

উদীচী বরিশালের সভাপতি সাইফুর রহমান মিরণের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা কেএসএ মহিউদ্দিন মানিক (বীর প্রতীক), আবদুর রব হাওলাদার, বরিশাল নাটকের সভাপতি কাজল ঘোষ, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতিম-লীর সদস্য আজমল হোসেন লাবু, উদীচীর সহ সভাপতি, কাজী সেলিনা, জাতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ বরিশাল শাখার সাধারণ সম্পাদক সুখেন্দু সরকার, বরিশাল নাটকের সাধারণ সম্পাদক পার্থ সারথি, উত্তরণের সভাপতি মো. শাকিল আহম্মেদ সহ অন্যরা।

আলোচনা সভায় বক্তার বলেন, বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা উপলক্ষে সারা দেশে বিভিন্ন দেশের পতাকা উত্তোলনের প্রতিযোগিতা চলছে। সেখানে আমাদের লাল-সবুজের পতাকা স্থান পাচ্ছে না। দুই একটি স্থানে জাতীয় পতাকা দেখা গেলেও তা এত ক্ষুদ্র চোখেই পড়ে না। এটা আমাদের জাতীয় পাতকাকে অবমাননা। যে সব দেশের পতাকা উড়ছে তাদের, ভাষা সংস্কৃতি কোনটার সঙ্গেই আমাদের সেরকম সখ্যতা নেই। তাছাড়া ফুটবল বিশ্বকাপে আমাদেও অংশগ্রহণও নেই। অন্যদিকে ক্রিকেট খেলায় বাংলাদেশের বিজয়ের পরও আমাদের মিছিল নেই। অথচ ফুটবল বিশ্বকাপে দুটি দেশে জিতলেই রাস্তায় সেই দেশের পতাকাসহ হাজার হাজার তরুন-তরুনীদেও উন্মাদনা ছোখে পড়ে। ফটবল বিশ্বকাপে যে কোন দেশের সমর্থন থাকতেই পারে। সেটা যেন নিজের দেশ ও পতাকে অবমাননা করে না হয়। রক্ত¯œাত বাংলাদেশের পতাকার মর্যাদা রক্ষার জন্য সরকার সহ সবার উদ্যোগ নেওয়া অত্যন্ত জরুরী।

মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের আগেই বরিশাল পাক হানাদার মুক্ত হয়। ওনদিন পাকিস্তানী বাহিনীর গানবোড কীর্তনখোলায় ডুবিয়ে দেওয়া হয়। নগরবাসী বিজয় উল¬াসে ফেটে পড়ে। বিজয় অর্জিত হলেও আমাদের অর্জন ম্ল¬ান করে দেওয়ার চেষ্টা থেমে নেই। একাত্তরের পরাজিত শক্তি নানা মোড়কে মাথাচারা দিয়ে উঠছে। তারা আমাদের ঐতিহ্য ধ্বংস করার জন্য নতুন ফতোয়া জারি করছে। বিজয়ের ৫০ বছর পরও নানান কৌশলে সরকারের ভেতরে স্বাধীনতা বিরোধী চক্র ঘাপটি মেরে বসে আছে। এই গোষ্ঠী আমাদের পাঠ্য বই এবং কারিকুলাম পরিবর্তন করে ফেলেছে। তারা আমাদের ভাস্কর্য ভাঙার ঔদ্ধত্য দেখাচ্ছে। উগ্র ধর্মান্ধ মৌলবাদী এই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার হতে হবে। আমাদের আবারও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হওয়া দরকার। তাই যতদিন পর্যন্ত একজন রাজাকার থাকবে ততোদিন মুক্তিযোদ্ধাদের সংগ্রাম চলবে।
আলোচনা সভা শেষে আবৃত্তি পরিবেশন করে সুজয় সেন গুপ্ত, জিয়াউর রহমান, আশরাফুর রহমান সারগ, মাহফুজা মুনা, রাখী শায়ন্তনী, মুনিয়া রহামন রচি। বৃন্দ আবৃত্তি পরিবেশন করে বরিশাল নাটক পরিচালিত আবৃত্তি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রাথমিক বর্ষের শিক্ষার্থীরা।সঙ্গীত পরিবেশন করে জাতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিরন পরিষদ, উত্তরণ এবং উদীচী।