করোনায় ভীতি নয়, সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন বলেছেন, করোনা হলেই তাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেওয়া কিংবা বাড়িতে আশ্রয় না দেওয়া ঘটনা ঘটছে। অনেককে আবার বাড়ির মালিক নামিয়ে দিয়েছেন। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। করোনা হলেই তিনি মারা যাবেন এমন নয়। চিকিৎসায় করানোয় আক্রান্ত বেশিরভাগ রোগী ভালো হয়ে যায়। তাই করোনায় ভীতি না ছড়িয়ে আমাদের সতর্ক ও সচেতন থেকে করোনাকে মোকাবেলা করতে হবে।
গত শুক্রবার রাতে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা রোগীর সেবা ও বর্তমান অবস্থা জানাতে গিয়ে এসব আশার কথা শুনিয়েছেন ডা. বাকির হোসেন।
ডা. বাকির হোসেন বলেন, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত ১৭ মার্চ প্রথম করোনা সন্দেহে প্রথম রোগী ভর্তি হয়। এর পর একজন দুই জন করে রোগী বাড়তে থাকে। গত শুক্রবার পর্যন্ত ১০৯ জন রোগী এই হাসপাতালে ভর্তি হয়। তাদের মধ্যে করোনা পজেটিভ ছিল ২৫জন। সেই ২৫ জনের মধ্যে ১৯জন সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। ২জন মারা গেছেন। বর্তমানে ৯জন রোগী ভর্তি আছেন। তাদের মধ্যে ৪জন পজেটিভ। তবে পজেটিভ ওই চারজন ভালোর দিকে আছেন। এখন পর্যন্ত করোনায় মৃতের হার ২ ভাগের বেশি নয়। সুতরাং ভয় না পেয়ে যাতে কেউ আক্রান্ত না হয় সেই জন্য সতর্ক থাকতেই হবে।
ডা. বাকির হোসেন বলেন, রোগ সনাক্তের আগেই ভীতি ছড়ালে মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়বে। যা ইতিমধ্যে হয়েছে এবং হচ্ছে। তাই কোনভাবেই সর্দি-কাশি কিংবা গলা ব্যাথা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। আবার সর্দি-কাশি হলেই হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে এমন নয়। বাড়ি থেকেই চিকিৎসা নিতে পারবেন। তবে বেশিদিন সর্দি-কাশি হলে হাসপাতালে এসে পরীক্ষা করাতে হবে। এব্যাপারে মেডিকেল কলেজ হাপাতালের চিকিৎসকরা সর্বাত্মক সহযোগিতা দেবে। কোনভাবেই আক্রান্ত রোগীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা যাবে না। বাড়ির অন্য সবাই শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে সতর্ক ও সচেত থেকে ১৪দিন পৃথক থাকার চেষ্টা করতে হবে। ১৪ দিন পর পরীক্ষা করিয়ে নিশ্চিত হতে হবে।
বাকির হোসেন আরও বলেন, ডাক্তারদের মধ্যে প্রথম দিকে কিছুটা ভয় থাকলেও সেই ভয় আমরা জয় করতে সক্ষম হয়েছি। ১৯৭১ সালেও আমরা যুদ্ধ করেছি। ৭১ এর যুদ্ধ ছিল পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে। সেই শত্রু আমাদের চেনা ছিল। এখন আমরা যুদ্ধ করেচলেছি এক অদৃশ্য শক্তির সঙ্গে। এই করোনা মহামারী আমাদের এখনো জানার বাইরে। আমাদের যেন এই রোগটি না হয় সেই দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। নাক মুখে যেন হাত না দেই। সতর্ক থাকি। আশার কথা হচ্ছে, জনসাধারণ সচেতন হচ্ছেন। তারা যদি আরও সচেতন হয় তাহলে আমরা এই জায়াগা থেকে দ্রুত উত্তোরণ ঘটাতে পারবো।
এব্যাপারে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য বিষয়ক রিপোর্টারদের সংগঠন বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার ফোরােেমর সভাপতি তৌফিক মারুফ বলেন, বাংলাদেশে করোনা প্রাদুর্ভাব শুরুর প্রথম দিকে একটু অগোছালো ছিল। বর্তমানে সেটি সমন্বিতভাবে চেষ্টা চলছে। রোগীদেরও সমস্যা আছে এবং চিকিৎসকদের মধ্যে সমস্যা রয়েছে। করোনা আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে গেলেই একধরণের ঠেলাঠেলির মধ্যে পড়ে যেত। অনেক রোগী অস্বস্থিবোধ করতো। স্বাস্থ্য বিভাগ চেষ্টা করছে। তারা বলেছে কোন হাসপাতাল কোন রোগীকে না দেখে বের করে দিলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্বাস্থ্য বিভাগের ওই নির্দেশনা মানলে রোগীদের দুর্ভোগ অনেকটা কমে যাবে। ডাক্তাররা যেন ভয় না পায়। তাহলে রোগীরা চরম দুর্ভোগে পড়বে। তাদের দায়িত্ব নিয়েই কাজ করতে হবে।
তৌফিক মারুফ আরো বলেন, করোনা নিয়ে মানুষের মনের ভীতি দূর করতে হবে। এখানে যেমন ডাক্তারদের ঝুঁকি রয়েছে, তেমনি রোগীর ঝুঁকি রয়েছে। চিকিৎসকদের ঝুঁকি একটু বেশি। তারা যেহেতু প্রথম সারির যোদ্ধা, তাই ওই ঝুঁকি মাথায় নিয়েই দায়িত্ব পালন করছেন। তাই রোগীরা তথ্য গোপন করলেও সেটা বুঝেই তিনি রোগীর সেবা দেবেন। রোগী তথ্য গোপন করছে জেনে কোনভাবেই যেন রোগীর সেবা বন্ধ না হয়। যদি সেটা হয় তবে সেটা ভীষন অন্যায় হবে। যুদ্ধের ময়দানে নামলে নিজের সেফটি রেখেই দায়িত্ব পালন করতে হবে। ডাক্তারদের প্রোটেকশনের ব্যবস্থা করতে হবে। পারষ্পরিক সহযোগিতা নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে। মানুষ যেন চিকিৎসকদের বিপদের মধ্যে না ফেলেন সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।