চাইল্ড হেল্পলাইনে ৬ লাখ কল

শিশুর সহায়তায় চালু করা ‘চাইল্ড হেল্পলাইনে’ছয় বছরে কল এসেছে প্রায় ছয় লাখ; যেগুলোর মাধ্যমে তথ্য পেয়ে বন্ধ হয়েছে দুই হাজার ৬৯৪টি বাল্যবিয়ে।
রবিবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ তথ্য জানায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়।
১০৯৮ নম্বরে বিনামূল্যে ফোন করার দেশব্যাপী চালু এ কল সেন্টারে ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে মোট পাঁচ লাখ ৮৬ হাজার ৩০৭টি কলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এসেছে স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য ও পরামর্শ চেয়ে। ৪৭ হাজার ৪৫৩টি শিশুকে এমন সেবা দেওয়া হয়েছে।
শিশু নির্যাতন বিষয়ক কল এসেছে পাঁচ হাজার ৮৭২টি। পারিবারিক সমস্যার কথা জানাতে ফোন করা হয়েছে পায় সমানসংখ্যক। আর আইনি সহায়তা চেয়ে কল এসেছে প্রায় ২০ হাজার।
বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, “প্রকল্পটি শিশু সুরক্ষা, শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠা, বাল্য বিবাহ প্রতিরোধসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। টোল ফ্রি নম্বরটিতে অনেক কল আসে। বাল্যবিবাহ বন্ধে এটিকে আরও ভালোভাবে কাজে লাগানো যায়। প্রকল্পটি চালিয়ে নেওয়া উচিত। যদি ইউনিসেফ অর্থায়ন না করে তাহলে সরকারি অর্থায়নে এটি চালু রাখা প্রয়োজন।”
বৈঠকে কমিটি বাল্যবিয়ে বন্ধে আরও জোর দেওয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়ে চাইল্ড হেল্পলাইন প্রকল্পটি নিয়ে একটি সমীক্ষা চালানোর পরামর্শ দিয়েছে।
দেশের যেকোনো প্রান্তে কোনো শিশু যে কোনো ধরনের সহিংসতা, নির্যাতন ও শোষণের শিকার হলে শিশু নিজে বা অন্য যেকোনো ব্যক্তি এ নম্বরে ফোন করে সহায়তা চাইতে পারেন।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের চাইল্ড সেনসিটিভ সোস্যাল প্রটেকশন ইন বাংলাদেশ (সিএসপিবি) প্রকল্পের আওতায় ইউনিসেফের সহায়তায় এ চাইল্ড হেল্পলাইন চলছে।
২০২৪ সালে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা। তবে এরপরও প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য অনুরোধ জানিয়ে ইউনিসেফকে চিঠি দেওয়ার সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি।
২০১৫ সালে পরীক্ষামূলকভাবে চাইল্ড হেল্পলাইন ১০৯৮ চালু করা হয়। শিশুরা ২৪ ঘণ্টা সেবা নিতে পারছে ঢাকার আগারগাঁও সমাজসেবা অধিদপ্ততর ভবন থেকে পরিচালিত এ কল সেন্টার থেকে।
সংসদীয় কমিটিতে উপস্থাপিত মন্ত্রণালয়ের তথ্য থেকে জানা যায়, এ কল সেন্টারে ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে মোট পাঁচ লাখ ৮৬ হাজার ৩০৭টি ফোন কল গ্রহণ করা হয়েছে।
এর মধ্যে পাঁচ হাজার ৮৭২টি ছিল শিশু নির্যাতন সম্পর্কিত, পাঁচ হাজার ৩৪৭টি পারিবারিক সমস্যা সম্পর্কিত, নয় হাজার ২১৩টি গৃহহীণ ও হারিয়ে যাওয়া শিশুর বিষয়ে, আইনি সহায়তা চেয়ে কল এসেছে ১৯ হাজার ১৩৮টি, স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য ও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ৪৭ হাজার ৪৫৩ জন শিশুকে।
এ ছাড়া বিদ্যালয়ে পড়াশুনার বিষয়ে স্কুল শিক্ষক, পরিচালনা কমিটি ও অভিভাবকের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে সহায়তা দেওয়া হয়েছে ১৮ হাজার ২১৭ জন শিশুকে।
পাশাপাশি মাদক ও অন্যান্য নেশার ব্যবহার ও ক্ষতি সম্পর্কে পরামর্শ ও নিরাময় সেন্টারে রেফার করা হয়েছে ৪৬৮টি শিশুকে। আর কাউন্সিলিং সেবা দেওয়া হয়েছে ১২ হাজার ৬৩৪টি শিশুকে।
কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেননের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, আকাম সরওয়ার জাহান, আরমা দত্ত এবং শবনম জাহান বৈঠকে অংশ নেন।