করোনা ওয়ার্ডে পর্যাপ্ত সেবা না পাওয়ার অভিযোগ,হিসাব মিলছে না বাস্তবে

সারা দেশে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় আইসিইউ এবং সাধারণ শয্যা ফাঁকা আছে দাবি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কেন খালি সেই তথ্য নেই। বেড ফঁকা থাকায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ধারণা হতে পারে রোগী সংখ্যা কম তাই ওই চিত্র। কিন্তু করোনা আক্রান্ত রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সেবা পর্যাপ্ত না থাকার কারণে রোগীরা হাসপাতালে যেতে ভরোসা পাচ্ছে না। সেকারণেই বেড ফাঁকা আছে। তা না হলে ১৬ কোটি মানুষের দেশে ১৪ হাজার শয্যা খুব বেশি হবার কথা নয়।
সারা দেশে সরকারি হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া রোগীদের মৃত্যুর মিছিল বাড়ছে। প্রতিদিনই মারা যাচ্ছে শিশু, যুবক থেকে শুরু করে বৃদ্ধরা। হাসপাতলের করোনা ওয়ার্ডে পর্যাপ্ত চিকিৎসা না পাওয়ার কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে অভিযোগ স্বজনদের। মৃত্যুর মিছিল দেখে দেখে আক্রান্ত সাধারণ রোগীরা হাসপাতালে যেতে ভয় পাচ্ছেন।
বরিশালে করোনা উপসর্গ দেখা দিলেও রোগীরা বাড়িতে থেকেই নিজস্ব ব্যবস্থায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। যখন বাড়িতে ব্যবস্থা করা সম্ভব হয় না তখন সাধারণ রোগীরা নিরুপায় হয়ে করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি হন। বিশেষ করে বাড়িতে অক্সিজেন এবং আইসিইউ ব্যবস্থা না থাকায় প্রচ- শ^াসকষ্টের রোগীরা করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি হচ্ছেন। এসব রোগীর ব্যবস্থাপনা হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে পর্যাপ্ত নেই বলে দাবি করেছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। করোনা ওয়ার্ডের রোগীদের প্রতি মানবিক হওয়ার কথা বলা হলেও অমানবিক আচরণের শিকার হচ্ছেন রোগী ও স্বজনরা।
শুক্রবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সারাদেশে করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত হাসপাতালগুলোতে সাধারণ শয্যা রয়েছে ১৪ হাজার ৬১০টি এবং নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) ৩৭৯টি। এর মধ্যে সাধারণ শয্যায় করোনা রোগী ভর্তি আছেন ৪ হাজার ৬৯১ জন। ফাঁকা রয়েছে ৯৯১৯টি। আইসিইউতে ভর্তি আছেন ১৮৩ জন। আইসিইউ বেড খালি রয়েছে ১৯৬টি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী সারা দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে মোট ১০ হাজার ২৪০টি, হাইফ্লো নেজাল ক্যানেলা ৮০টি এবং অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ৫৫টি। সারা দেশে যত সংখ্যক রোগী বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন তা কত ১৪ হাজার হবে সেই হিসেব হয়তো স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে নেই। যদি সেই তথ্য থাকতো তাহলে শয্যা ফাঁকা থাকার ঠিকুজি দিতেন না। তারপরও কেন ফাঁকা আছে সেটা খতিয়ে দেখা দরকার।
রোগী ও রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, করোনা ওয়ার্ডে পর্যাপ্ত সেবা নেই। ডাক্তাররা রোগীর কাছেও আসে না। পর্যাপ্ত অক্সিজেন সিলি-ার নাই। আবার সিলি-ার যা আছে তার অনেকগুলোতে মিটার নেই। সিলি-ার থাকলেও শ^াসকষ্টের রোগীকে সময় মতো অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে না। চিকিৎসার জন্য কমবেশি নার্সের ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে রোগীদের। করোনা ওয়ার্ডের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও সেরকম নেই। ওষুধ সরবরাহ না থাকায় করোনা রোগীরা ফার্মেসিতে গিয়ে ওষুধ কিনছেন। যার ফলে করোনা আরো ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
২২ জুন ঢাকার আইইডিসিআর থেকে করোনা পরীক্ষার পজেটিভ রিপোর্ট পাওয়ার পরপরই রাতে হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি হন স্বামী-স্ত্রী এবং এক ছেলে। একমাত্র কন্যার করোনা পজেটিভ হলেও কোন উপসর্গ না থাকায় তাকে বাড়িতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালে এসে চরম সমস্যায় পড়েছেন তারা। প্রয়োজনীয় ওষুধও দেওয়া হচ্ছে না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এমন কোন লোক নেই যাদের বাইরে পাঠিয়ে খাবার-ওষুধ আনাবেন। বাধ্য হয়ে করোনা আক্রান্ত ছেলেকে বাইরে পাঠিয়ে খাবার এবং ওষুধ আনিয়েছেন। বাড়িতে অক্সিজেন সাপোর্ট পেলে তারা ৩জনও হাসপাতালে আসতেন না। এমন চিত্র একটি নয়। এরকম অসংখ্য ঘটনা ঘটছে সারা দেশে।
গত ২১ জুন রোববার হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আল মামুন নামে মাত্র ১৩ বছর বয়সের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। প্রচ- শ^াসকষ্ট থাকার পরও তাকে অক্সিজেন দেওয়া যায়নি। তাকে জিংক খাওয়াতে বলা হয়েছ। এর আগে দিন ১৯ জুন শামীমা নামে ৩৬ বছর বয়সের এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। তিনিও শ^াসকষ্টজনিতকারণে মারা গেছেন। গত সোমবার ৬৮ বছর বয়সের এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। এরকম অনেক রোগী মারা গেছে কেবল অক্সিজেন কিংবা আইসিইউ সাপোর্ট না দেওয়ার কারণে। হাসপতালে অক্সিজেন এবং আইসিইউ সাপোর্ট পাবে এমন আশায় হাসপাতালে এলেও সেই সুযোগ মেলেনি। স্বজনদের অভিযোগ, বাড়িতে থাকলে হয়তো এমন অবস্থা নাও হতে পারতো। এমন অবস্থা হলে তো হাসপাতালে সব আইসিইউ বেড ফাঁকা থাকবে। সেদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নজর দেওয়ার আহ্বান রোগী ও স্বজনদের।