কলকাতায় শুরু তৃতীয় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব

প্রতীক্ষিত বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব কলকাতায় মহাসমাবেশ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের ৩২টি জনপ্রিয় চলচ্চিত্র নিয়ে তৃতীয়বারের মতো উৎসব হওয়াতে স্বস্তি পেল কলকাতার সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষ।
কলকাতা নন্দন-১ এর সুসজ্জিত প্রেক্ষাগৃহে আজ পাঁচ দিনব্যাপী তৃতীয় বাংলাদেশ উৎসব-২০২১ এর উদ্বোধন করলেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি জৈবপ্রযুক্তি দপ্তরের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু ও ভারতের বিদেশ সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনার মোহাম্মদ ইমরান ও প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ। কলকাতাস্থ উপ-হাইকমিশনের উপ-হাইকমিশনার তৌফিক হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রথম সচিব সচিব (প্রেস) ড. মোফাকখারুল ইকবাল।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শুরু হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই। তবে বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের দায়িত্ব নেওয়ার পর যৌথভাবে ভারত-বাংলাদেশের চলচ্চিত্র তৈরির কাজ হচ্ছে। যা আগে ছিল না। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যা কিছুই ঘটুক না কেন সংস্কৃতির মধ্যে কোন বিভেদ করতে পারে না। আমাদের আসল পরিচয় আমরা বাঙালি। আমাদের মধ্যে আরও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান বাড়াতে হবে। এর ফলে দুই বাংলার নৈকট্য স্থাপন হবে।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু তার বক্তব্যে বলেন, সমাজে উন্নয়নের জন্য শিল্প ও সাহিত্যের সাথে রাজনীতি আনা ঠিক নয়। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ তথা সারাবিশ্বে এক অনন্য সম্পদ বাংলাদেশের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান।
ভারতের বিদেশ সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, এই বছর বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবর্ষ। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর এবং ভারত-বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কেরও ৫০ বছর। ভারত-বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা একসাথে যুদ্ধ করে বাংলাদেশ স্থাপন করেছে। ফলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অনেক রক্ত ঝরেছে। ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক রক্তের আখেরে গড়া। তাই এই সম্পর্ক ছিন্ন হবার নয়। দুই দেশের সম্পর্ক নিবির এবং গভীর। বর্তমানে দুই দেশের সম্পর্ক সুবর্ণ সম্পর্কে পরিণত হয়েছে।
সম্প্রতি ২৬ জানুয়ারি ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের কুজকাওয়াজে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অংশগ্রহণ করেছে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দুই দেশ 'জিরো টলারেন্স' নীতি গ্রহণ করেছে। দুই দেশের গোয়েন্দা বিভাগ এই বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করছে। ফলে ভারত ও বাংলাদেশের সেনারা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলছে। আমি মনে করি, দুই দেশের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ আরও বাড়াতে হবে। যা আগের থেকে অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসা ও ভ্রমণের জন্য অনেক মানুষ আসেন।
তিনি বলেন, আমি যখন বাংলাদেশে ভারতের নিযুক্ত হাইকমিশনার ছিলাম তখন বছরে ৫ লাখ ভিসা প্রদান করা হয়েছিল। সবশেষে তিনি বলেন, দুই দেশের যৌথ প্রযোজনায় যে চলচ্চিত্র হচ্ছে তা অভিনন্দন যোগ্য। সম্প্রতি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে মুম্বাইতেও চলচ্চিত্র নির্মাণ হচ্ছে।
ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোহাম্মদ ইমরান বলেন, আমি মনে করি কলকাতা ভারতের সাংস্কৃতিক ক্ষেত্র যা দুই বাংলার কাছে গর্বের। কিছুক্ষণ আগেই একাডেমি অফ ফাইন আর্টস-এ একটি চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন হয়েছে। আজ যে তৃতীয় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব শুরু হচ্ছে এটা শুধু কলকাতা কেন্দ্রিক করে না রেখে এই উৎসব বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দিতে হবে।
বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশের সমাজচিত্র, মুক্তিযুদ্ধ, রাজনীতি ও বঙ্গবন্ধুর জীবনালেখ্যর ওপর 'বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ' শিরোনামে ১০০টি চিত্রকর্মের প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ একাডেমি অব ফাইন আর্টস-এর ঐতিহ্যবাহী গ্যালারিতে।
চলচ্চিত্র উৎসবে ভারতের চলচ্চিত্র জগৎ থেকে উপস্থিত ছিলেন প্রখ্যাত চিত্র পরিচালক সৃজিত মুখার্জি, চিত্রনায়ক অনির্বাণ ভট্টাচার্য, প্রখ্যাত নায়ক প্রসেন জিৎ চট্টোপাধ্যায়, পরিচিত মুখ বিশিষ্ট চিত্রনায়িকা জয়া আহসান ও নায়িকা মুমতাজ সরকার। আরও উপস্থিত ছিলেন প্রখ্যাত চিত্রনায়ক রিয়াজ, মিথিলা প্রমুখ।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ এবং বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন, কলকাতার সহযোগিতায় ৫-৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১ সাল পর্যন্ত কলকাতায় তৃতীয় 'বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব' ২০২১, কলকাতার ঐতিহ্যবাহী রবীন্দ্র সদনের নন্দন-১, ২ ও ৩ এর প্রেক্ষাগৃহ সমূহে প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা ৫-১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ পর্যন্ত জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
উদ্বোধনী পর্বে 'হাসিনা এ ডটারস টেল' চলচ্চিত্র'টি প্রদর্শিত হয়। পরবর্তীতে ন ডরাই, গণ্ডই, আয়নাবাজি, জন্মসাথী, কৃষ্ণপক্ষ, জালালের গল্প, দেবী, হাসিনা এ ডটারস টেল, মায়া দ্য লস্ট মাদার, বাপজানের বায়স্কোপ, রাজাধিরাজ রজ্জাক, একাত্তরের গণহত্যা ও বধ্যভূমি, কাঙ্গাল হরিনাথ, আবার বসন্ত, ছুয়ে দিল মন, হীরালাল সেন, অজ্ঞাতনামা, সত্ত্বা, মুসাফির, শাটল ট্রেন, ইতি তোমারই ঢাকা, আন্ডার কনস্ট্রাকশন, পদ্ম পাতার জল, ইন্দুবালা, আখি ও তার বন্ধুরা, অন্তর জ্বালা, ফাগুনের হাওয়ায়, ইসমাইলের মা, কাঠবিড়ালি প্রদর্শিত হবে।
অনুষ্ঠানটির সঞ্চালক ছিলেন সতীনাথ মুখোপাধ্যায় ও স্বপ্না দে।