চামড়া শিল্প রক্ষা করতে উদ্যোগ নিতে হবে

বাংলাদেশে কোরবানীর ঈদে সবচেয়ে বেশি চামড়া সংগ্রহ হয়। সারা বছর চামড়া বেচা-কেনা হলেও কোরবানীর চামড়া সংগ্রহের দিকে নজর বেশি মাঠ পর্যায়ের ব্যবসায়ীসহ ট্যানারী মালিকদের। কিন্তু এবছর চামড়ার দরপতন এবং ট্যানারি মালিকদের কাছে মাঠ পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের বকেয়া পড়ার অজুহাতে চামড়া কেনা-বেচায় ধস নামে। ফলে সারা দেশে প্রচুর চামড়া পচে নষ্ট হয়েছে এমন তথ্য এসেছে। অনেক স্থানে চামড়া বিক্রি করতে না পেরে নদীর পানি কিংবা মাটি চাপা দিয়েছে। অন্যদিকে দেশের বাজারে চামড়ার মূল্য না থাকায় চামড়া পাচার হয়েছে এমন তথ্যও এসেছে। আমাদের চামড়া শিল্পকে রক্ষা করতে কার্যকর উদ্যোগ না থাকায় চামড়া পচে নষ্ট হওয় কিংবা মাটিচাপা দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। কোন পক্ষ বিপক্ষের ওপর দোষ না চাপিয়ে আমাদের চামড়া শিল্প রক্ষায় উদ্যোগ নিতে হবে।
চামড়া কেনা-বেচায় ট্যানারী মালিক, আঞ্চলিক ব্যবসায়ীদের কাছে অনেকটা জিম্মি হয়ে পড়েছে মাঠ পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া যারা মৌসুমী ব্যবসায়ী, বিশেষ করে মাদ্রাসা এবং এতিমখানার কর্তৃপক্ষ কোরবানীর চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। তারা চামড়া সংগ্রহের পর লবন দিয়ে সংরক্ষণের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ট্যানারিতে চামড়ার দাম সেরকম না থাকায় ওইসব মৌসুমী ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন। যদিও গত কয়েকদিন ধরে ট্যানারি মালিক, সরকার এবং আড়ৎদারদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে চামড়া শিল্প রক্ষায় উদ্যোগ নেওয়ার কথা উঠে এসেছে। কিন্তু ওই বৈঠকের আগেই দেশের চামড়াশিল্পে ধস নেমেছে। হাজার হাজার চামড়া পচে নষ্ট হয়ে গেছে।
সরকার, ট্যানারি মালিক, আড়ৎদার এবং ব্যবসায়ীদের টানাপড়েনে এবার কোরবানীর ঈদে গরুর চামড়া কিনতেও অনীহা লক্ষ্য করা গেছে। অনেক স্থানে গরুর চামড়া পড়ে থাকতে দেখা গেছে। ছাগলের চামড়া তো কেউ কেনেইনি। গরুর চামড়া কিনতেও অনীহা ছিল পাইকারদের। ফলে বরিশাল নগরের পদ্মাবতী এলাকার পাইকারী চামড়ার বাজার থেকে অনেকেই ফিরে গেছেন হতাশ হয়ে। পাইকারী বাজারের ব্যবসায়ীদের দাবি, তাদের ট্যানারি মালিকরা এক প্রকার চামড়া সংগ্রহে নিরুৎসাহিত করছেন।
বরিশাল চামড়া ব্যবাসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শহীদুর রহমান শাহিন অভিযোগ করেছেন, ট্যানারি মালিক বা ব্যবসায়ীদের কাছে বরিশালের চামড়া ব্যবসায়ীদের লাখ লাখ টাকা বকেয়া পাওনা রয়েছে। প্রতিবছর কোরবানির পূর্বে কিছু টাকা ট্যানারি ব্যবসায়ীরা দিলেও এবারে খালি হাতেই ফিরিয়ে দিয়েছেন। তাই নতুন করে দেনাগ্রস্ত হতে রাজি হননি তারা। এজন্য বহু ব্যবসায়ী এবার চামড়া কেনা থেকে বিরত থেকেছেন। যেহেতু চামড়া কেনায় তেমন কোন উদ্যোগ ছিল না। তাই চামড়ার দর পতন হয়েছে। বর্তমানে তিন পক্ষ বৈঠক করে চামড়ার নতুন দাম নির্ধারণ করেছে। তার আগেই চামড়া শিল্পের ক্ষতি যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। চামড়া পচে যেমন নষ্ট হয়েছে, তেমনি বর্ডার এলকা দিয়ে চামড়া পাচারও হয়েছে। এখান থেকে উত্তোরণ ঘটাতে হলে সরকারকে উদ্যোগী ভূমিকা নিতে হবে।
আমরা চাই আমাদের চামড়া শিল্প রক্ষায় দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক। কোরবানীর আগেই চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করা এবং মাঠ পর্যায়ে চামড়া কেনায় যেন কোন সি-িকেট তৈরি না হয় সেদিকে নজরদারী করতে হবে। চামড়ার দাম কম সেই অজুহাতে যেন চামড়া পাচার না হতে পারে সেদিকেও নজর দিতে হবে। আমাদের চামড়া শিল্পের ধস ঠেকাতে উদ্যোগ নিতে হবে।