দীপাবলিতে আলোকিত মহাশ্মশান

দীপাবলিতে আলোকিত মহাশ্মশান

সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ব্যাপক আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালন করবে কালীপূজা। এই পূজার আগের দিন অর্থাৎ বুধবার ৩ নভেম্বর ছিল শ্মশান দীপাবলি। সন্ধ্যায় ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে প্রদীপ প্রজ¦ালন করে শুরু হয় দীপাবলির আনুষ্ঠানিকতা।

দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বড় শ্মশান দীপাবলি অনুষ্ঠিত হয় বরিশালের মহাশ্মশানে। ২০০ বছরের বেশি সময় ধরে এই শ্মশানে পালিত হয়ে আসছে শ্মশান দীপাবলি। এরই ধারাবাহিকতায় এবারও অসংখ্য প্রদীপের আলোয় আলোকিত হয় মহাশ্মশান। গতকাল কয়েক হাজার মানুষের আগমন ঘটে শ্মশানে।

শুভ ভূত চতুর্দশী তিথিতে পূর্ণ তিথিতে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এ দীপাবলি উৎসবের আয়োজন করে আসছেন। গোধূলি বেলায় হাজার হাজার নরনারী শ্মশানে স্বজনদের সমাধিতে প্রদীপ জ্বেলে তাদের আত্মার শান্তি কামনা করেন। পরে হারিয়ে যাওয়া প্রিয়জনের প্রিয় খাবারগুলো সাজিয়ে দেওয়া হয় সমাধির পাদদেশে। সবকিছু করা হয় পূর্ণ তিথি থাকা অবস্থায়। মধ্যরাত পর্যন্ত আলোকিত থাকে সমাধি মন্দিরগুলো।

২০০৫ সালে ঝালকাঠীতে জেএমবির বোমা হামলায় নিহত বিচারক জগন্নাথ পাঁড়ের সমাধি মন্দিরে দেখা গেছে তার স্ত্রী পল্লবী পাঁড়ে ও একমাত্র ছেলে শ্রেষ্ঠ পাঁড়েকে। মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে উত্তরন সাংস্কৃতিক সংগঠন ও অশ্বিনীর কুমার স্মৃতি সংসদ ,এ রকম হাজার হাজার স্বজন উপস্থিত হন বরিশাল মহাশ্মশানে। স্বজন ছাড়াও দর্শনার্থী হিসেবে ভিড় জমায় মুসলিম ধর্মসহ অন্যান্য ধর্মের মানুষ। স্বজনহারা সমাধিগুলোও দীপাবলির আলোকে আলোকিত হয়ে ওঠে।


বরিশাল মহাশ্মশান রক্ষা কমিটির সভাপতি মানিক মুখার্জি ভোরের আলোকে বলেন, ‘দীপাবলি উৎসবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পালন করা হয়েছে। যাদের স্বজন নেই এমন প্রায় এক হাজার সমাধি কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে আলোকিত করা হয়েছে।’

রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের বাবা সত্যানন্দ দাশ ও পিতামহ সর্বানন্দ দাশ, মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত,ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অগ্নিপুরুষ বিপ্লবী দেবেন ঘোষ, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নেত্রী মনোরমা বসু মাসি মা সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সমাধি আছে বরিশাল মহাশ্মশানে।

১৯২৭ সাল থেকে পালিত হয়ে আসছে শ্মশান দীপাবলি উৎসব। নতুন ও পুরনো মিলিয়ে বরিশাল মহাশ্মশানে ৬১ হাজারেরও বেশি সমাধি রয়েছে। এর মধ্যে ৫০ হাজারের অধিক পাকা, ১০ হাজার কাঁচা মঠ এবং ৮০০ মঠ রয়েছে যাদের স্বজন দেশে নেই।