নগরীতে হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়েনি

নগরীতে হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়েনি
বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবত সাদিক আব্দুল্লাহ গৃহকর (হোল্ডিং ট্যাক্স) নিয়ে উদ্বিগ্ন না হতে নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি নগরের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে সব নাগরিকদের গৃহকর দেওয়ার জন্য অনুরোধও জানান। গতকাল বুধবার দুপুর ১২টায় নগরভবনে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সম্মেলনে ওই আহ্বান জানান মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ। সংবাদ সম্মেলনে মেয়র বলেন, আমি গৃহকর বাড়াইনি। ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে তখনকার মেয়র ও পরিষদের নেওয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছিমাত্র। বর্তমানে যে নোটিশ পাঠানো হয়েছে সেটা ওই সময়ের হিসেব অনুযায়ী। তখন তারা কর উত্তোলনের নামে দুর্নীতি করেছেন। আমি দুর্নীতি করার সুযোগ দেবো না। নগরের গৃহকর মেয়র, কাউন্সিলর এবং সাধারণ নাগরিকরা সমান হারে দেবে। তারপরও গৃহকর নিয়ে নগরবাসীকে উদ্বিগ্ন না হতে আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, ৫২ হাজার গৃহকর গ্রহীতার কাছ থেকে মাত্র ৯ কোটি টাকা গৃহকর আদায় হতো। সঠিক নিয়মে কর আদায় করলে ৮০ থেকে ৯০ কোটি টাকা করা আদায় হতো। ওই পরিমাণ কর আদায় হলে সিটি করপোরেশন উন্নয়নের ধারা আরো গতিশীল হতো। তারপরও বলতে চাই, আমরা এখনো ট্যাক্স আদায়ের নোটিশ পাঠাইনি। অবশ্যই নগরবাসীকে কষ্টে রেখে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না। সবদিক বিবেচনায় নিয়েই কর আদায় করা হবে। তবে আগের মতো গৃহকর আদায়ে কোন ধরণের অনিয়ম এবং দুর্নীতি সহ্য করা হবে না। মেয়র বলেন কেবল নাগরিকদের কথা চিন্তা করে ২০১৮ সালে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে নতুন হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ের নির্দেশনা কার্যকরে কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। কারণ ওই পরিমাণ করা দেওয়ার ক্ষমাত বরিশাল নগরের বাসিন্দাদের নেই। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী কর আদায় হলে জনগণের উপর অনেক বড় চাপ পড়বে। তারপরও একটি মহল ট্যাক্স বাড়ানোর গুজব ছড়িয়ে নগর ভবনের সুনাম ক্ষুন্ন করার পায়তারা করছে বলে অভিযোগ করেন মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ। এ সময় মেয়র সাদিক বলেন, জনগণের টাকায় নগর ভবন পরিচালিত হয়। রাস্তা-ঘাট, ড্রেনেজ, ফুটপাত নির্মাণ, সড়ক বাতি স্থাপন, বর্জ্য অপসারণ ও পানির লাইন সম্প্রসারণ সব কিছুই হয় জনগণের টাকায়। জনগণ ট্যাক্স না দিলে নগর ভবন সেবা দেবে কিভাবে। তাই তিনি সকলকে হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের অনুরোধ করেন। সংবাদ সম্মেলনে সিটি করপোরেশনের সচিব ও রাজস্ব কর্মকর্তা মো. ইসরাইল হোসেন জানান, বরিশাল নগরীর সদর রোডের ডা. সোবাহান মার্কেটের চায়না প্যালেসের সংযুক্ত ভবন বাবদ আগে কর দিত ২৭ হাজার টাকা। কিন্তু ২০১৬ সালে সিটি করপোরেশনের নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই ভবনের একাংশের করা হয়েছে ১ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। একইভাবে নগরীর কাঠপট্টি সড়কের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খান সন্স গ্রুপের একটি বহুতল ভবনে এতদিন বার্ষিক কর আদায় হতো ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। অথচ ২০১৬ সালের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই ভবনের কর হওয়ার কথা ২৫ লাখ ৭২ হাজার টাকা। সিটি করপোরেশনের একজন সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী আগে বার্ষিক হোল্ডিং ট্যাক্স দিতেন মাত্র ২ হাজার টাকা। ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্ধারিত হয়েছে ১ লাখ ২ হাজার টাকা। একইভাবে সিটি করপোরেশনের সাবেক এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা আগে ট্যাক্স দিতেন ৫০৬ টাকা, তাঁর কর দেওয়ার কথা ৯৫ হাজার টাকা। সিটি করপোরেশনের একজন কাউন্সিলর আগে ট্যাক্স দিতেন মাত্র ১ হাজার ৩০০ টাকা, অথচ নতুন করে তার কর হবে ৬৪ হাজার টাকা। সিটি করপোরেশনের সচিব ও প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. ইসরাইল হোসেন আরো বলেন, নগরীতে আগে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ে নানা অনিয়ম ছিলো। আগের পরিষদের মেয়র আহসান হাবিব কামাল তার ইচ্ছেমতো ট্যাক্স কমিয়ে দিতেন। মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর নেতৃত্বাধীন পরিষদ দায়িত্ব নেওয়ার পর নগর ভবনের রাজস্ব বাড়ানোর নানা তৎপরতা শুরু করেন। এতে আগের পরিষদের ট্যাক্স আদায়ের নানা অনিয়ম ফাঁস হয়ে যায়। রাজস্ব কর্মকর্তারা আগের মেয়রদের দেওয়া সিদ্ধান্ত সেই সময় বাস্তবায়ন না করে কেন বর্তমান মেয়রের কাঁধে চাপিয়ে দিলেন? এমন প্রশ্নর উত্তরে মেয়র বলেন, সেই সময় দুর্নীতি হয়েছে। গ্রাহকদের কর কমিয়ে দিয়ে কোটি কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। আগের কর্মকর্তাদের ত্রুটি থাকলেও সেবিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র গাজী নঈমুল হোসেন লিটু, রফিকুল ইসলাম খোকন, আয়শা তৌহিদ লুনা, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খায়রুল হাসান। গণমাধ্যমের পক্ষে বক্তব্য রাখেন, মেট্রোপলিটন প্রেসক্লাবে সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, ইনডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার মুরাদ আহম্মেদ, এটিন বাংলার প্রতিনিধি হুমায়ুন কবির, মকবুল হোসেন, যুগান্তরের ব্যুরো প্রধান আকতার ফারুক শাহীন, সময় টেলিভিশনের ব্যুরো প্রধান ফিরদাউস সোহাগ, নিউজ ২৪-এর স্টাফ রিপোর্টার রাহাত খান, ডিবিসি নিউজের অপূর্ব অপু প্রমূখ।