পটুয়াখালীতে চুরির অভিযোগ এনে সুমন চৌকিদার (১৩) নামে এক মাদরাসার শিক্ষার্থীকে জোড়াবেত ও লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে গুরুত্বর আহত করেছে ওই মাদরাসার শিক্ষক। মূমূর্ষ অবস্থায় সুমন পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের সার্জারী বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছে। স্থানীয়দের সহায়তায় পুলিশ অভিযুক্ত শিক্ষককে আটক করে জেল হাজতে পাঠিয়েছেন। এঘটনায় সুমনের মা মোসাঃ রেহেনা বেগম বাদী হয়ে সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলার বিবরন ও সুমনের মা জানায়, অনেক কষ্টে সুমনকে হেতালিয়া বাঁধঘাট বায়তুল আহাদ আকন বাড়ী হাফিজিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি করেন। সেখানে সুমন নিয়মিত পাঠদান করে আসছেন। বুধবার ১৯ জুন ওই মাদ্রাসার শিক্ষক আহসান উল্লাহের দুই হাজার টাকা খোয়া যায়। ২০ জুন বৃহস্পতিবার সদর উপজেলার হেতালিয়া বায়তুল আহাদ আকন বাড়ি হাফিজি মাদ্রাসার শিক্ষক সুমনকে সন্দেহ করে তার রুমে ডেকে নিয়ে জোরা বেত দিয়ে বেত্রাঘাত করে। সুমনকে পেটানোর এক পর্যায় ব্যবহৃত বেতটি ভেঙ্গে গেলে শিক্ষক আহসান একটি লোহার রড এনে পুনরায় পেটানো শুরু করে। এসময় সুমন ডাক-চিৎকার শুরু করলে শিক্ষক অন্য ছাত্রদের গলা চেচিয়ে শব্দ করে পড়ার নির্দেশ দেয়। সুমনের কান্নার শব্দ ছরিয়ে যায়ার ভয়ে মুখে কসটেপ লাগিয়ে তৃতীয় দফা পেটায়। সুমন অচেতন হয়ে গেলে শিক্ষক সুমনকে কাপর দিয়ে হাত-পা বেধে একটি কক্ষে আটকিয়ে রেখে শিক্ষক আহসান তার মৃত দাদীর জানাযায় সদর উপজেলায় আউলিয়াপুরে অংশ নিতে যায়।
ঘটনার দেড় ঘন্টা পরে সুমনের সহপাঠি ও ফুফাতো ভাই আকাশ পালিয়ে সুমনের পরিবারকে জানায়। খবর পেয়ে সুমনের পরিবার সুমনকে উদ্ধার করতে আসলে শিক্ষকের বাধার মুখে পরে। এসময় স্থানীয়দের সহায়তায় সুমনকে উদ্ধার করে পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। সরেজমিনে দেখা গেছে সুমনের গোটা শরীরে আঘাতে চিহ্ন এবং রক্তাত্ব হয়ে আছে।
শিক্ষার্থী বাবা রহিম চৌকিদার জানান, আমি একজন অটো চালক। আমি অশিক্ষিত। আমার মৃত্যুর পরে যেন আমার লাশের পাশে বসে যেন কোরআন শরিফ তেলওয়াত করতে পারে সেই স্বপ্ন থেকে ছেলেকে দুই বছর আগে মাদ্রাসায় ভর্তি করা। ছেলে বর্তমানে কোরআন শরিফ নজরানা পড়ছে।
শিক্ষার্থী সুমনের মা রেহেনা বেগম জানান, সুমনের সহপাঠী সাব্বির হোসেন আমাদের এসে বিষয় জানালে আমারাা মাদ্রাসা যেয়ে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে পল¬ী চিকিৎসক মতিউর রহমানের কাছে নিয়ে গেলে তিনি বিষয়টি থানা পুলিশকে জানায়।
তিনি আরও জানান, পুলিশ তাৎক্ষনিক ভাবে হুজুরকে গ্রেফতার করে। ও আমার ছেলের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় পুলিশ ভ্যানে সদর হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ। এ ঘটনায় আমি নিজে বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছি। মামলা নং ৪৬।
পটুয়াখালী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের চিকিৎসক সেলিম মাতুব্বর জানান, মাদ্রাসা শিক্ষকের লোহার রডে ধারা নির্যাতনের ফলে শিক্ষার্থী সুমনের শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত জখম হয়েছে।
পটুয়াখালী সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মাদ্রাসা শিক্ষার্থী সুমন নির্যাতনের ঘটনায় মামলা হয়েছে। এঘটনায় শিক্ষক আহসান উল্লাহকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরন করা হয়েছে।