পদ্মা সেতু: বরিশাল থেকে রাজধানীতে ৪ ঘণ্টায়, ফেরি বীহিন কুয়াকাটা

পদ্মা সেতু নিয়ে বরিশাল তথা দক্ষিণজনপদের মানুষের উচ্ছ্বাসের শেষে নেই। উদ্বোধনের দিন যত কমছে মানুষের কৌতুহল তত বেড়েই চলছে। তবে পদ্মা সেতু দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য সম্ভাবনার নতুন দুয়ার বলে ধারণা করছেন অনেকেই। এর মাধ্যমে বরিশালে নতুন মুখ দেখবে ব্যবসা-বাণিজ্যে। বরিশাল-রাজধানীর সাথে যাতায়াত ব্যবস্থায় দক্ষিণাঞ্চল মানুষের দুর্ভোগ কমবে। দক্ষিণজনপদের সঙ্গে রাজধানীর হবে যোগাযোগ সহজ।
দূরত্ব কমেছে ৪ ঘন্টা
সাকুরা, হানিফ, ঈগল, গ্লোডেন লইন পরিবনের কাউন্টার ম্যানেজারের বক্তব্য মতে- বরিশাল থেকে মাওয়া সড়ক ও পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকার যাত্রাবাড়ীর দূরত্ব প্রায় ১৮৭ কিলোমিটার। এই সড়কে বরিশাল থেকে ঢাকাগামী মানুষের দূরত্ব কমে আসছে ৪ ঘন্টায়। সেতু চালু হলে মাওয়া হয়ে পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে ঢাকা-বরিশাল যাতায়াতে এসময় লাগবে সাড়ে ৩ ঘন্টা থেকে ৪ ঘন্টা। যা আগে লেগে যেত ৬-৮ ঘন্টা বা তারও বেশি।
কমবে দুর্ভোগ
দক্ষিণাঞ্চলবাসী রাজধানী ঢাকার উদ্দেশ্যে সড়ক পথে পাড়ি দিলে আরিচা-মাওয়া ফেরিঘাটে বিভিন্ন সময়ে দুর্ভোগে পরতে হতো। কোন উৎসব এলে এই দুর্ভোগের মাত্র ১০ গুণ বেড়ে যেতো। অন্যদিকে জরুরি চিকিৎসার জন্য রোগী নিয়ে দির্ঘ সময় ধরে বসে থাকতে হতো এ সব ফেরি ঘাটে। এছাড়া পণ্যবাহী যান মাওয়া ফেরিঘাটে বসে থাকত ২-৩ দিন। এসব দুভোর্গের ইতি টানতে যাচ্ছে পদ্মা সেতু।
ফেরি বিহীন রাজধানী থেকে সাগর কন্য কুয়াকাটা
পদ্মা সেতুর দ্বার উন্মোচনের দিকে তাকিয়ে আছেন পুরো দেশের মানুষ। ভ্রমণ পিপাসুদের আরো আকর্ষণ বাড়ছে কুয়াকাটার দিকে। সহজেই রাজধানী থেকে সাগরকন্য কুয়াকাটা পৌঁছাতে সময় লাগবে ৮ ঘন্টা। যা আগে ১২ ঘন্টারও বেশি সময় লেগে যেতো পৌঁছাতে। তাই এখন রাজধানীসহ আশেপাশের এলাকার মানুষ সহজেই সমুদ্রে ঘুরে বেড়ানোর ইচ্ছা মেটাতে পারবে বলে মনে করেন ভ্রমণপিপুসরা ও কুয়াকাটা রিসোট ও হোটেল ব্যবসায়ীরা।
ভাঙ্গা থেকে বরিশাল সিঙ্গেল লেন সড়কে বাড়বে জানযট
ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা মহাসড়কে যানবাহনের চলাচল আরো বেড়ে যাবে। এতে করে যানজটে ভোগান্তিতে পড়বে বরিশালের মানুষ। বরিশাল হয়ে সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটা ও পায়রা বন্দর পর্যন্ত বর্তমানে থাকা সড়কের দূরত্ব প্রায় ২৩৫ কিলোমিটার। দীর্ঘ এ সড়কের পুরোটাই প্রস্থে মাত্র ২৪ ফুট। পদ্মা সেতু চালু হলে ভীড় আরও বাড়বে সড়কে। তাই দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক প্রশস্ত করার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য দাবী জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তবে এই সিঙ্গেল লেন মহাসড়কে যানজটের পাশপাশি গতিও কমবে বলে আশঙ্কা করেছেন ট্রাকচালকরা।
রোড ট্রান্সপোর্ট অর্থরিটি (বিআরটিএ) সভায় বরিশালের সড়ক নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর পরই বরিশালের দিকে ছুটতে শুরু করবে অসংখ্য যানবাহন। অথচ বরিশালে বাইপাস কোন সড়ক নেই। এদিকে গত ২৮ মার্চ বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অর্থরিটি (বিআরটিএ) বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের এক সভায় পদ্মা সেতু চালু হলে বরিশালে সড়ক দুর্ঘটনা আরো বাড়তে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ কারা হয়েছে। তাই বিকল্প ভাবনা ভাবতে হবে বলে আশা করেন তারা। যাতে করে এই অঞ্চলে পদ্ম সেতু সুফল ভোগ করতে পারে জনগন। তাই সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করে বিষয়টির কথা চিন্তা করছেন বিআরটিএ, বরিশাল।
পদ্মা সেতু ইতিহাস এবং গৌরবের
পদ্মা সেতুর দার উন্মোচনের অপেক্ষায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষে মধ্যে খুশীর বন্যা বইছে। পদ্মা সেতু চালু হলে ফেরিঘাটে ভোগান্তি হবে না। সেতু চালু হলে রাজধানী ঢাকায় যাতায়াতে মানুষের সময় সাশ্রয় হবে। এতে মানুষ উপকৃত হবে। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে পথে-ঘাটে, পাড়া মহল্লায় সবখানে বইছে আনন্দ উচ্ছ্বাস। এই সেতু চালু হলে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে সঙ্গে সারা দেশে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। রাজধানী মুখী মানুষের সাথে যোগাযোগ স্থাপনে সময়ও বাঁচবে। গ্রাম অঞ্চল, পরা মহল্লার মানুষে বক্তব্য মতে, তারা কখনও ভাবেনি পদ্মার উপর দিয়ে সেতু বয়ে যাবে। তাই তারা মনে করেন এই সেতু বাংলাদেশের ইতিহাস এবং গৌরবের সেতু।
বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার যা বলেছেন
বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মো. আমিন-উল আহসান পদ্মা সেতু চালু হলে বরিশালের সড়কে গাড়ি চলাচল বাড়বে বলে আশঙ্কা করে বলেন, যানবাহনের চাপ সামলাতে ফোর লেন বাস্তবায়নের আগে বরিশাল-ভাঙ্গা মহাসড়কের সোল্ডার (দুই পাশ) ৩ ফুট করে প্রশস্ত করা হচ্ছে। এছাড়া মানুষ দ্রুততম সময়ে ঢাকা যাতায়াত করতে পারবে। কর্মসংস্থান বাড়বে এবং দক্ষিণাঞ্চল মানুষের দুর্ভোগ কমবে।