বরিশাল নগরের প্রাণকেন্দ্র সদর রোড, যার আধুনিক নামকরণ হয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক। ব্যস্ততম সড়কটিতে দিন দিন বাড়ছে যানবাহনের চাপ। এখন দিনের বেশিরভাগ সময়ই এ সড়ক জুড়ে থাকে অসহনীয় যানজট। শুধু দিনে নয়, বেশ কিছুদিন ধরে গভীর রাত পর্যন্ত সড়কটিতে যানজটের ভোগান্তিতে পড়ছেন নগরবাসী।
নগরবাসীর অভিযোগ, বর্তমানে ঈদের কারণে যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে গেছে। সেই সঙ্গে যানযটের আর এক কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে পাশর্^ সড়কের সঙ্গে মূল সড়কের যোগাযোগ বন্ধ হওয়া। বিশেষ করে সদর রোডে নতুন ডিবাইডার স্থাপনের ক্ষেত্রে সব পাশর্^ সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে দীর্ঘপথ ঘুড়ে যানবাহন নিয়ে ইউটার্ন করতে হচ্ছে। ফলে অতিমাত্রায় যানযট দেখা দিয়েছে। পাশর্^ সড়কের সঙ্গে লিংক থাকলে সদর রোডের যানযট কমানো সম্ভব হবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বগুড়া রোড থেকে সদর রোডে বের হয়ে সোহেল চত্বরের দিকে যাওয়ার পাশর্^ সড়ক বন্ধ করা হয়েছে। এখন যাত্রীদের বিবির পুকুরের পশ্চিম পাড় হয়ে গির্জা মহল্লা দিয়ে সোহেল চত্বরে যেতে হচ্ছে। সরকারি মহিলা কলেজ এবং বরিশাল প্রেসক্লাব থেকে সদর রোড হয়ে গির্জা মহল্লা যেতে চাইলে তাদের সদর রোডের অশি^নী কুমার হলের সামনে থেকে ইউটার্ন নিয়ে যেতে হচ্ছে। একইভাবে সদর রোড হয়ে কাটপট্টি সড়কে যেতে চাইলে তাকে লাইন রোডের মুখ থেকে ইউটার্ন করে ফিরতে হচ্ছে। এ ছড়া ফকিরবাড়ি রোড, প্যারারা রোড, অনামি লেনসহ সকল পাশর্^ সড়ক দিয়ে বাক নেওয়ার ব্যবস্থা বন্ধ করা হয়েছে। এসব কারণেই নগরের মূল এলাকাগুলোতে যানযট লেগে থাকে।
যদিও যানজট নিরসন ও স্বাচ্ছন্দ্যে ঈদের কেনাকাটায় নগরবাসীর জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি)। এর মধ্যে, মেয়র সেরনিয়াবত সাদিক আবদুল্লাহর নির্দেশে নগরের একে স্কুল প্রাঙ্গণ, সিটি কলেজ মাঠসহ নির্ধারিত স্থানে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা, কাকলীর মোড়ের আগ থেকে জেলখানার মোড় পর্যন্ত বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়কের (সদর রোড) মধ্যে প্রযুক্তিনির্ভর গ্রিলের ডিভাইডার বসানো উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া, আনসার সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় ট্রাফিক ব্যবস্থাকে সচল রাখারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এদিকে, বিসিসি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা চালুর পর থেকে ট্রাফিক পুলিশ সদর রোড, গীর্জা মহল্লা, চকবাজার ও ফলপট্টি এলাকায় সড়কের পাশে কাউকেই গাড়ি রাখতে দিচ্ছে না। এমনকি, দুই চাকার বাহন মোটরসাইকেলও নয়। তবে, এতো কিছুর পরও সদর রোড অর্থাৎ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়কে যানজট লেগেই আছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, আগে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা ও বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সদর রোডে যান চলাচলে ধীরগতি থাকলেও যানজট খুব বেশি হতো না। কিন্তু, বর্তমানে কোনো নির্ধারিত সময় নেই, দিন রাত সম সময়ই যানজট লেগে আছে। কখনো কখনো এর মাত্রা এতোটাই বেশি থাকে যে, সেটি বগুড়া রোড, হেমায়েত উদ্দিন রোড, ফজলুল হক অ্যাভিনিউ, ঈশ্বরবসু রোড, চকবাজার, ফলপট্টি, কাটপট্টি রোড, ফকিরবাড়ি রোড, লাইন রোড, কালিবাড়ি রোড ও হাসপাতাল রোড পর্যন্ত গিয়ে ঠেকে।
নগরবাসীর মতে, বরিশাল সদর রোডে অসংখ্য বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের অবস্থান ছাড়াও শহরের পশ্চিম ও পশ্চিম-দক্ষিণ অংশ থেকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, লঞ্চঘাটসহ সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আসতে এ রোড ব্যবহার করতে হয়। এ ছাড়া, কাকলীর মোড় থেকে জেলখানার মোড় পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটারের মতো সড়কে তিনটি অঘোষিত থ্রি-হুইলারের স্ট্যান্ড, গণপরিবহনগুলো যেখানে-সেখানে থামিয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানোর কারণে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। পাশাপাশি, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও বিভিন্ন রুটের থ্রি-হুইলারগুলোও শহরে যানবাহনের চাপ বাড়াচ্ছে।
পথচারীরা জানান, মাহিন্দ্রা, ব্যাটারিচালিত হলুদ অটো, গ্যাসচালিত নীল অটো ও সিএনজি অটোরিকশার চালকদের অদক্ষতায় সদর রোডে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, নগরের সদর রোডে দিনের বেলা ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট লেগেই থাকছে। তা সবচেয়ে প্রকট আকার ধারণ করে বিকেলে ও সন্ধ্যার পরে। যদিও, ঈদবাজার শেষ হলে যানজট কমে আসবে বলে আশা সংশি¬ষ্টদের।
কালিজিরা এলাকা থেকে ঈদের কেনাকাটা করতে আসা গৃহিণী রাওজাতুল জান্নাহ বলেন, ছেলেমেয়েদের নিয়ে চকবাজার এসেছি। কাকলীর মোড় হয়ে চকবাজারে আসতেই আধাঘণ্টা সময় লেগে গেছে। এতো জ্যাম আগে কখনো দেখিনি।
যানজটের বিষয়টি স্বীকার করেন বরিশাল মেট্রোপলিটন ট্রাফিক পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি) খাইরুল আলম জানান, বেশিরভাগ সময় বিকেলে যানজট লাগলেও ট্রাফিক পুলিশের চেষ্টায় তা শিগগিরই স্বভাবিক হয়ে যায়। তিনি বলেন, ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে যানজট নিরসনে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। অবৈধ যানবাহন যেন নগরীতে প্রবেশ করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে, সে বিষয়ে আমরা তৎপর আছি।
বিসিসি মেয়র সেরনিয়াবত সাদিক আবদুল্লাহ জানান, নগরের বিভিন্ন সড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নির্দেশনামূলক সাইনবোর্ড বসানো হচ্ছে। সেখানে কোন সড়ক দিয়ে কোথায় যেতে হবে, তা লেখা রয়েছে। এসব নির্দেশনা মেনে যানবাহন চালালে কেউ অযথা শহরের মধ্যে ঘুরপাক খাবেন না। আবার, সদর রোডে প্রবেশ না করেও বান্দরোড দিয়ে লঞ্চঘাটসহ বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া যাবে। সেক্ষেত্রে, নির্দিষ্ট কোনো সড়কের ওপর বাড়তি চাপ পড়বে না।
What's Your Reaction?






