সারা দুনিয়ায় উৎসব উপলক্ষে যানবাহন, বাজার স্থিতিশীল থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের চিত্র ভিন্ন। ১২ মাসের লাভ পুলিশে নিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন ব্যবসায়ীরা। এক মাস কিংবা ১৫ দিনেই মূলধনসহ পুরো লাভ তুলে নেওয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠেন তারা। এই প্রতিযোগিতা ছড়িয়ে পড়ে তৃণর্মল পর্যন্ত। আর এই প্রতিযোগিতায় পিষ্ট হন সাধারণ নাগরিক। অসহ্য যন্ত্রণা হলেও প্রতিবাদ জানানোর সুযোগ থাকে না তাদের। অনেক সময় প্রতিবাদ করতে গিয়ে নাজেহালও হতে হয়।
রোজা এলে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষপত্রের দাম বাড়ে। কাচা বাজারসহ মাছ মাংসের বাজারে অকেটা আগুন লাগার অবস্থা হয়। বাস, লঞ্চের ভাড়া বাড়ে। ঈদ বাজারে পোশাকের দাম বাড়ে। বাংলাদেশে ঈদসহ সকল উৎসবে ক্রতা এবং ভোক্তারা জিম্মি হয়ে পড়েন। ঈদে ১০০ টাকার পোশাক কিনতে হবে ১০০০ টাকায়। ১০০০ টাকার পোশাক কিনতে হবে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকায়। এই দৃশ্য এখন ক্রেতাসহ আমাদের সবার সহ্য হয়ে গেছে।
একটা মজার ব্যাপার হচ্ছে, রোজা, ঈদ, কোরবানীর আগে আগে আমাদের প্রশাসন যন্ত্র অনেকটা সরব হয়ে ওঠেন। এই সময় মানুষের মুখে মুখে থাকে ভ্রাম্যমান আদালত, জরিমানা, কারাদ-সহ নানা শাস্তি। জেলা প্রশাসনসহ অন্যসব সরকারি দপ্তরের কার্মকা- দেখে মনে হয়, সারা বছর আামাদের দেশের ব্যবসায়ী, লঞ্চ, বাস, স্টীমার মালিকরা ফেরেস্তা বনে যান। ১১মাস তারা কোন অনিয়ম করেন না।
রোজা ও ঈদের আগে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পরিচালিত ভ্রাম্যমান আদালতের কর্মকা-ে জনমনে এক ধরণের স্বস্তি দেখা যায়। বিশেষ করে এবছর পোশাক বাজারের ক্রেতা জিম্মির ঘটনায় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন ক্রেতা ও সাধারণ মানুষ। কারণ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব, কাচা বাজারসহ অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা হলেও পোশাক বাজারে এটাই বোধ হয় প্রথম অভিযান।
পোশাক বাজারে এই ধরণের অভিযানে একদিকে যেমন আাশা জাগায় তেমনি ঈদের মাত্র দুই-তিন দিন আগে ওই অভিযানের কারণে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। ক্রেতারা প্রশাসনকে সাদুবাদ জানিয়ে এই ধরণের অভিযান অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান। তবে রোজা শুরু কিংবা মাঝামাঝি সময় থেকে পরিচালিত হলে ক্রেতারা লাভবান হতে পারতো বলে মন্তব্য তাদের। শেষ দিকে হওয়ায় কেনাকাটায় এক ধরণের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বিক্রেতারা তাদের পক্ষ অবলম্বন করলেও সেটা মেনে নেয়নি সাধারণ ক্রেতারা।
আমারা প্রশাসনের এই উদ্যোগকে সাদুবাদ জানাতে চাই। সেই সঙ্গে বলতে চাই, জেলা প্রশাসনের এই উদ্যোগ যেন সারা বছর অব্যাহত থাকে। আর সকল উৎসব ও পার্বণ শুরু হওয়ার বেশ কিছুদিন আগ থেকে যেন ব্যবসায়ীদের সতর্ক করতে এই অভিযান চালানো হয়। তাহলে ক্রেতারা জিম্মি হবে না। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরাও বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখবেন। আমাদের ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফা করার চিন্তু দূর হোক। যাতে আগামীতে আর ভ্রাম্যমান আাদালত নামের অভিযান না চালাতে হয়। কেবল ঈদ বাজার নয়, সব বাজারে ক্রেতা জিম্মি বন্ধ করতে উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা প্রশাসনের এমন উদ্যোগের সঙ্গে থেকে সহযোগী হাতে চাই।