বরিশালে ইলিশে ভরপুর, কমেছে দাম

বরিশালের ইলিশ মোকামে স্থানীয় ও অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর কোন ইলিশ নেই মোকামে। সবই সামুদ্রিক ইলিশ। প্রায় ৪ মাস পর সামুদ্রিক ইলিশে ভরপুর। ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে গভীর সমুদ্রে মাছ শিকার করতে যাওয়া ট্রলারগুলো মোকামে ফিরে আসায় চলতি মৌসুমে প্রথমবারের মতো কর্মচাঞ্চল্য ফিরেছে বরিশাল ইলিশ মোকামে। এতে খুশি জেলে ও মৎস্যজীবীরা। বাজারে ইলিশের দামও অনেকটা কম। আগামী দিনে সমুদ্রে আরও ইলিশ আহরিত হবে বলে আশা করেন মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা।
গত বৃহস্পতিবার বরিশাল পোর্ট রোড মোকামে এসেছে ৬টি মাছ ধরা ট্রলার। প্রতিটি ট্রলারে ছিলো বিভিন্ন সাইজের ১০০ থেকে ১৫০ মন ইলিশ।
অভ্যন্তরীণ নদ-নদী থেকে এবং সমুদ্র থেকে সারা বছর কম বেশি ইলিশ আহরিত হয়। তবে আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্র এই ৩ মাস ইলিশের প্রধান মৌসুম। গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে মাছ ধরতে সমুদ্রে যাওয়া ট্রলারগুলো বৈরি আবহাওয়ার কারণে মাঝ পথ থেকেই ফিরে এসেছিলো। আবহাওয়া পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ার পর গভীর সমুদ্রে মাছ শিকার করতে যাওয়া ট্রলারগুলো ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ নিয়ে ফিরেছে। সমুদ্রে যাওয়ার ১২ থেকে ১৫ দিন পর ট্রলার বোঝাই ইলিশ নিয়ে উপকূলে ফিরে এসেছে বেশিরভাগ জেলে।
গতকাল শুক্রবারও ৪টি সামুদ্রিক ট্রলার এসেছে পোর্ট রোড মোকামে। এছাড়া পটুয়াখালীর মহিপুর মোকাম থেকেও ট্রাকে ট্রাকে ইলিশ এসেছে বরিশালে। প্রায় ৮০০ মন ইলিশ এসেছে পোর্ট রোড মোকামে। দুই দিন ধরে সামুদ্রিক ইলিশে সয়লাব পোর্ট রোড মোকাম। ইলিশ বিকিকিনিতে ব্যস্ত আড়তদার-শ্রমিকরা। কলকাকুলিতে মুখরিত পোর্ট রোড মোকাম।
সমুদ্রে আশাতীত মাছ পাওয়ায় খুশি জেলেরা। আহরিত মাছ বিক্রি করে আবারও গভীর সমুদ্রে মাছ শিকার করতে যাওয়ার কথা বলেন সামুদ্র্রিক জেলে মো. গফুর মল্লিক ও মো. রফিকুল ইসলাম। এভাবে সমুদ্রে মাছ পাওয়া গেলে পরিবার-পরিজন নিয়ে ভালোভাবেই দিন কাটানোর আশা তাদের।
বরিশাল পোর্ট রোডের ইলিশ ব্যবসায়ী কাঞ্চন সাহা বলেন, কেবল ইলিশ মৌসুম শুরু হয়েছে। গত দুই দিনে অনেক সামুদ্রিক ইলিশ এসেছে। সমুদ্রের ইলিশ গড়পরতা ২২ থেকে ২৩ হাজার টাকা মন দরে বিক্রি হয়েছে। আগামী দিনে সমুদ্র থেকে আরও ইলিশ আহরিত হবে এবং দাম আরও কমবে বলে।
ইলিশ আড়তদার মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ৪ মাস পর বরিশাল মোকামে প্রথম অনেক ইলিশ এসেছে। আগে স্থানীয় বিভিন্ন নদ-নদীর ৪০ থেকে ৫০ মন ইলিশ আসতো মোকামে। গত দুই দিনে প্রায় ২ হাজার মন ইলিশ এসেছে। সামনের দিনে ইলিশ আহরণ বাড়বে।
আড়তদার সজল দাস বলেন, সমুদ্রে ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ ধরা পড়ায় জেলে, আড়তদার ও মৎস্য শ্রমিক সবাই খুশী। বরিশাল মোকামে অনেক দিনের মাছের আকাল দূর হলো। চলতি মৌসুমে প্রথমবারের মতো ইলিশে সয়লাব হয়েছে বরিশাল মোকাম। এভাবে মাছ ধরা পড়লে ইলিশ মাছ সর্বসাধারণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে চলে আসবে।
বরিশাল মৎস্য দপ্তরের কর্মকর্তা (ইলিশ) ড. বিমল চন্দ্র দাস বলেন, মৌসুমের শুরুর দিকে জেলেদের জালে মাছ ধরা না পড়ায় কিছুটা চিন্তিত ছিলো মৎস্য বিভাগ। দেরীতে হলেও বরিশাল মোকামে ইলিশের খড়া কেটেছে। আগামী দিনগুলোতে সমুদ্রে এবং স্থানীয় নদ-নদীতে আরও ইলিশ আহরিত হবে।
সামুদ্রিক বিভিন্ন সাইজের ইলিশ গড়ে ২২ থেকে ২৩ হাজার টাকা মন দরে বিক্রি হলেও স্থানীয় নদী-নদী থেকে আহরিত কিছু ইলিশ চড়া দামে বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছেন পোর্ট রোডের খুচরা মাছ ব্যবসায়ী মো. হারুন।