বরিশালে বিনোদন কেন্দ্রে ভীড়, বিদেশ ফেরতদের নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রশাসন

বিদেশ ফেরত নাগরিকদের নিয়ে চিন্তিত প্রশাসন। কিন্তু দেশে থাকা নাগরিকদের যথেচ্চার চলাফেরা বন্ধ হচ্ছে না। দেশের বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ভীড় কমছে না। বরং আগের তুলনায় বাড়ছে। বিদেশ ফেরত বাঙালিদের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে নানা উদ্যোগ চলছে। তবে বিনোদনকেন্দ্রগুলোর অবস্থা পরিবর্তনে তেমন উদ্যোগ নেই।
চীনের উহানে আক্রান্ত করোনার প্রভাব সারা দুনিয়ায়। বাংলাদেশেও এর আঁচ লাগতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যে নাগরিকেদের সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিয়েছে। গত ১৬ মার্চ মন্ত্রীসভার বৈঠক শেষে বন্ধ করা হয়েছে স্কুল কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। করোনা ঠেকাতে যে কোন ধরণের জমায়েত না করার নির্দেশনাও দেওয়া হচ্ছে। তারপরও জমায়েত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। তবে এই জমায়েত সবচেয়ে বেশি হচ্ছে আমাদের দেশের বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে। পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজার, কুয়াকাটা, পতেঙ্গায় এখন মানুষের উপচেপড়া ভীড়। সেসব স্থানের হোটেলের কক্ষ খালি পাওয়া যাচ্ছে না। ছুটি পেয়ে বেশিরভাগ মানুষ বিনোদনকেন্দ্রে ভীড় জমাচ্ছেন।
বরিশালে করোনা মোকাবেলায় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালিত হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের নিয়ে কোচিং করানোর দায়ে একজনকে জেলে পাঠানো হয়েছে। ভীড় এড়াতে ১৭ মার্চের অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। একই সময় বরিশালের বঙ্গবন্ধু উদ্যান, ত্রিশ গোডাউন এলাকার কীর্তনখোলার পাড়, প্লানেট ওয়াল্ড শিশু পার্ক, নগরের প্রাণকেন্দ্র বিবির পুকুর পাড়ের ভীড় কমছে না। করোনা কি কেবল স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যায়, কোচিং সেন্টারে ছড়াবে? বিনোদনকেন্দ্রগুলো কি করোনা মুক্ত এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে?
বৃহষ্পতিবার নগরের বিবির পুকুর এলাকা, বঙ্গবন্ধু উদ্যান, ত্রিশগোডাউন এলাকা, মুক্তিযোদ্ধা পার্কে, শিশু পার্কে অনেক মানুষের ভীড় চোখে পড়েছে। এসব স্থানে সকলকে নির্বকারভাবে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে। এই জমায়েত কিংবা ভীড় কমাতে কোন বাধা নেই মনে হচ্ছে।
করোনায় করণীয় এবং সতর্কতার জন্য বৃহষ্পতিবার সকালে বিভাগীয় কমিশনার এবং রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ের উদ্যোগে বিভাগের সব জেলা উপজেলা এবং ইউনিয়ন পরিষদের কর্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই কনফারেন্স থেকে জানানো হয়, বরিশাল বিভাগের ১০ হাজার ৩০৩জন বিদেশ থেকে আসা নাগরিকের মধ্যে মাত্র ৪০৭ জনের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা হয়েছে। বাকিদের হোম করেন্টাইনে নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পুলিশের বিশেষ শাখার তালিকা অনুযায়ী সবাইকে খুঁজে বের করে কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
গোটা দেশ যখন করোনা নিয়ে উদ্বিগ্ন, সেই সময় বিনোদনকেন্দ্রগুলো উন্মুক্ত রাখার যৌক্তিকতা কি? স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় খোলা রাখলে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকরা করোনায় আক্রান্ত হতে পারে। যা ছড়িয়ে পড়তে পারে সর্বত্র। সেই আশঙ্কায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু বন্ধ পেয়ে সবাই যদি বিনোদনকেন্দ্রে ভীড় জমায় তাহলে আর রক্ষাকবচ থাকলো কই? বিদেশ ফেরত বাঙালিদের নিয়ে যেমন উদ্বিগ্ন, তেমনি যারা দেশে আছেন তাদের চলাচলেও নিয়ন্ত্রণ থাকা জরুরী কি না? যদি তাই হয়, তাহলে বিনোদনকেন্দ্র নিয়ন্ত্রণে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
এক্ষেত্রে কেবল প্রশাসন নয়, আমাদের প্রত্যেককে যার যার অবস্থান থেকে সতর্ক থাকা দরকার। বিনোদন কেন্দ্রসহ সকল জনবহুল এলাকা নিজেরাই এড়িয়ে চলতে হবে। আমরা হয়তো অনেকেই বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দিয়ে দেখছি না। করোনা মোকাবেলা আমাদের অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে।