বরিশাল নগরীর কাউনিয়া থানা ঘেরাও,আ’লীগ নেতার মুক্তি

বরিশাল নগরীর কাউনিয়া থানা ঘেরাও,আ’লীগ নেতার মুক্তি

বরিশাল নগরীর বিসিক শিল্প এলাকায় ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহাগ হাওলাদার কে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করার জের ধরে নগরীর নথুল্লাবাদ এবং রূপাতলী বাস টার্মিনাল অবরোধ করে সড়ক যোগাযোগ অচল করে দিয়েছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী-সমর্থক। একই সঙ্গে তারা নগরীর কাউনিয়া থানা ঘেরাও করে।

গতকাল বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তারা উভয় টার্মিনাল এলাকা অবরোধ করলে বরিশাল থেকে ঢাকা-কুয়াকাটা-ঝালকাঠী-বরগুনা-ভোলা-পিরোজপুর ও পটুয়াখালীর সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা সড়ক অবরোধ করায় পুলিশ প্রশাসন কিংবা মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো অনেকটা নিরুপায় হয়ে পড়ে। মহাসড়ক বন্ধ থাকায় উভয় টার্মিনালের দ্ইু পাশে কয়েক কিলোমিটার দির্ঘ যানবাহনের লাইন পড়ে যায়। 

পুলিশ জানায়, গতকাল বুধবার দুপুরে সোহাগ নামে এক যুবককে বিসিক শিল্প এলাকায় ফরচুন সু কারখানার মধ্যে আটকে রাখা হয়। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। সন্ধ্যায় ক্ষমতাসীন দলের একদল নেতাকর্মী থানায় অবস্থান নিয়ে সোহাগের মুক্তি দাবি করে। একই সঙ্গে তারা শিল্প মালিক মিজানুর রহমানকে গ্রেপ্তারের দাবি জানায়। পুলিশ এতে রাজী না হওয়ায় সন্ধ্যার দিকে নগরীর নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এবং রূপাতলী বাস টার্মিনাল অবরোধ করে সড়ক যোগাযোগ অচল করে দেয় তারা।

সোহাগ পুলিশের কাছে দাবি করেছে, সে ফরচুন সু প্রতিষ্ঠানের কাছে টাকা পেত। পাওনা টাকা চাইতে গেলে তাকে আটকে রেখে মারধর করে মিথ্যা অভিযোগে থানায় সোপর্দ করে। 

তবে ফরচুন সু মালিক মো. মিজানুর রহমান জানান, তার কারখানার এক নারী শ্রমিককে বিসিক এলাকার মধ্যে উত্যক্ত করে সোহাগ। তিনি গাড়িতে কারখানার দিকে যাওয়ার সময় এ ঘটনা দেখে সোহাগকে আটক করে কাউনিয়া থানা পুলিশে সোপর্দ করেন। 

বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. ইউনুস জানান, মহাসড়ক অবরোধ করে সড়ক যোগাযোগ অচল করে দেয়ার সঙ্গে বাস মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলোর কোন সম্পৃক্ততা নেই। 

তবে নগরীর রূপাতলী বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওছার হোসেন শিপন জানান, নগরীর বিসিক শিল্প নগরীর এলাকায় এক আওয়ামী লীগ কর্মীকে এক শিল্প মালিক মারধর করার প্রতিবাদে মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা নিরব হোসেন টুটুলের নির্দেশে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রূপাতলী বাস টার্মিনালের সকল বাস বন্ধ করে দেয়া হয়।
এদিকে, টেস্পু, মাহিন্দ্রা ও থ্রি হুইলার মালিক শ্রমিক সমিতির সভাপতি কামাল হোসেন মোল্লা লিটন জানান, মামলা না নেওয়া এবং মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ অব্যাহত থাকবে।

বরিশাল জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ফরিদ হোসেন জানান, তাদের শ্রমিকের উপর নির্যাতন করা হয়েছে। মারধরে ওই শ্রমিক আহত হয়েছে। এই ঘটনার আইনানুগ বিচার না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন অব্যাহত রাখবে।

এদিকে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ যাত্রীরা। বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা করা যাত্রীরা আটকা পড়েছেন বাস টার্মিনালে। সড়কের দুপাশে গাড়র দীর্ঘ লাইন দিয়ে গাড়ি রাখা হয়েছে।

বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদ বাবু বলেন, বিসিকের ফুরচুন সু মালিক মিজানুর রহমান অস্ত্র ঠেকিয়ে ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহাগকে অপহরণ করে তার কারখানায় নিয়ে মারধর করে। এ ঘটনায় মিজানের বিরুদ্ধে সন্ধ্যায় কাউনিয়া থানায় অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের হয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারের দাবিতে বরিশালের সকল বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান জানান, বিসিক শিল্প নগরী এলাকা থেকে আটক এক যুবকের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছিল। সন্ধ্যার দিকে নগরীর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও রূপাতলী বাস টার্মিনাল অবরোধ করে সড়ক যোগাযোগ অচল করে দেয়ায় পরিস্থিতি সামাল দিতে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছেন।