বরিশাল বধ্যভূমির মর্যাদা রক্ষায় নেই বিশেষ কোন উদ্যোগ

বরিশাল বধ্যভূমির মর্যাদা রক্ষায় নেই বিশেষ কোন উদ্যোগ

বরিশালের কীর্তখোলার পাড় ঘেঁষে তার আপন মহিমায় স্বগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ বধ্যভূমি। এই সেই বধ্যভূমি যেখানে রয়েছে মা-বাবা, ভাই-বোন, স্বজনদের সহ অসংখ্য মানুষের স্মৃতি চিহ্ন। পাকিস্তানি বাহিনী বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ ধরে নিয়ে এখানেই হত্যা করে মাটিচাপা দিয়ে রাখা হতো। বরিশালের মূল গণকবর ও বধ্যভূমি এলাকা এটাই। যেই পরিচয় এই শহরের নতুন প্রজন্মের কাছে এখনোও অনেক অংশেই অজানা। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজরিত বধ্যভূমি, গৌরব ও অহংকারে মূর্ত প্রতীক। ওই অর্জন ম্লান হচ্ছে প্রতিদিন। 

জুতা পায়ে বার বার ভুল করে পদদলিত করা হচ্ছে বধ্যভূমির মর্যাদা। এমন সংবাদ পত্রপত্রিকায় ছাপা হওয়ার পর তখনকার দ্বায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসন অজিয়র রহমানের নেতৃত্বে ২টি সচেতনতা মূলক সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়। সেখানেই থেমে আছে এর উন্নয়ন। অথচ বরিশাল ত্রিশগোন কীতর্নখোলর নদীর পাড়কে ইতিমধ্যে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ঘোষনা করা হয়েছে। সেই লক্ষ্যে স্মৃতিস্তম্ভটির উন্নয়ন নেই বলে চলে। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের যাওয়া-আসা ওই স্থানে। ঘুরতে আসা দর্শনার্থীই এদেশের লক্ষ মানুষের কষ্টার্জিত স্মৃতিকে কলুষিত করে চলেছে প্রতিদিন। 

স্থানীয় বাসিন্দা সজল ঘরামী ভোরের আলোকে বলেন, ‘এই স্মৃতিস্তম্ভের সম্মান রক্ষা কারা আমাদের দ্বায়িত্ব। নিজ নিজ স্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে। তবে এই স্থানটি আরো সুন্দর ভাবে সাজিয়ে তুলতে হবে। দেখলে যেন আমাদের মনে হয় এটা সম্মানীয় স্থান। এখানে শুধু দুটি ব্যানার আছে যা অনেকটা পুরান হয়ে গেছে চোখে পরার মত না। ঘুরতে আসলে কেউ ব্যানার পরে না। এখানে জুতা পায়ে বার বার পদদলিত হচ্ছে এই গৌরবের স্থানটি। প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষন করছি।’

ফাইল ছবি

স্থানীয় চায়ের দোকানদার সেলিম ভোরের আলোকে বলেন, ‘এই জায়গায় মুক্তিযোদ্ধাদের গনকবর দেওয়া হইছে। এই কথা অনেকেই যানে না। আমাগো নগর পিতা টর্চার সেল যে ভাবে সাজাইছে তেমন কইরা এইটা হোক।’

ঘুরতে আসা দর্শনার্থী মো: রাজু বলেন, ‘এই স্মৃতিস্তম্ভ উপর ধুলুর আস্তরণ পরে আছে। এখানে এটা সম্পের্কে বিস্তারিত ভালো ভাবে কিছু লেখা নেই। আমরা কিভাবে বুঝবো যে এটি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ। আমার মনে হয় এখনে ঝাড়– দেয়ারও লোক নেই। কেন এভাবে অযতেœ পরে থাকবে স্মৃতিস্তম্ভ।?’

পাকিস্তানি বাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ এপ্রিল বরিশালে প্রবেশ করে। তরা পর নির্বিচারে শুরু করে নরকীয় হত্যাকান্ড। বরিশালে বর্তমান (পানি উন্নয়ন বোর্ড) খাল পারে ঘাঁটি স্থাপন করে তৈরি করে নির্যাতনকক্ষ। এখানে অসংখ্য মানুষকে নির্মমভাবে নির্যাতনের পর হত্যা করে খালে ভাসিয়ে দেওয়া হতো। সেই স্মৃতি রাক্ষায় ২০২০ সালে বরিশাল সিটি করপোরেশনের অর্থায়নে প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বধ্যভূমি সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা হয়েছে ওয়াকওয়ে, স্মৃতিস্তম্ভ, বসার স্থান, প্লাজা, স্বজনদের স্মৃতিকথার গ্যালারি ও নির্যাতনের আবহ সৃষ্টিকারী সাউন্ড সিস্টেম। সংরক্ষণ করা হয়েছে দুটি টর্চার সেল ও একটি বাঙ্কার। এই ওয়াপদা কলোনির মতো করে বধ্যভূমিরও রক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়নে দাবী জানিয়েছে সুশিল সমাজ।