বোতল থেকে দৈত্যকে তিনি নিজেই টেনে বের করেছিলেন। রোববারের (২১ জুলাই) বারবেলায় তাকে আবার বোতলে ঢোকানোর চেষ্টা করলেন। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার দলীয় কর্মীদের নিদান দিয়েছেন, কাটমানির পাল্টা বিজেপির ব্ল্যাক মানির বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
লোকসভা ভোটের ফলাফল ঘোষণার পর থেকে বঙ্গ-রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোচিত শব্দ সম্ভবত ‘কাটমানি’। সৌজন্য : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোটের ফল খারাপ হওয়ায় দলের এক প্রকাশ্য সভায় তিনি স্বীকার করে নিয়েছিলেন দলের জনপ্রতিনিধিদের কেউ কেউ কাটমানি নিয়েছেন। অধস্তন কর্মীদের কাটমানি ফিরিয়ে দেয়ার নির্দেশও দিয়েছিলেন দলনেত্রী। উদ্দেশ্য ছিল, দলের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনা।
মমতার সেই সৎ উদ্দেশ্যে যেন আগুনে ঘি পড়ে। একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগে জর্জরিত হয়ে যায় শাসকদলই। মমতার সেই ঘোষণার পর থেকে বাংলার রাজনীতির ছবিটা দাঁড়ায়, প্রায় প্রতিদিন রাজ্যের কোনো না কোনো প্রান্তে শাসক দলের বিভিন্ন স্তরের জনপ্রতিনিধিদের ঘিরে ধরে কাটমানির টাকা ফেরত চাইছেন অভিযোগকারীরা। পরিস্থিতি এমনই যেন কাটমানি শব্দটিই আতঙ্কের সৃষ্টি করছে তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে। এই আতঙ্ক কাটাতেই এদিন ধর্মতলায় ২১ জুলাইয়ের শহীদ স্মরণ মঞ্চ থেকে পাল্টা আন্দোলনের বার্তা দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কাটমানির পাল্টা ব্ল্যাকমানি।
তৃণমূল নেত্রীর অভিযোগ, ‘বিজেপির ডাকাতরা তৃণমূলের কাছে কাটমানি ফেরত চাইছে। আমাদের কাছে কাটমানি চাওয়ার আগে নিজেদের ব্ল্যাকমানির হিসেব দিক। ২৬ হাজার কোটি টাকার ব্ল্যাকমানির হিসেব দাও।’ মমতার আরো অভিযোগ, নির্বাচনে কালো টাকা খরচ করেছে বিজেপি। কলকাতায় বিজেপি নেতাদের একাধিক ফ্ল্যাট আছে। কেন্দ্রের উজালা প্রকল্প, পেট্রল পাম্প ও গ্যাসের লাইসেন্স পাইয়ে দিতে বিজেপি টাকা নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী। এই টাকাই ফেরত চাইতে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
ভারতে ঘুষ বা কাটমানি খাওয়া প্রায় রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বালাই বাহুল্য, এক্ষেত্রে শাসক দলই অভিযুক্ত। ঘুষ-কান্ডে ধারা পড়ার ঘটনাও অনেক। কিন্তু কোনো দলের নেতা বা নেত্রী নিজেই দলের নেতাকর্মীরা ঘুষ কচ্ছেন বলে প্রকাশ্যে জানাচ্ছেন, এই ঘটনা বিরল। মমতা তা করতে গিয়ে প্যান্ডোরার বাক্স খুলে দিয়েছেন। ঘটনা হল, পশ্চিমবঙ্গে এখন কোনো কাজ শাসক দলকে কাটমানি না দিয়ে করা যায় না। বিজেপি এ রাজ্যে ক্ষমতায় না থাকলেও তাদের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ।
রাজ্য প্রশাসনের একাংশ বলছেন, মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পর রোজ যা ঘটছে, তাতে আইন-শৃঙ্খলা অবনতির প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে। বহু জায়গায় কাটমানি ইস্যুতে তৃণমূল জনপ্রতিনিধিদের ঘেরাওয়ের নেতৃত্ব দিচ্ছে বিজেপি। এখন মমতার আজকের ঘোষণার পর এর পাল্টা হবে। তাতে গন্ডগোলের আশঙ্কা বাড়বে। বিজেপি অবশ্য ব্ল্যাকমানি ইস্যুতে মমতাকে কটাক্ষ করেছে।