বিস্ফোরক সংকটে মধ্যপাড়ায় পাথর খনিতে উৎপাদন বন্ধ

বিস্ফোরক সংকটে মধ্যপাড়ায় পাথর খনিতে উৎপাদন বন্ধ

পাথর উৎপাদন ও উন্নয়নকাজে ব্যবহৃত বিস্ফোরক (অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট) সংকটে পার্বতীপুরের মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনি হতে পাথর উৎপাদন বন্ধ হয়েছে। এতে প্রতিদিন সরকারের দেড় কোটি টাকা লোকসান হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

শনিবার সকাল থেকে খনির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জার্মানীয়া-ট্রাস্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি) উৎপাদন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়।

চুক্তি অনুযায়ী খনির উন্নয়ন, উৎপাদন ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চাহিদামত প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও বিস্ফোরক সরবরাহ করার কথা গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড কর্তৃপক্ষের। কিন্তু খনির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে (জিটিসি) চুক্তির আওতায় নির্দিষ্ট সময়ে প্রয়োজনীয় বিস্ফোরক সরবরাহ করতে না পারায় খনির উন্নয়ন ও পাথর উৎপাদন কাজে বর্তমান সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। 

খনি সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, পাথর উত্তোলন কাজের জন্য অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট একটি অতি প্রয়োজনীয় উপাদান। চুক্তি অনুযায়ী খনি কর্তৃপক্ষ সময়মতো জিটিসিকে চাহিদা মাফিক অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট সরবরাহ করবে। কিন্তু গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে খনি কর্তৃপক্ষ (এমজিএমসিএল) জিটিসিকে চুক্তি মোতাবেক সময়মতো অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট সরবরাহ করতে পারেনি। খনির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের তাগাদা সত্ত্বেও গত ২১ অক্টোবর থেকে যথাযথ সহযোগিতার অভাবে বর্তমান এ সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। 

সূত্র আরও জানায়, খনি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও কর্মদক্ষতার অভাবে সময়মতো বিস্ফোরক সরবরাহ না করায় দৈনিক গড়ে সাড়ে ৫ হাজার মেট্রিক টন পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়েছে। এতে প্রতিদিন সরকারের লোকসান হবে প্রায় দেড় কোটি টাকা। এ ছাড়া সরকারি উন্নয়নকাজে মধ্যপাড়ার পাথর ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠান সমূহ পাথর সংকটে পড়ে চলমান নির্মাণকাজ ব্যাহত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে, পাথর আমদানি করে সংকট মোকাবিলা করতে গেলেও সরকারের বাড়তি বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হবে। তবে, কবে নাগাদ আমদানি করা এই বিস্ফোরক দেশে এসে পৌঁছাবে তার সঠিক কোনো দিনক্ষণও বলতে পারছে না খনি কর্তৃপক্ষ।

এ ছাড়া খনি উন্নয়ন এবং উৎপাদন কাজ দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলে মেশিনারিজ ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ অকেজো হওয়ার আশঙ্কাও করছেন খনি বিশেষজ্ঞরা।

উল্লেখ্য যে, খনির বর্তমান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসি মধ্যপাড়া পাথর খনির দায়িত্বভার গ্রহণের প্রথম মেয়াদে খনি উন্নয়ন এবং পাথর উত্তোলন কাজের জন্য চাহিদা মাফিক প্রয়োজনীয় বিদেশি মেশিনারিজ এবং যন্ত্রাংশ খনি কর্তৃপক্ষ যথা সময়ে আমদানি করে তাদের সরবরাহ করতে ব্যর্থ হওয়ায় চুক্তির ৬ বছর মেয়াদকালে খনির উৎপাদন ও উন্নয়নকাজ প্রায় ৩ বছর বন্ধ থাকে। ফলে, পাথর উত্তোলনের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হয়। খনির রক্ষণাবেক্ষণ সচল রাখতে জিটিসিকেও কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। চুক্তি অনুযায়ী এসব বিদেশি মেশিনারিজ এবং যন্ত্রাংশ খনি কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সরবরাহ করার কথা।

এ ব্যাপারে মধ্যপাড়া পাথর খনির মহাব্যবস্থাপক (ইউজিওএন্ডএম) মো. আবু তালেব ফরাজী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, কোরিয়া, থাইল্যান্ড ও ভারত থেকে এসব বিস্ফোরক আমদানি করা হয়। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে পরিবহন সংকট সৃষ্টি হওয়ায় বিস্ফোরক আমদানিতে বিলম্ব হচ্ছে। এ মাসের শেষ সপ্তাহ নাগাদ থাইল্যান্ড থেকে বিস্ফোরকের একটি চালান বাংলাদেশে পৌঁছাবে বলে আশা করা যায়।