মানুষের দুর্ভোগ কমাতে উদ্যোগ নিতে হবে

মানুষের দুর্ভোগ কমাতে উদ্যোগ নিতে হবে

করোনায় মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছে গেছে। গত দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে করোনা মহামারী অর্থনীতির সঙ্গে মানুষের জীবন-জীবিকার ওপরও প্রভাব ফেলেছে। যখন করোনায় মানুষ দিশেহারা তখন কৃত্রিমভাবে সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে। সেটা কখনও করোনার চিকিৎসা সেবায়, জরুরী ত্রাণ পৌঁছানোয়, নিত্যদ্রব্যের বাজারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে। এর সঙ্গে অক্সিজেন সিলি-র সংকট, আইসিইউ সংকটে নাভিশ^াস উঠেছে সাধারণ মানুষের। করোনাকারীণ সময় সরকার স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে ব্যাপক উদ্যোগ নিলেও ব্যবস্থাপনা ত্রুটির কারণে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালের আইসিইউতে একজন মুমূর্ষু রোগী মারা যাবার পর অন্য একজন আইসিইউ সেবা পান। এটা অনেকটা মৃত্যু কামনা করার মতো। সাধারণ মানুষের এমন দুর্ভোগ কমাতে স্বাস্থ্যবিভাগসহ সব ক্ষেত্রে আরও সহনশীল হয়ে উদ্যোগ নিতে হবে।

করোনা মহামারী প্রকট আকার ধারণ করায় সরকার কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। সাধারণ মানুষ সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগতও জানিয়েছে। গত বেশ কিছুদিন ধরে কঠোর লকডাউনে কর্মহীন মানুষ তাদের কষ্টের পরও মানছিল সরকারের নেওয়া স্বাস্থবিধি পরিপালনের ঘোষণা। বিপত্তি ঘটলো এই কঠোর লকডাউনের মধ্যেই ঈদের আগে এক সপ্তাহের লকডাউন সিথিল করার ঘোষণায়। এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ঢল নামে ঈদ করতে বাড়ি ফেরায়। বাড়িতে ঈদ করতে আসা মানুষ আটকে যায় ২৩ জুলাইর কঠোর লকডাউনে। এখানে প্রশ্ন উঠেছে ঈদ-উল আযহা সাধারণত ২১ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই তিন দিন। কিন্তু ঈদের তৃতীয় দিন লকডাউন শুরু হওয়ায় বেকায়দায় পড়ে যায় সবাই। এই লকডাউনটি যদি ২৪ তারিখ দেওয়া হতো তাহলে সাধারণ মানুষ বাড়ি থেকে নির্বিঘেœ ঢাকায় ফিরতে পারতো। কিন্তু সেটা করা সম্ভব হয়নি। তারপরও মানুষ মেনে নেয় সরকারের সিদ্ধান্ত।

সবচেয়ে বড় বিপত্তি ঘটেছে ১ আগস্ট রপ্তানীমুখি শিল্পকারখানা খোলার সিদ্ধান্তে। কঠোর লকডাউনে কারখানা খোলার সিদ্ধান্তের সঙ্গে সঙ্গে কারখানা মালিকরা শ্রমিকদের কাজে যোগদানের নির্দেশ দেন। এই খবরে গোটা দেশের সড়ক পথ মানুষের মিছিলে ঢাকা পরে। অবর্ণনীয় দুর্ভোগ সহ্য করে পায়ে হেঁটে, রিকশায়, ভ্যানে, ট্রাকে চেপে যে যেমনভাবে পারছে ঢাকার পথে যাত্রা শুরু করেছে। মাওয়া, আরিচা, কাওরাকান্দি, লক্ষিপুরসহ সকল ফেরী চলাচল পথ জনারণ্যে পরিণত হয়। কঠোর লকডাউনের মধ্যে কারখানা খোলার সিদ্ধান্তের সঙ্গে যদি লঞ্চ বাস চলাচলের নির্দেশনা থাকতো তাহলে মানুষের এই দুর্ভোগ কমতো। অর্থনীতির চাকা সচল করার নামে যে নির্দেশনা দিয়েছে তাতে পীষ্ঠ হতে হয়েছে যারা অর্থনীতির চাকা সচল করবে সেই শ্রমিকরা। পথে পথে নানা হয়রানীরন শিকার হয়ে তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়েছে। এই দুর্ভোগ কমাতে অবশ্যই সরকারের সঠিক বিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন ছিল।

আমরা চাই, করোনা মোকাবেলায় অবশ্যই কঠোর হতে হবে। কিন্তু বাস্তবতার সঙ্গে মিল রেখে যেন সব কমূর্সচি বাস্তয়নে উদ্যোগ নেওয়া হয়। তাহলে করোনা মোকাবেলা যেমন সম্ভব হবে, তেমনি মানুষের দুর্ভোগও সহনীয় পর্যায়ে থাকবে।