রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ স্বপ্নের জাদুকর

রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ স্বপ্নের জাদুকর

রূপসী বাংলার কবি, নির্জনতার কবি, প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাশ আমাদের স্বপ্নের বাস্তবতাকে দেখতে শিখিয়েছেন। স্বপ্নের মধ্যে তিনি রূপসী বাংলার ছবি এঁকেছেন। সেই স্বপ্নই যেন বাস্তবে রূপ নিয়েছে। আজ কবি জীবনানন্দ দাশের ১২২তম জন্মদি। কবি বলেছেন, ‘তোমরা স্বপ্নের ঘরে চলে এসো-এখানে মুছিয়া যাবে হৃদয়ের ব্যথা’। এমন স্বপ্নের জাদুকরী শিল্পী কবি জীবনানন্দ দাশের প্রতি আমাদের বিন¤্র শ্রদ্ধা।

চর্যাপদ থেকে আমাদের বাংলা কবিতার যাত্রা শুরু। মধ্যযুগে মঙ্গল কাব্য, তারপর রবীন্দ্র সাহিত্য আমাদের সমৃদ্ধ করেছে। কিন্তু এসব ধারার পরিবর্তন ঘটিয়ে আধুনিকতার বীজ বপন করেছেন জীবনানন্দ দাশ। কবির আবেগ, অনুভূতি, প্রেম-ভালোবাসা সবই ফুটে উঠেছে তাঁর কবিতায়।
বাহান্নর ভাষা আন্দোলন কবি জীবনানন্দ দাশের সঙ্গে একটা মিল রয়েছে। এই ফেব্রুয়ারি মাসে জন্মেছেন জীবনানন্দ দাশ। তাই ফেব্রুযয়ারি এবং জীবনানন্দ এক ও অভিন্ন আত্মা। যিনি কবিতার মাধ্যমে বাংলাদেশকে তুলে ধরেছেন। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যত ব্রজমোহন কলেজে অধ্যাপনা করতেন কবি জীবনানন্দ দাশ। ব্রজমোহন কলেজ জীবনানন্দ দাশের বিশাল ক্যানভাস। এই ক্যানভাসে কবি বাংলার অপরূপ বৈচিত্রকে কবিতা এবং সাহিত্যের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। শিক্ষার সঙ্গে সংস্কৃতি না থাকলে শিক্ষা অর্জন সার্থক হয় না। তার প্রমাণ মিলেছে কবির লেখনিতে। 

জীবনানন্দ দাশকে শূন্যতার কবি বলা হলেও তাঁর মত এত বাস্তববাদী কবি কম দেখা যায়। তাই তো তিনি লিখেছেন, ‘মরণের হাত ধরে স্বপ্ন ছাড়া আর কি বাঁচিতে পারে।’ অথবা ‘বাংলার রূপ আমি দেখিয়াছি, তাই পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে চাহি না আর।’ কবি পরজন্মকে বিশ্বাস করতেন কি না জানা নেই। তবে তিনি বরিশাল তথা বাংলাদেশকে নিজের চেয়েও বেশি ভালো বাসতেন। তাই তো তিনি বারবার বিভিন্ন রূপে ফিরে আসতে চেয়েছেন ধানসিঁড়ি নদী তথা তাঁর চির চেনা বাংলায়। সারা বিশ্বের বাংলা ভাষাভাসী মানুষ ছাড়াও বিভিন্ন ভাষায় কবিকে নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। এটা বরিশালসহ বাংলাদেশের গর্ব।

কবি জীবনানন্দ দাশ বরিশালকে রূপসী বাংলার তীর্থস্থান হিসেবে দেখেছেন। তাই তাঁর কবিতায় বরিশালকে বিভিন্ন উপমায় তুলে ধরেছেন। প্রকৃতি প্রেমিক কবি তাই বারা বার প্রকৃতির কাছে ফিরে আসতে চেয়েছেন। তাঁর স্বপ্ন পূরণের বরিশালে কবির জন্য তেমন কোন স্মৃতি গড়ে ওঠেনি। কেবল তাঁর নামে স্মৃতি মিলনায়তন ছাড়া। তবে গত কয়েক বছর ধরে উত্তরণ সাংস্কৃতিক সংগঠন জন্মদিন উপলক্ষ্যে মেলার আয়োজন করে আসছে। জাতীয় কবিতা পরিষদও জন্ম ও মৃত্যু দিনে আয়োজন করে থাকে। নির্মোহ কবির জন্য জাতীয়ভাবে কোন উদ্যোগ নেওয়া হয় না।

আমরা চাই, রূপসী বাংলার কবির তীর্থভূমি বরিশালে তাঁর জন্ম উৎসব আড়ম্বরে আয়োজন হোক। কেবল কবিতা পরিষদ, উত্তরণ নয়, সরকারিভাবে কবিকে নতুন প্রজন্মর কাছে তুলে ধরতে উদ্যোগ নেওয়া হোক।