শিশু গৃহকর্মী নির্যাতন দোষিদের শাস্তি দিতে হবে

শিশু গৃহকর্মী নির্যাতন দোষিদের শাস্তি দিতে হবে

ঢাকায় এক চিকিৎসকের স্ত্রীর হাতে নির্মম নির্যাতনে ক্ষতবিক্ষত শিশু গৃহকর্মী নীপা বাড়ৈ (১১)। যেখানে শিশুশ্রমই কঠিন অপরাধ, সেখানে শিশু শ্রমিককে বাড়িতে রেখে নির্মম নির্যাতন মনুষ্যত্বহীন ঘটনা। ১১ বছরের একটি শিশুকে যেভাবে নির্যাতন চালানো হয়েছে তা চোখে দেখার মতো নয়। আধুনিক বিজ্ঞানের মানুষ চিকিৎসকের বাসায় এধরণের জঘন্য ঘটনায় গোটা দেশ উদ্বিগ্ন। এই পাশবিকতার অবশ্যই বিচার হতে হবে। এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে এই অপরাধ বন্ধ হবে না।

আমরা লক্ষ্য করেছি ঢাকার জাতীয় পঙ্গু হাসপাতালের অর্থপেডিক্স ও ট্রমা বিশেষজ্ঞ ডা. সিএইএস রবিনের শ্যামলীর বাসায় গৃহপরিচারিকা নীপার ওপর নির্মম নির্যাতন হয়েছ। চিকিৎসকের স্ত্রী প্রতিদিন শারীরীক নির্যাতন চালাতো। নির্যাতনের পর তাকে চিকিৎসা না দিয়ে লোক মারফত শিশুর গ্রামের বাড়ি উজিরপুরে ফেলে রেখে যায়। সেখান থেকে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে। পরবর্তী সময় ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য হাসপাতাল থেকে শিশুটিকে সরিয়ে ফেলারও চেষ্টা করা হয়েছে। ২২ ঘন্টা পর শিশুটিকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। এঘটনায় চিকিৎসক দম্পতিসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আমর চাই, ওই মামলায় যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কার্যকর হয়।

বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার ওটরা ইউনিয়নের গজালিয়া গ্রামে বাসিন্দা ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালের রেজিস্টার ডা. সিএইচ রবিনের ঢাকার বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করত ওই শিশু নিপা। চিকিৎসকের স্ত্রী রাখি দাস নানা অজুহাতে তার উপর শারীরিক নির্যাতন করতো। কখনও গরম খুতির ছ্যাকা, কখনও ছুরির খোঁচা, আবার কখনও দেয়ালে ঠোকা হতো তার মাথা। রাগের মধ্যে কখনও তার গলা চেপে শ্বাস রোধ করার চেষ্টা করতো রাখি দাস। অব্যাহত নির্যাতনে সে গুরুতর অসুস্থ্য হয়ে পড়লে নির্যাতনকারী লোক মারফত ঢাকা থেকে উজিরপুরের জামবাড়ি তার গ্রামের বাড়ির কাছে একটি দোকানের সামনে ফেলে যায়। 

শিশুটি শারীরিক নির্যাতনের চেয়েও মানসিকভাবে বেশি আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তাদের মতে চিকিৎসায় শিশুটির শরীরের ক্ষত একদিন সেরে যাবে। কিন্তু শিশুটির ওপর যে মানসিক চাপ গেছে তাতে সে বেশি আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। মানসিকভাবে তাকে সুস্থ্য হতে সময় লাগবে। তার মাথায় বড় ধরণের ক্ষত চিহ্ন রয়েছে। সমস্ত শরীরে নির্যাতনের ছাপ রয়েছে। তার চোখে মুখে ভয়ের ছাপ।

এ ঘটনার বিচার দাবি করেছেন নির্যাতনের শিকার শিশুর স্বজনসহ বিভিন্ন সংগঠন। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ গতকাল দোষিদের শাস্তি দাবিতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছ। আন্দোলন করেছে বাসদসহ বিভিন্ন সংগঠন। আমরাও চাই এই শিশু নির্যাতনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দৃঢ় হতেই হবে।