শ্রদ্ধায় ধারণ করি বঙ্গবন্ধুকে

শ্রদ্ধায় ধারণ করি বঙ্গবন্ধুকে

১৭ মার্চ আমরা পালন করেছি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০০ বছর পূর্তি। যা মুজিববর্ষ হিসেবে সারা দেশে পালিত হয়েছে। আগামী এক বছর হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ হিসেবে পালিত হবে। তবে মুজিববর্ষ পালনের জন্য ক্ষণ গণনা শুরু হয়েছে ৩১ ডিসেম্বর মধ্য রাত থেকে। তারও অনেক আগে বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মদিনকে বর্ণিল করতে আয়োজন শুরু হয়। রাস্ট্রীয়ভাবে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়। এর বাইরে সরকারি, বেসরকারি পর্যায়ের উদ্যোগও লক্ষ্যণীয়। সবকিছু ছাড়িয়ে যায় দলীয় নেতা-কর্মীদের আয়োজন। যা ছড়িয়ে পড়ে রাজধানী ঢাকা থেকে প্রত্যন্ত গ্রামের পাড়া-মহল্লা পর্যন্ত।

এভাবেই তো জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানানো দরকার। তাই নানা আয়োজন দেখে আমরা আশান্বিত হয়েছি। কিন্তু অবাকও হয়েছি অতি উৎসাহী কর্মকা- দেখে। ওইসব আয়োজন দেখে মনে হয়েছে জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা নয়, মূলত নিজেকের (জাহির) প্রচার করা আর নেতা-নেত্রীদের তুষ্ট করাই মূল লক্ষ্য। তারা শ্রদ্ধায় বঙ্গবন্ধুকে ধারণ তো করেইনি বরং অসম্মানিত করে চলেছে। আমরা চাই, লোক দেখানো আয়োজন বন্ধ করে সারা বছর বঙ্গন্ধুকে শ্রদ্ধায় ভালোবাসায় লালন ও ধারণ করা হোক।

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি হয়েছে অনেকে হয়তো বিশ্বাস করতে চাইবেন না। বিশ্বাস হবার কথাও না। কিন্তু যখন দেখি বঙ্গবন্ধুর ছবি, মুজিববর্ষের লোগো শোভায় পায় টিস্যু বক্সে কিংবা পায়ের জুতায়, তখন বিশ্বাস না করার আর কোন কারণ থাকতে পারে না? মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে এক হাজারের বেশি টিস্যুবক্স তৈরি করেছেন। যার একপাশে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, ঢাকা-বাংলাদেশ লেখা লোগো এবং অন্য পাশে জাতির পিতার ছবি সম্বলিত মুজিব শতবর্ষের লোগো রয়েছে। এটা অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এবং লজ্জারও বিষয়। শেষ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুকে টিস্যুবক্সে স্থান দেওয়া হয়েছে। একই চিত্র দেখা গেছে পায়ের জুতায়। তবে সেটা করা করেছে জানতে পারিনি। সারা দেশে এরকম নানা জায়গায় বঙ্গবন্ধুর ছবি ব্যবহার হয়েছে এবং হচ্ছে। এর অনেকগুলোই আমাদের বিব্রত করেছে।

মুজিববর্ষ পালনের এমনসব আয়োজন দেখে বোঝা যাচ্ছে না কোন আয়োজনে কতটা মর্যাদা এবং সম্মান পাবেন জাতির পিতা। বঙ্গবন্ধুর প্রতি যতটা শ্রদ্ধা ও সম্মান দেখানোর জন্য এই আয়োজন, তারচেয়ে বেশি হচ্ছে লোক দেখানো, ক্ষেত্র বিশেষে প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগকে খুশি করার প্রতিযোগিতা। অতি উৎসাহী আমলা-কামলারা জাতির পিতাকে এরপর যে কোথায় নেবেন বুঝতে পারছি না। এদের এই অতি উৎসাহের রশি কে টানবেন? আমরা মনে করি কেবল প্রধানমন্ত্রী একা নয়, এব্যাপারে দলের এবং সরকারের উচ্চ পর্যায়ের দৃষ্টি দেওয়া জরুরী।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মুজিববর্ষ পালনের প্রতিযোগিতায় নামতে বারণ করেছেন। তারপরও কি সব বারণ শোনা যায়? না যায় না। কারণ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ বলে কথা। তাঁর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা এতটাই প্রগাঢ়, সেখানে তাঁর জন্মদিন গোটা জাতি পালন করবে এমনটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অতি উৎসাহী কিছু আমলা, কামলা এবং আওয়ামী লীগকে ধারণ করেন না এমন দলকানা মানুষ বঙ্গবন্ধুর ছবি যত্রতত্র ব্যবহারের চেষ্টায় লিপ্ত হচ্ছেন। এদের দৌড়াত্ব থেকে দেশ ও জাতিকে বাঁচাতে উদ্যোগ নিতেই হবে।

এবার ১৭ মার্চ স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবসে তাঁর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবদন করতে অনেককে দেখেছি, যারা কোনকালে বঙ্গবন্ধুকে ধারণ করেনি। উল্টো সমালোচনা করেছেন। এদের আওয়ামী লীগের নেতারা হাইব্রিড, অনুপ্রবেশকারী বললেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এক সময়ের আওয়ামী বিরোধী, ক্ষেত্রবিশেষে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী এইসব চক্র আজ আওয়ামী লীগের সামনের সারিতে অবস্থান করছেন। এদের দাপটে ত্যাগীরা কোনঠাঁসা হয়ে পড়ছেন। এরাই কিন্তু টিস্যু বক্স এবং জুতা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গেছে। এখনো সতর্ক হতে না পারলে জাতির পিতাকে এরা কোথায় নিয়ে যাবে জানি না। 

আমরা বলতে চাই, লোক দেখানো মুজিব শতবর্ষ কিংবা মুজিববর্ষ পালন বন্ধ করতে হবে। যারা ৫২, ৬৬, ৬৮, ৬৯, ৭০ এবং ৭১-এর দর্শনকে বিশ্বাস করে না। তারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বিশ্বাস করতে পারে না। তারা কেবল নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত থাকে। তাদের কোন দল নেই। তারা কখনো জাপা, কখনো বিএনপি-জামাত। এখন সুযোগ বুঝে ভোল পাল্টে আওয়ামী লীগ বনে গেছে। এখন তারাই নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে যাচ্ছে। এই সুবিধাবাদিদের হাত থেকে বঙ্গবন্ধুকে রক্ষা করতে হবে। লোক দেখানো মুজিববর্ষ পালন না করে মেধায়, মননে, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বঙ্গবন্ধুকে লালন ও ধরণ করতে হবে।