২৯ মরদেহ উদ্ধারের পর অভিযান সমাপ্ত

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন বিজ্ঞাপন ও চলচ্চিত্র নির্মাতা মাসুদ কায়নাত। সোমবার (৫ এপ্রিল) সন্ধ্যার পর রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। (ইন্না লিল্লাহি...রাজিউন)
তার মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন চলচ্চিত্র নির্মাতা মনিরুল ইসলাম সোহেল। তিনি বলেন, ৫-৬ দিন আগে কায়নাতের করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এরপর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সোমবার রাতেই কায়নাতের মরদেহ তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগরে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানেই তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
কায়নাত মূলত একজন বিজ্ঞাপন নির্মাতা ছিলেন। চলচ্চিত্র ও নাট্যনির্মাতা হিসেবেও তার পরিচিতি রয়েছে। নিজের লেখা গল্পে তার একমাত্র পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘বেইলী রোড’।
নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীতে যাত্রীবাহী লঞ্চ ডুবিতে নারী-শিশুসহ ২৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া আরো সাতজন নিখোঁজ রয়েছে বলে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদা বারিক জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সোমবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আরো ২৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। রোববার উদ্ধার হয়েছিল পাঁচজনের লাশ।
নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে কোস্টার ট্যাংকারের ধাক্কায় অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে ডুবে যায় ‘সাবিত আল হাসান’ নামে মুন্সিগঞ্জগামী লঞ্চটি। যা আজ উদ্ধার করা হয়েছে।
এ ঘটনায় নিহতদের মধ্যে আছেন, রুনা আক্তার (২৪), সোলেমান ব্যাপারী (৬০), বেবী বেগম (৬০), সুনিতা সাহা (৪০), পখিনা বেগম (৪৫), বিথী (১৮), অরিফ (১), প্রতিমা শর্মা (৫৩), শামসুদ্দিন (৯০), রেহেনা বেগম (৬৫), হাফিজুর রহমান (২৪), তহমিনা (২০), আব্দুল্লাহ (১), নারায়ণ দাস (৬৫), পার্বতী রানী দাস (৪৫), আজমীর (২), শাহআলম মৃধা (৫৫), মহারাণী (৩৭), আনোয়ার হোসেন (৫৫), মাকসুদা বেগম (৩০), সাউদা আক্তার লতা (১৮), আব্দুল খালেক (৭০), জিবু (১৩), খাদিজা বেগম (৫০), মোহাম্মদ নয়ন (২৯), সাদিয়া আক্তার (৭) ও অজ্ঞাত এক নারীকে জেনারেল হাসপাতাল থেকে নিয়ে যায় স্বজনরা।
এছাড়া নিখোঁজ রয়েছেন- বিকাশ সাহা (২২), অনিক সাহা (১২), জাকির হোসেন (৪৫), মানসুরা (৭), তানভীর হোসেন হৃদয়, রিজভী (২০), মো. ইউসুফ কাজী, মো. সোহাগ হাওলাদার (২৩)।
এর আগে এ দিন সকাল থেকেই শীতলক্ষ্যার উভয় পাড়ে অপেক্ষমান হাজারো মানুষের ভিড় দেখা গেছে। স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ। একে একে যখন লাশগুলো উদ্ধার করে পাড়ে নিয়ে আসছিলো, তখন কান্নায় ভেঙে পড়ছিলো স্বজনরা।
জেলা প্রশাসনের তালিকা অনুযায়ী ইতিমধ্যে ২৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এখনো ৭ জন নিখোঁজ রয়েছে। লাশ শনাক্ত করে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, রোববার (৪ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শীতলক্ষ্যা নদীর চর সৈয়দপুর এলাকার ব্রিজ সংলগ্ন স্থানে কোস্টার ট্যাংকারের ধাক্কায় অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে ডুবে যায় ‘সাবিত আল হাসান’ নামে মুন্সিগঞ্জগামী লঞ্চটি। রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ৫ জন নারীর লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারীরা।
রাতেই ঘটনাস্থলে উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় পৌঁছলেও বৈরি আবহাওয়ার কারণে উদ্ধার কাজ ব্যাহত হচ্ছিলো। পরে সোমবার সকাল থেকে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে বিআইডব্লিউটিএ’র উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে লঞ্চটি উদ্ধার করে তীরে নিয়ে আসা হয়। এরপর একে একে ভেতর থেকে বেরিয়ে আসতে থাকে লাশ। সেসময় স্বজনদের আহাজারিতে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা ঘটে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক (ঢাকা) সালাহউদ্দিন জানান, আমরা খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে আসলেও প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে শুরুতে উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হয়। রোববার রাত থেকেই আমাদের ৩টি ডুবুরি ইউনিট কাজ করে। সোমবার দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ২৭ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
এদিকে লঞ্চ ডুবে যাওয়ার ঘটনায় রাতেই পৃথক দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রোববার রাতে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ’র নির্দেশে ৭ সদস্যবিশিষ্ট ও বিআইডব্লিউটিএ'র চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেকের নির্দেশে ৪ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়