লকডাউন কঠোরভাবে পালন করতে হবে

লকডাউন কঠোরভাবে পালন করতে হবে

সারা দেশে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় সরকার ১৮ দফা নির্দেশনা দিয়েছে। সেই নির্দেশনা পরিপালন করতে মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনকে নির্দেশও দিয়েছে। কিন্তু মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে চাইছে না। এমন বাস্তবতায় সরকার ৭দিনের লকডাউন ঘোষণা করেছে। লকডাউনের প্রথমদিন কেটেছে অনেকটা স্বাভাবিক সময়ের মতোই। কেবল দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস এবং লঞ্চ চলাচল করেনি। এ ছাড়া সব ধরণের যানবাহন চলাচল করেছে। সকল যানবাহনে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই হয়ে যেতে দেখা গেছে। অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ থাকলেও মানুষের ভীড় কমেনি। লকডাউনের এমন চিত্র দেখে অনেককে উপহাস করতে দেখা গেছে। অনেকে বলেছেন এটা লকডাউন লকডাউন খেলা।

একদিকে সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত লকডাউন ঘোষণা করায় পরিস্থিতি বদলায়নি। দিনের বেলা আর সন্ধ্যার পরের চিত্র একই রকম ছিল। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে যদি লকডাউন দিতে হয়, তাহলে সেটা কার্যকর করতে কঠোর হওয়া দরকার। কোনভাবেই স্বাভাবিক সময়ের মতো লকডাউনের সময় চলাচল কাম্য নয়।
গত বছর মার্চের শেষের দিকে সরকার প্রথম লকডাউন ঘোষণা করে। ওই সময় দিন-রাত মিলে কঠোরভাবে লকডাউন বাস্তবায়ন হয়েছে। লকডাউন কার্যকর হওয়া ও স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন করায় করোনা পরিস্থিতি অনেকটা সহনীয় পর্যায়ে আনা সম্ভব হয়। এরপর পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হতে থাকে। এক পর্যায়ে সরকার করোনার টিকা দেওয়া শুরু করে। অনেকেই টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন। কিন্তু এবছরের মধ্য মার্চে নতুন করে করোনা সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। যা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। করোনা টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন এমন অনেকে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন। যার ফলে সরকার পুনরায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রতি জোর দেন। কিন্তু সরকারের নির্দেশনা মানছে না সাধারণ মানুষ। যার কারণে দিন দিনি হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখান থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে সবাইকে স্বস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

সরকারের নির্দেশনা মানতে কেবল লকডাউন ঘোষণা দিলেই হবে না। কঠোরভাবে লকডাউন বাস্তবায়নও করতে হবে। বরিশালসহ সারা দেশে যেভাবে ঢিলেঢালা লকডাউন হয়েছে তাতে শংকা বাড়ছে। কেবল লঞ্চ-বাস বন্ধ থাকলেই হবে না। দিনের বেলা মানুষের ঢল বন্ধ করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। গাছাড়াভাবে লকডাউন দিয়ে কাজের কাজ কিছুই হবে না। লকডাউন ঘোষণা দিয়ে লঞ্চ, বাস আর কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার কোন মানেই হয় না। সবকিছি স্বাভাবিকভাবে চলতে দিয়ে কেবল তিনটি মাধ্যম বন্ধ করে কি সত্যিকার করোনা সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব হবে?

বেপরোয়াভাবে মাহিন্দ্রো ও ইচিবাইক দূর দূরান্ত থেকে যাত্রী েিনয় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তারা দূরপাল্লার যাত্রী নিয়েও এক জেলা থেকে অন্য জেলায় গিয়েছে। এমনকি ঢাকা থেকে বরিশালে এসেছে এমন খবরও আছে। এসব যানবাহনে গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহন করতে দেখা গেছে। রাস্তার পাশে ফুটপাতে এবং বাজারঘাটের দোকানগুলোতে বেচাকেনায় প্রচুর ভীড় দেখা গেছে।

সাধারণ মানুষের দাবি, লকডাউন দিতে হলে লকডাউন কার্যকরে উদ্যোগ নিতে হবে। তা না হলে লকডাউন না দিয়ে স্বাভাবিক সময়ের মতো চলতে দিতে হবে। কেবল বাস-লঞ্চ বন্ধ রাখার মধ্যে লকডাউন সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না। বাস-লঞ্চ বন্ধ থাকার কারণে যাত্রী পরিবহণ বন্ধ হচ্ছে না। বরং বেশি ভাড়ায় দূর-দূরন্তের যাত্রীরাও গন্তেব্যে পৌঁছার সুযোগ পাচ্ছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে করোনার সংক্রমণ তো কমবেই না উল্টো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

আমরা বলতে চাই, সরকারের নির্দেশনা সঠিকভাবে পালনের জন্য কঠোর হতে হবে। নির্দিষ্ট সময় নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দোকানপাট খোলা রেখে বাকি সবয়ের জন্য সবকিছু বন্ধ রাখাতে হবে। দিনে সবকিছু খোলা রেখে সন্ধ্যায় লকডাউন বাস্তবে কোন প্রভাব ফেলবে না। করোনা প্রতিরোধে নেওয়া সরকারের সিদ্ধান্ত লকডাউন কঠোরভাবে পালন করতে হবে।