Global Youth Meet-Up এ বরিশালের মিশাল নেদারল্যান্ডে

Global Youth Meet-Up এ বরিশালের মিশাল নেদারল্যান্ডে

'স্বপ্ন' শব্দটার মধ্যেই রয়েছে একটা নিঃশব্দ বিষ্ময়! মানুষের স্বপ্ন থাকে নানান রঙের। কারোটা পূরণ হয়, আবার কারো হয় না। কিন্তু স্বপ্ন পূরণের জন্য মানুষেকে অনেক কষ্ট করতে হয়, তা অনেকেই জানেন। তেমন একটি উদাহরণ আপনাদের সামনে আজ তুলে ধরব।

মিশাল বিন সলিম ছোট থেকেই স্বপ্ন পাগল এক নাম। স্কুল জীবন থেকে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে কাজ করতে শুরু করে। অসহায় শিশুদের জন্যই বেশি কাজ করেছেন মিশাল। তার পাশাপাশি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে বেছে নিয়েছিলো বিতর্ক। জনসম্মুখে আরো পরিচিত হতে লাগলো মিশাল বিন সলিম। স্কুল কলেজ পেরিয়ে ভর্তি হয়েছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে নিজের দক্ষতার পরিচয় দিয়ে পেয়ে গেলেন বরিশাল ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটির সভাপতি পদ।

গত বৃহস্পতিবার (২৯ আগসট) রাতে নেদারল্যান্ড এর উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন। "Global Youth Meet-Up Gi Rb¨ Youth Ending Hunger Bangladesh"   এর পক্ষ হতে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের একজন হয়ে যাত্রা করেন নেদারল্যান্ড। নেদারল্যান্ডে সাত দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচিতে যোগদেবে মিশাল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ডাচ মিনিস্ট্রির সাথে মিটিং, ওয়ার্কশপ, এডভোকেসি স্কিল বাড়ানোর ওপর কর্মশালা ও  প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন।

বাংলাদেশের অন্যতম এনজিও (The Hunger Project Bangladeah)  এর ইয়ূথ সংগঠন (Youth Ending Hunger)। ২০১৫ সাল থেকে মিশাল জড়িত এই সংগঠনের সাথে। সংগঠনের কিছু সদস্যরা (National Girls Child Advocacy Forum) এর মাধ্যমে (Girls Advocacy Alliance) এর হয়ে কাজ করে। মিশাল বিন সলিমও করছে ২০১৮ সাল থেকে। সেই সুবাদে Netherlands Gi amsterdam এ সাত দিন ব্যাপি Global Youth Meet-Up এ ডাক পেয়েছে। যে মিটিং এর আয়োজন করেছে "Plan International Netherlands"


মিশাল বিন সলিম এর সাথে ভোরের আলো’র একান্তে কথা হয় সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তখন মিশাল জানায়, ‘স্কুল লাইফে বাংলাদেশ স্কাউটের সদস্য ছিলেন তিনি, বিতর্কের হাতে খড়িও স্কুল থেকেই। বরিশাল ডিবেটিং সোসাইটির সাথে যুক্ত ছিলেন। যুক্ত হন সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ ডিবেটিং ক্লাবের সাথে। কাজ করেন BRIT, সিটিজেন জার্নালিস্ট দলে, লাল সবুজ সোসাইটি, একমাত্রা সোসাইটি, চ্যানেল আগামী, রোটারেক্ট ক্লাব অব বরিশাল ইউনিভার্সিটি, সুহৃদ সমাবেশ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে।

মিশাল বর্তমানে কাজ করে চলেছেন বরিশাল ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি, ইয়ুথ এন্ডিং হাঙ্গার বাংলাদেশের বরিশাল অঞ্চলের জিয়েন্ট ফোরাম, বাংলাদেশ মডেল ইয়ুথ পার্লামেন্ট এর যুগ্ম মহাসচিব, Girls Advocacy Alliance এর Youth Advocate, ADO Science club Bangladesh, এর বরিশাল অঞ্চলের সহসভাপতি, Bangladesh Biology Olympiad এর বরিশাল অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক, Riverine People এর বরিশাল অঞ্চলের সমন্বয়ক, British Council এর Active Citizens Youth Leadership Training এর বরিশাল অঞ্চলের একজন facilitator, Red Crescent Bangladesh এর বরিশাল ইউনিট থেকে First Aid এবং Search and Rescue Gi Training of Trainers প্রাপ্ত যুব সদস্য।

এত এত কাজের সঙ্গে যুক্ত প্রতিভাবান মিশালের এই অর্জন সম্পর্কে জানতে এবং পাঠকদের সামনে তুলে ধরতে কয়েকটি প্রশ্ন ছিল ভোরের আলোর পক্ষ থেকে। মিশাল সাবলিলভাবে সেই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। মিশাল বিন সলিমের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কথা বলেছেন ভোরের আলোর ষ্টাফ রিপোর্টার সুকান্ত অপি।

অপি: Global Youth Meet-Up এ কতটি দেশের প্রতিনিধি অংশ নিয়েছে এবং এখানে অংগ্রহণ করতে পেরে আপনার প্রতিক্রিয়া কি? 
মিশাল: বিশ্বের ১০টি দেশ গ্লোবাল ইয়ুথ মিটআপে অংশ নিয়েছে। বাংলাদেশের তরুণদের একজন হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে পেরে আমি গর্বিত। ইম মনে করি এটা অনেক বড় একটা দায়িত্ব। আমি এমন সুযোগ পেয়েছি, সত্যি বলতে আমি অনেক ভাগ্যবান। আশাকরি সফলভাবে এই দায়িত্ব পালন করতে পারবো।

অপি: নিজেকে মেলে ধারার জন্য বিতর্ক কেন বেছে নিয়েছেন?
মিশাল: এক সময় আমি কথা বলতে ভয় পেতাম। বিতর্ক সেই ভয় দূর করার অন্যতম সূচক। বিতর্ক আমাকে কথা বলতে শিখিয়েছে। এতদিন কাজ করার এক্সপেরিয়েন্স থেকে বলতে পারি, যুক্তি দিয়ে কথা বলতে না পারার কারণেই আমাদের দেশের অনেক মানুষ পিছিয়ে পড়ে। আমার মত অনেক তরুন পিছিয়ে যায়। নিজেকে মেলে ধরতে বির্তকের মত আর কে এমন ভূমিকা রাখতে পারতো। তাই বিতর্ক নিয়ে কাজ করার আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। শুরুতে বিতর্ক ছিলো আমাকে সমৃদ্ধ করার জন্য। এখন আমার চেষ্টা হচ্ছে নিজের সঙ্গে অন্যদের সমৃদ্ধ করা। তাই চেষ্টা করে যাচ্ছি অন্য তরুণদে বিতর্ক শেখানোর।

অপি: স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে কিভাবে দেখছেন?
মিশাল: আমার মতে স্বচ্ছাসেবী সংগঠন আসলে ভুল একটা কনসেপ্ট। কারণ আমি বিশ্বাস করি, আমি যে কাজগুলো সমাজের জন্য করবো সেগুলো হচ্ছে আমার দায় মুক্তির কাজ। ধরুন একজন ভিক্ষুক বা একজন পথশিশুর টাকায় আমি সরকারি স্কুলে পড়েছি, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি। তারা আমাকে কেন পড়াচ্ছে? এই জন্য যে, আমি যেন তাদের জন্য সুন্দর সমাজ গড়ে দিতে পারি এবং সেই লক্ষ্যে কাজ করি। তাই, আমি যদি এসবকাজ না করি, আমি কিভাবে দায় মুক্ত হবো?

অপি: তরুনদের উদ্যেশ্যে কিছু বলেন-
মিশাল: তরুনদের উদ্যেশ্যে বলার মত এমন কিছু আমি এখনো অর্জন করতে পারিনি। আমি কাজ করে যাচ্ছি ভালো কিছু করার। সেটা কতটা করতে পারছি এখনো তা খতিয়ে দেখিনি। তারপরও নিজের মনে করেই দায়িত্বগুলো পালন করার চেষ্টা করছি। আমার তরুণ বন্ধুদের প্রতি আমার একটাই আহ্বান থাকবে, সেটা হচ্ছে তারা যেন নিজেদের দায়িত্বগুলো অনুভব করে। একই সঙ্গে ভালো ভালো কাজ করার তাগিদ উপলব্ধি করে।

অপি: এই মূহূর্তে কাকে ধন্যবাদ জানাতে চান?
মিশাল: প্রথমত ধন্যবাদ জানাতে চাই আমার পরিবারকে। কারণ তারা সাপোর্ট না দিলে আমি আগের সেই তোতলানো মিশাল থেকে যেতাম। তাদের কারণেই আমি আমকে মেলে ধরতে সক্ষম হয়েছি। এর সঙ্গে আমার কাজ করে চলা বিভিন্ন সংগঠন, স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়েরর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের। আমি তরুণসমাজসহ গোটা দেশের কাছে কৃতজ্ঞ।