দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর দিন আজ, যুদ্ধের বিরুদ্ধে শান্তির পতাকা উড়ুক

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর দিন আজ, যুদ্ধের বিরুদ্ধে শান্তির পতাকা উড়ুক

যুদ্ধ কখনো কোন দেশে শান্তি আনতে পারে না। তারপরও গোটা দুনিয়ায় চলে যুদ্ধের দামামা। অস্ত্র কেনাবেচা, পারমানবিক বিষ্ফোরণ ঘটানো, শক্তি পরীক্ষা, ক্ষমতা আর আভিজাত্যের কারণেই বারবার বাধে যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে বলি হয় লাখ লাখ সাধারণ নাগরিক। পঙ্গুত্ব বরণ করে জীবনের সঙ্গে লড়াই করতে হয় অসংখ্য মানুষকে। তারপরও শক্তি আর পরা শক্তির তান্ডব থামে না। সেরকমই এক যুদ্ধের নাম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। এই যুদ্ধে কেবল জাপানের দুটি শহরে ৩ লাখ ৭২ হাজার মানুষের প্রাণ গেছে। ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধ শেষ হয়। প্রায় ৭৫ বছর আগের সেই যুদ্ধের ভয়বহাতা আজও বয়ে চলেছে জাপান।

যে যুদ্ধ কখনো শান্তির সুবাতাস বয়ে আনতে পারে না, সেই যুদ্ধে কেন অর্থ অপচয় হয়? যুদ্ধ এবং অস্ত্র কেনায় যে পরিমাণ অর্থ খরচ হয়, সেই অর্থ মানব জীবনের কল্যাণে ব্যয় করা গেলে পৃথিবীতে দারিদ্র বলে কোন বিষয় থাকতো না। থাকতো না জলবায়ুর প্রভাবের হুমকীও। আর যেন দেশে দেশে যুদ্ধের নামে নারী ও শিশু হত্যা না হয়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর দিনে এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার। তাই যুদ্ধের বিরুদ্ধে শান্তি পতাকা উড়াতে উদ্যোগ নিতে হবে।

আজ ১ সেপ্টেম্বর পৃথিবীর ইতিহাসের ভয়বহ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর দিন। নাৎসি বাহিনীর পোল্যান্ড আক্রমণের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। সাভিয়েত ইউনিয়নকে নিষ্ক্রিয় রাখার জন্য জার্মানী অনাক্রমণ চুক্তি করে। এর আগে পূর্ব এশিয়ায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের লক্ষে জাপান ১৯৩৭ সালে প্রজাতন্ত্রী চীনে আক্রমণ করে। ১৯৩৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর জার্মানি পোল্যান্ড আক্রমণ করে এবং তার ফলশ্রুতিতে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। দ্বিতীয় ঘটনাটিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা বলে গণ্য করা হয়। ১৯৩৯ থেকে ১৯৪১ পর্যন্ত একনাগাড়ে বেশ কয়েকটি যুদ্ধ অভিযান পরিচালনা আর চুক্তি সম্পাদনার মাধ্যমে জার্মানি ইতালির সাথে একটি মিত্রজোট গঠন করে এবং ইউরোপ মহাদেশের অধিকাংশ অঞ্চল নিজের দখলে বা নিয়ন্ত্রণে আনতে সমর্থ হয়।

১৯৪৫ সালের ৬ই আগস্ট সকালে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনী জাপানের হিরোশিমা শহরের ওপর লিটল বয় নামের নিউক্লীয় বোমা ফেলে এবং এর তিন দিন পর নাগাসাকি শহরের ওপর ফ্যাট ম্যান নামের আরেকটি নিউক্লীয় বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। নিউক্লীয় বোমা বিস্ফোরণের ফলে হিরোশিমাতে প্রায় ১ লাখ ৪০ জাহার মানুষ মারা যান। আর নাগাসাকি হামলায় প্রায় ৭৪ হাজার মানুষ মারা যায়। এই দুই শহরে বোমার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় আরও ২ লাখ ১৪ হাজার মানুষ। জাপানের আসাহি শিমবুন-এর করা হিসাব অনুযায়ী বোমার প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট রোগসমূহের ওপর হাসপাতাল থেকে পাওয়া তথ্য গণনায় ধরে হিরোশিমায় ২ লাখ ৩৭ হাজার এবং নাগাসাকিতে ১ লাখ ৩৫ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে। দুই শহরেই মৃত্যুবরণকারীদের অধিকাংশই ছিলেন বেসামরিক নাগরিক।

এই যুদ্ধে নব্য আবিষ্কৃত অনেক প্রযুক্তির ধ্বংসাত্মক প্রয়োগ লক্ষ করা যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ প্রয়োগ ছিল পারমাণবিক অস্ত্র। মহাযুদ্ধের ডামাডোলের মধ্যেই এই মারণাস্ত্র উদ্ভাবিত হয় এবং এর ধ্বংসলীলার মধ্য দিয়েই যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে। দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধে কেবল ১৯৪৫ সালেই মোট ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। ১৯৪৫ সালে জার্মানি এবং জাপান উভয় দেশের নিঃশর্ত আত্মসমর্পনের মধ্য দিয়েই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে।

দেশে দেশে যুদ্ধ কিংবা বিশ^যুদ্ধ যা-ই বলি না কেন, যুদ্ধের মৌলিক অর্থ দাঁড়ায় কেবল ধ্বংস আর মানুষ হত্যা। হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে মানুষ হত্যা কোন সভ্যতার নিদর্শন হতে পারে না। আমরা চাই, আর যেন বারুদের গন্ধ বিশে^র কোন দেশকে আচ্ছন্ন না করে। কোন হিরোশিমা কিংবা নাগাসাকি না দেখতে হয়। আসুন সবাই মিলে যুদ্ধের বিরুদ্ধে শান্তির পতাকা উড়াই।