অধিক তাপমাত্রায় ওষুধের গুণগতমান হারানোর আশঙ্কা

বরিশালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ওঠা-নামা করছে ৩৬ ডিগ্রি ৬ সেলিসিয়াসের মধ্যে। তামাত্রা বেড়েই চলেছে। অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে অতি প্রয়োজনীয় ওষুধের গুণগত মান কমে যাচ্ছে এমন শঙ্কা করেছেন বিশেষজ্ঞরা। নির্দৃষ্ট তাপমাত্রায় ওষুধ রাখার পরামর্শও দিয়েছেন তারা। বাজারে পাওয়া অধিকাংশ ওষুধের গায়ে ২০ অথবা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখর নির্দেশনা দেওয়া আছে। কিন্তু গত এক মাসে বরিশালের তাপমাত্রা ছিল গড়ে ৩৫-৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। কিছু দোকানে রেফ্রিজারেটর থাকলেও অত পরিমাণ ওষুধ রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তাই ওষুধের মান সঠিক থাকছে না এমন প্রশ্ন উঠছে। বরিশাল আবহাওয়া কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক মো. আনিসুর রহমান ভোরের আলোকে বলেন, পুরো এপ্রিল মাস জুড়ে তাপমাত্রা বেশি। ৩৫ থেকে ৩৬ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করছে। তবে গত ২৪ এপ্রিল বরিশালের তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ছিল ৩৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামী দুই একদিনে এই তাপমাত্রা করা সম্ভাবনা নেই। গত কয়েক দিনে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতল সম্মুখ, বীর শ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক, কবী জীবনানন্দ দাস সড়ক, হাসপাতাল রোড, নতুন বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, অনেক ফার্মেসীতেই রেফ্রিজারেটর নেই। যাদের আছে তাদের পক্ষেও যত পরিমাণ ওষুধ আছে তা ওই রেফ্রিজারেটরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। ফার্মেসীগুলো ঘুরে দেখা গেছে, হৃদ রোগের (হার্ট) ওষুধ নিডোকোর্ড ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখার নির্দেশনা রয়েছে। ডেল্টা ফর্মার হার্টের ওষুধের নির্দেশনাপত্রে লেখা রয়েছে ৩০ডিগ্রী নেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখতে হবে। সারজেল ইনজেকশন, ফেনাড্রিন সিরাপ ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রায় রাখা যাবে না। রেনেটার এন্টিবায়টিক রিফিউরোসেফেরে নিদেশনাপত্রে লেখা রয়েছে ১৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি, স্কয়ারের ট্রুপান ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ইনজেকশন সেফট্রোন ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার কথা। কিন্তু এসব ওষুধগুলো সাজানোর রয়েছে কাঁচের তাকে। সেখাানের তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রির ওপরে। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাজপাতালের হৃদরোগ বিভাগের প্রধান ডা: জাকির হোসেন ভোরের আলোকে বলেন, হৃদরোগের ওষুধগুলো সাধারণত একটু ষ্পর্শকাতর হয়ে থাকে। এগুলো যে তাপমাত্রায় রাখার কথা বলা হয় সেই তাপমাত্রায়ই রাখা উচিত। তা না হলে এর কার্যকরিতার ওপর প্রভাব পড়বে। এব্যাপারে ওষুধের দোকানগুলোর অবশ্যই সতর্ক থাকা দরকার। বর্তামানে যে তাপমাত্রা বাড়ছে সেই তাপমাত্রায় এই ওষুধ রাখলে ওষুধের কার্যকরিতা হারাতে পারে বা কমতে পারে। নতুন বাজার এলার হেলথ ফর্মার উত্তম কুমার বলেন, অনেক ওষুধেই লেখা থাকে ৩০ ডিগ্রি সেলিসিয়াসে রাখতে হবে। কিন্তু আমাদের ফার্মেসী তো শীতাতপ নিয়ন্ত্রীত নয়। বিশেষ কিছু ওষুধ আমরা রেফ্রিজারেটরে রাখতে পারি। বাকি ওষুধ সেলফেই রাখতে হয়। তবে আমাদের ফর্মেসীর ওপরে সিলিং দেওয়া থাকায় অপেক্ষাকৃত গরম কম। সদর রোডের হাবিব মেডিকেল হলের মালিক অরুণ ঘোষ ভোরের আলোকে বলেন, আমাদের পাইকারী বিক্রির দোকান। এত ওষুধ ফ্রিজে রাখা সম্ভব নয়। বর্তমাণে যে পরিমাণ তাপমাত্রা বাড়ছে তাতে ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত অতি তাপমাত্রাসহনশীল ঔষধ উৎপাদনকরা। তা নাহলে সমস্যা বাড়বে ছাড়া কমবে না। মাইক্রোবায়োলজিস্ট সুদীপ কুমার নাথ বলেন, বছরের এই মৌসুমে ওষুধ নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। এপ্রিল মাসে অত্যধিক গরমে বিশেষ করে প্যাটোপ্রাজল ২০ মি:গ্রা:, সিপ্রোফ্লোক্সাসিনসহ বিভিন্ন এন্টিবায়োটিক যা ২৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে রাখা উচিত। ফর্মেসীগুলোতে সেরকম ব্যবস্থা নেই। অনেক সময় ওইসব ওষুধের গুনগত মান কিছুটা ক্ষুন্ন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। বাংলাদেশ সোসাইটি ফর ফার্মাসিউটিক্যাল প্রফেসনাল বরিশাল অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক ও ক্যামিস্ট কাজল ঘোষ ভোরের আলোকে বলেন, সাধারণত ওষুধ প্রস্তুতের সময় নিদৃষ্ট তাপমাত্রায় উৎপাদন করা হয়। এটা সারা বিশে^র সঙ্গে তাল মিলিয়েই ওষুধ প্রস্তুত করা হয়। যে ওষুধ যে তাপমাত্রায় রাখার নির্দেশনা আছে সেই তাপমাত্রায় রাখা দরকার। বিশেষ করে সেফরাডিন এবং ভিটামিন জাতীয় ঔষধ ২৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপত্রার মধ্যে রাখতে বলা হয়। তাপমাত্রা বেশি বেড়ে গেলে ওষুধের গুণগত মান অনেকটা খর্ব হয়ে যায় বা যেতে পারে।