অসাম্প্রদায়িক হত্যাকারী করোনা
নাটকের মঞ্চে কিংবা মঞ্চ নাটকের সঙ্গে চলতে চলতে কতগুলো বিষয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে যেতে হয়। বিষয়গুলো অনেকটা এরকম- মঞ্চ, মহড়া, শব্দ, আলো, প্রোম্ট, প্রোপস, কস্টিউম, মেকআপ, স্ক্রিপ্ট ইত্যাদি। সেই সঙ্গে আরো একটি বিষয়কে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বুঝে নিতে হয়। মূলত তার অনুমতি আদেশ অনুরোধ ব্যতিরেকে উপরোল্লেখিত কারো পক্ষেই তাদের কর্যক্রম যথাযথ সচল রাখা সম্ভব নয়। তিনি হলেন নির্দেশক। মূলত যে কোন নাটকের সফলতা বা ব্যর্থতার মূল কারিগর নির্দেশক। তাকে বাদ দিলে না মঞ্চে না জীবনের বাস্তব কিংবা অবাস্তব কোন নাটকই সম্ভব নয়। সম্ভব নয় খেলার মাঠে, রাজনীতির মঞ্চে, অর্থনৈতিক সমিকরণে, বিধ্বস্ত প্রাকৃতিক ব্যবস্থাপনায়, নদী শাসন বা খননে। সর্বত্র প্রয়োজন একজন দক্ষ নির্দেশক। একটি রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীগুলো কতটা নিয়ম মেনে চলছে বা চলবে। তা নির্ভর করবে ঐ বাহীনির প্রধান নির্দেশকের ওপর। একটি গান কতটা হৃদয়গ্রাহী হবে শ্রোতার, তার দায় সঙ্গীত নির্দেশকের। একটি গ্রাম, উপজেলা, জেলা, পৌরসভা, করপোরেশন এবং রাষ্ট্র কেমন করে চলবে তার জন্যেও ভিন্ন ভিন্ন যোগ্যতার নির্দেশনা থাকে নির্দেশকের। এরকম ধরে ধরে হাজারো বিষয় বের করা সম্ভব, যার চালিকাশক্তি একজন নির্দেশক। একটি দেশ পুর্নাঙ্গ মাদকের অন্ধকারে যে হারিয়ে যায়, তা কেমন করে? ওই যে বললাম নির্দেশক। যত বড় বিভৎস নাটক, ততবড় যোগ্য ধৃষ্টতাধারী ক্ষমতাধর নির্দেশক।
এই মুহূর্তে বিশ্ব নাটকের মঞ্চ দাপিয়ে চলেছে একটি নাটক। কি নাম তার? কোভিড-১৯ পেন্ডামিক করোনা ভাইরাস। নাটকটি সর্বপ্রথম মঞ্চ সফলতা দেখিয়েছে চীনের উহানে। তবে সেখানকার দর্শক দারুন সচেতন এবং একই সঙ্গে একরোখা হওয়ার কারণে করোনার ব্যর্থ মঞ্চায়ন তারা বন্ধ করে দিয়েছে। তারা জানান দিয়েছে, এ নাটক মানবতা বিরোধী। এ নাটক পৃথিবীর সভ্যতাকে প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। এ নাটক থামিয়ে দিয়েছে মানুষের গতি, তাকে স্থবির করে একদম চুপচাপ ঘরে বসিয়ে দিয়েছে। তাই কি উহান ক্ষেপে গিয়ে খুব দ্রুতই করোনার টুটি চেপে দিয়েছে? আপাতত তাদের বাইরের এ আচরণ খুব একটা আমলে নিচ্ছেন না বাকি পৃথিবী। তারা এর ভিতরে অন্য নাটক আছে এমনটাই মনে করছেন। তারা বলতে চেষ্টা করছেন বা বলেছেনও কেউ কেউ ইতিমধ্যে ‘এ নাটক সাজানো উহানের’। সার্বিক ব্যবস্থাপনায় গণচীন। শুধু খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। স্পষ্ট বুঝেও আসছে না। এ নাটকের মূল নির্দেশক কে? যদিও ইতিমধ্যেই আকারে ইঙ্গিতে পৃথিবীর এই মুহূর্তে করোনার আঘাতে সবথেকে বেশি বিপর্যস্ত দেশ আমিরিকা প্রায় বলেই ফেলেছে এই করোনা নাটকের মূল নির্দেশক WHO! বিষয়টি নিয়ে চলছে ঠান্ডা লড়াই। আমেরিকা বলে দিয়েছে WHO কে, ‘আর আর্থিক সহায়তা নয়’। চীন বলেছে প্রয়োজনে WHO কে আর্থিক সহায়তা আরো বাড়ানো হবে। নিকট অতীতে যে বাণিজ্যচুক্তিটি সম্পাদিত হয়েছিলো চীন এবং আমেরিকার মধ্যে সেটি করোনাকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্য বিষোদগারে রূপ নিয়েছে। দুই শক্তিধর রাষ্ট্রের এই ঠান্ডা যুদ্ধ নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে অবলোকন করছে বাকি উন্নত দেশ। কারণ আগামী বিশ্ব অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ এবং অগ্রযাত্রার সুনিপুন পথের চিত্র অংকিত হবে এখান থেকেই।
আমরা যারা আলোচনায় বেশ বড় এবং যারা ইতিমধ্যেই অবাস্তব আলোচনায় উন্নত বিশ্ব সেজে বসে আছি। যারা মূলত জানেই না উন্নত আর অনুন্নতের পার্থক্য। অথবা যাদের ‘দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া’ উন্নত দেশ, মানুষ, তাদের আচার আচরণ, জীবনযাত্রার মান এবং মৌলিক অধিকারগুলোর সুষ্পষ্ট প্রয়োগের বাস্তব রূপ। তাদের পক্ষে বিশ্ব অর্থনীতির গতি প্রকৃতি এবং সেই সঙ্গে তার নিয়ন্ত্রণের প্রকাশ্য এবং প্রচ্ছন্ন শক্তিপ্রয়োগ অনুধাবন করা সম্ভব নয়। সে নাটক বড়ই জটিল। ততোধিক জটিল সেই নাটকের নির্দেশকরাও। যে নাটকগুলো চোখের সামনে দেখেও তার রহস্য ভেদ করা সাধারণের পক্ষে সম্ভব নয়।
এই যে দুনিয়াব্যাপী লকডাউন, লকডাউন নাটকখানা চললো, তার কি সফল মঞ্চায়ন সর্বত্র হয়েছে? না হয়নি। কি তার কারণ? ওই যে বললাম, নির্দেশক। তিনি এবং তার নির্দেশনা সফল- তো নাটক সফল। এর মাঝামাঝি এ কারণ সে কারণ নিয়ে আলোচনায় কোন লাভ নেই। আমাদের লকডাউন নির্দেশের শুরুর দিকে সপ্তাখানেক কিছুটা আন্তরিকতার স্পর্শ পেয়েছিলো। তার পরে যা চলছে লকডাউনের নামে সে বড় অদ্ভুদ! অনেকটা মেয়াসাবের গরুর হিসাবের খাতার মতো। যে গরু শুধু মেয়াসাবের খাতায় থাকলেও গোয়ালে তার সন্ধান মেলেনি কখনো। যে কারণে পরবর্তীতে শিথিল এবং তুলে নেওয়া এই দুই শব্দরূপের ভিন্ন কোন অর্থ গ্রহণযোগ্যতা পায়নি কোথাও। কেন? নানান অর্থ আছে এই প্রশ্নের। তবে সবথেকে বাস্তব এবং গ্রহণযোগ্য যে অর্থ আমাদের দেশের জন্য, তা হলো ক্ষুধা।
একটি জনগোষ্ঠীর নুন্যতম ৬০ ভাগ যদি হয় নিত্য শ্রমিক। সেখানে লকডাউনের মতো ভয়াল বিষয় তার বাস্তব রূপ প্রকাশে ব্যর্থ হবেই। এই মুহূর্তে মানুষ মারতে উদ্যত দুই কঠিন শব্দ ক্ষুধা এবং করোনা। লকডাউন দীর্ঘ এবং কঠিন হলে ক্ষুধায় মৃত্যুর হার করোনাকে ম্লান করে তুলবে। এমন ধারণাকে আমলে নিয়ে জীবন জীবিকার প্রয়োজনে আমরা এখন সতঃস্ফূর্তভাবে বাইরে। যুদ্ধ চলছে ক্ষুধা নিবারণের। একই সঙ্গে যুদ্ধ চালাতে হবে করোনার বিরুদ্ধে। অস্ত্র নির্ধারিত। মুখে মাস্ক, হাতে দস্তানা, চোখে চশমা, ঘনঘন হাত ধোয়া, সেনিটাইজার লাগনো, এবং সর্বোপরি শারীরিক দুরত্ব বজায় রাখা। বিশ্বব্যাপী করোনা বিজয়ের এই নির্দেশনা দিয়েছে WHO। যারা মানতে পেরেছে কঠোর ভাবে। প্রয়োজনে জরিমানা, প্রয়োজনে গুলি করতেও দ্বিধা করেনি। তারা আজ করোনা বিজয়ী। আর আমাদের মতো যারা অর্থনীতি, সমাজনীতি, মানবতা, বেকারত্বের চিন্তায় মসগুল হয়েছে, তারা সবাই আজ করোনায় বিপর্যস্ত। তাদের মধ্যে এখন প্রতিযোগিতা কার আক্রান্ত বেশি, কার মৃত্যু বেশি এই খবর নিয়ে। অমাদের এই অংক কষাকষিতে সম্ভবত সত্য উপেক্ষিত হয়েছে, বাস্তবতাকে পাশ কাটানো হয়েছে। তা না হলে ঈদের বাজার বসল কেমন করে? কারা ঈদের কেনাকাটা করলো অমন দল পাকিয়ে বাজার ঘাটে। তারা কারা? ক্ষুধায় যারা মারা যাবে বলে ত্রাণের মহোৎসব ঘটালো সর্বত্র। সেই মানুষেরা এতো ঈদমুখি হলো কেমন করে? কেমন করে এবং কেন বারবার তারা বাড়ি ফেরার মত বিপর্যয় ঘটালো? সারা দেশব্যপি করোনার বীজ বপন করলো? এই নির্দেশনা কার? কে এমন ব্যর্থ নাটক করলো জাতির সঙ্গে? কে এবং কারা করোনার নিয়ন্ত্রণ রেখা ভেঙে টুকরো টুকরো করলো। অর্থনীতির চাকা ঘুরানোর নামে প্রনোদনা নামক দুঃসহ দুর্বোধ্য বিষয়গুলোকে, অতি সহজে সমাধান করে কারা যেন সকল কিছুর নিয়ন্ত্রণ নিলো। কারা যেন ইতিমধ্যেই প্লেন চার্টার করে দেশ ছেড়ে চলে গেল! প্রশ্ন কি করা যাবে না দেশাত্মবোধ উদ্বুদ্ধ ওরা কারা, দেশের বিপদে দেশ ছাড়ে? শুধুমাত্র নিজের জীবনটাকেই জীবন মনে করে?
করোনায় আমরা আজ সবাই ভীত। মুখে যত শক্তের, শক্তির কথাই বলি না কেন। তার মূলত একটিই কারণ, করোনার কোন প্রতিকার নাই। কোন চিকিৎসা নাই, কোন ঔষধ নাই। যারা ইতিমধ্যেই করোনাকে পরাজিত করেছেন। তাদের আছে অদম্য মোনের জোড়, আছে শরীরে রোগ প্রতিরোধের উচ্চ ক্ষমতা। সেবন করেছেন উপসর্গ অনুযায়ী ঔষধ। যতদিন না আবিষ্কার হচ্ছে এই রোগের ভ্যাকসিন ততদিন মানুষকে এই পথেই হাঁটতে হবে। এভাবেই বাঁচতে হবে। এই মুহূর্তের পৃথিবীতে সব থেকে জরুরী করোনার ভয়কে জয় করা। এবং যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। তবেই আমরা অর্ধেকটা বেঁচে যাবো। আর এর জন্য প্রয়োজন মানবিক মুল্যবোধের কাছে ফিরে আসা। যা ইতিমধ্যে সারা বিশ্বের মানুষ বিশেষ করে আমরা একেবারেই হারিয়ে ফেলেছি। তারা করোনায় আক্রান্ত মাকে রাস্তার পাশে, জঙ্গলে রেখে আমরা পালিয়ে বেড়াচ্ছি বেঁচে যাবো বলে। পিতার লাশের সন্ধানী হচ্ছে না সন্তান। মৃত ব্যক্তির লাশের পাশে নেই আত্মীয় পরিজন। মুহূর্তেই করোনা মানুষকে বেওয়ারিশ করে দিচ্ছে। মানবিক সম্পর্কে সকল বাধন ছিঁড়ে তছনছ করে দিচ্ছে করোনা। ঘড়, বাড়ি, স্বজন, বাড়ীওয়ালা, এলাকা, মহল্লার সবাই আমরা করোনা আক্রান্তের বিরুদ্ধে দারুন রুক্ষ অমানবিক এবং সহিংস।
আমরা বাঁচতে চাই সবাই। তবে সে বাঁচা কারো প্রতি এতটা নিষ্টুর হয়ে নয়। আজ যিনি করোনা আক্রান্ত তার প্রতি যদি সহানুভূতিশীল হতে না পারি, কাল যদি আমি, তুমি যে কেউ আক্রান্ত হই তখন? সুতরাং আক্রান্তের প্রতি সর্ব বিষয়ক সাবধানতা অবলম্বন করেই আমাদের সবার প্রতি মানবিক হতে হবে। তার খোঁজ খবর নিতে হবে। সর্বাত্মক মানসিক সাহস প্রদান করতে হবে। ভুলেও যেন ভুলে না যাই কেউ। করোনা আক্রান্তরা আমাদের আত্মার আত্মীয়, করোনার নয়।
সে কথা চোখে আঙুল দিয়ে প্রমাণ করেছেন নারায়নগঞ্জের কাউন্সিলর খন্দকার খোরশেদুল আলম। যাকে বাংলাদেশ স্বসম্মানে আশিন করেছেন মানবতার ফেরিওয়ালা বলে। এই বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ নিশ্চয়ই প্রতি সকালে অভিবাধন জানায় তাকে। তাঁর পথ অনুসরণকারীদেরকে। তাঁর মহতি, সাহসী করোনা সৎকার কর্মকে। তার এই দেখানো মানবিক কর্মে আজ অনেকেই সম্পৃক্ত হয়েছেন। তাঁদের সবার প্রতি আমাদের অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। পৃথিবীর ইতিহাস বলে যুগে যুগে মানুষের সংকটকালে বিশেষ কিছু মানুষই দাঁড়িয়েছে মানুষের পাশে। তারা বীর। তারাই মানুষ, যেমনটা আমরা অনেকেই নই। ‘স্মরণীয় তারা বরণীয় তারা’। সময়ের কর্ম মানুষকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করে। সেই উদাহরণের চূড়ায় আজ বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী। সমগ্র দেশ বিস্ময় ভরে দেখছে করোনা রোধে তাদের সক্রিয় উদ্যোগ। দেখেছে স্বজনদের ফেলে যাওয়া লাশ কিংবা করোনা আক্রান্তদের ভ্যানে তুলে ভ্যান নিজে চালিয়ে তাদের পৌঁছে দিয়েছে গন্তব্যে। তদরূপ এই করোনাকালে সেনাবাহিনী, র্যাবসহ সকল বাহিনীর প্রতিটি সদস্যেদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ছালাম জানাচ্ছে দেশবাসী। তাদের এই চরম আত্মপ্রত্যয়ী কাজের জন্য। ছালাম জানাচ্ছে কৃতজ্ঞচিত্তে পৃথিবীর সমস্ত ডাক্তার, নার্সসহ স্বাস্থ্য খাতের সবাইকে।
হারিয়ে যাওয়া রাজনীতির মাঠে সর্বত্র এখন প্রশাসন। দেখিয়ে দিচ্ছে শিক্ষা যোগ্যতার রূপ রাষ্ট্রীয় ক্রান্তিকালে কত প্রয়োজন। উপায়হীন প্রধানমন্ত্রী অগোচরে হারিয়ে যাওয়া নেতাদের খুঁজে ফিরছেন। জানি না তিনি ভাবছেন কি না এই বর্ণচোরা রাজনীতির উপর আস্থা স্থাপন করে কতোদূর যাওয়া যাবে? তবুও রাজনীতিই রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রের গতীশিলতার শেষ কথা। রাজনীতি চলছে এখনও। চলছে আগেরই মতো করে। সকালের ঘোষণা বিকেলে হারিয়ে যাচ্ছে। বিকেলেরটার কোন গুরুত্বই মিলছে না রাতে। ঘোষণা হচ্ছে গণপরিবহন চলবে না। ব্যক্তিগত গাড়ি, বিমান চলবে। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সরকার খুব কঠোর হবে। প্রয়োজনে আবার লকডাউন। গণমাধ্যমে প্রতিদিন নূতন নূতন পোশাক পরে কেউ একজন বলেই চলেছে, তবে বোঝা যাচ্ছে না ভলো, কেউ সে কথা শুনছে কি না!
ইতিমধ্যে শুনেছি সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মো. নাছিম এবং গণস্বাস্থ্যের জাফরউল্লাহ চৌধুরী পরিবারসহ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন এবং ধীরে ধীরে তারা সুস্থ্য হয়ে উঠছেন। সুস্থ হয়ে উঠছেন মানবতার ফেরিওয়ালা খোরশেদ ও তার স্ত্রী। এভাবেই সমগ্র পৃথিবী সুস্থ হোক করোনা থেকে।
হঠাৎ করে জাফরউল্লাহ চৌধুরীর করোনা আক্রন্ত হওয়ায় একটি অতি পুরাতন গল্প মনে হলো। যে গল্পটি জানেন সকলেই, নানান রূপে। আমরা মূলত সবাই অবগত আছি যে, জাফরউল্লাহ চৌধুরীর করোনা পজেটিভ এটা নিশ্চিত করেছে গণসাস্থ্যকেন্দ্রের নিজেস্ব উদ্ভাবিত রেপিট টেস্ট কিট। যাকে বলা যায় সম্পুর্ণ দেশি, স্থানীয় এবং লোকাল। গল্পটা মূলত এখানেই। জৈনক স্বাস্থ্যমন্ত্রী গেলেন হাসপাতাল পরিদর্শনে। হাসপাতাল প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখছেন হাসপাতালের অবস্থা। উপস্থিত ডাক্তার সাহেবরাও সকল কিছুই বুঝিয়ে দিচ্ছেন মন্ত্রী মহোদয়কে। হঠাৎ এক রোগীর কাছে এসে মন্ত্রীর প্রশ্ন ‘কি হয়েছে ওর’? ডাক্তার উত্তরে বললেন ‘স্যার এর হাতটা কেটে ফেলতে হয়েছে’ মন্ত্রী জিজ্ঞাসা করলেন ‘কোন অসুবিধা নেই তো, সব ঠিক আছে’? ডাক্তার সাহেব বললেন ‘জি¦ স্যার আমরা লোকাল দিয়েই এর হাতের সফল অস্ত্রোপচার করেছি’। শুনে মন্ত্রী বললেন ‘খুব ভালো, একেই বলে দেশাত্মবোধ বুঝলেন? আরে ভাই আপনি লোকাল থাকতে বিদেশি ব্যবহার করবেন কেন? মনে রাখবেন লোকাল মানেই হচ্ছে নিজেদের। এর পর থেকে এই হাসপাতালে সকল রোগে লোকাল ব্যবহার করবেন’। মন্ত্রী মহোদয় এই উপদেশ দিয়ে বের হয়ে চলে গেলেন। ডাক্তার অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলেন তার পথের দিকে। কানে তার তখনো বেজে চলেছে মন্ত্রীর বাণী ‘সব রোগে লোকাল দেবেন’!
তাই বলছিলাম লোকাল শব্দের এমন বিভৎস্য অর্থের দিকে না যেয়ে, আমরা এই শব্দের কোন কোন ক্ষেত্রে যথার্থ অনুসন্ধানী হতে পারি। গণস্বাস্থ্যের উদ্ভাবিত করোনা নির্নয় কিট শাব্দিক অর্থেই লোকাল। তাকে রাজনৈতিক যোগ্যতায় নয়, বৈজ্ঞানিক যোগ্যতায় গ্রহণযোগ্য করতে হবে। তা হলেই লোকাল ব্যবহারকারীর গর্বে গর্বিত হবো আমরা, গর্বিত হবে দেশ।
কোভিড-১৯ এর হাত ধরে আমরা প্রবেশ করেছি মুখে ঠুলি (মাস্ক) হাতে দস্তানা (গ্লভস) চোখে চশমার যুগে। যারা মনে করেছিলাম, আমরা করোনা আক্রান্ত হবো না তেমন করে, তারা ভুল বুঝেছিলাম। যারা বলেছিলো এ করোনা শুধুমাত্র ইহুদি ও বিধর্মীদের জন্য। তারা ভুল বলেছিলো। যারা বলেছিলো ওজু করে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পরলে মুসলমানদের করোনা হবে না। তারা জেনেশুনে ভুল বুঝিয়েছিলো। যারা এখনো বলছেন করোনা অচিরেই চলে যাবে তারা এখনো ভুল বলছেন। যারা এখনো বলছেন স্যানিটাইজারে এ্যালকহল থাকে ওটা ব্যবহার করা যাবে না। ওরা অন্ধ। ওরা চিরদিন ভুলই বলে। অশিক্ষিতরা তা শোনে আর বোকার মত পালন করে। এই পৃথিবীতে শতাব্দি অন্তর যত মহামারী এসেছে তাকে লক্ষ কোটি প্রাণ দিয়ে জয় করেছে মানুষ। কোন ধর্ম নয়। করোনায়ও যাদের প্রাণ যাচ্ছে তারাও সবাই মানুষ। আজ কোন এক ধর্মের মানুষের পক্ষেও দাঁড়িয়ে কি বলা সম্ভব ‘আমার ধর্মের কাউকেই এখনো মারতে পারেনি করোনা’। না নেই। এখানেই করোনা তার কর্মে শতভাগ অসাম্প্রদায়িক।
তাই এই করোনাকালে পৃথিবীতে এখন সব থেকে দামি হলো মুখের ঠুলি (মাস্ক)। সর্বত্র মাস্কেরই জয়জয়কার। যার বিক্রয়মুল্য ছিলো একদিন ০০.৫০ টাকা থেকে ২.০০ টাকা পর্যন্ত। সেই মাস্কের এখন সর্বনিন্ম মূল্য ২০ টাকা। শুধুমাত্র বাংলাদেশেই প্রতিদিন নুন্যতম কত মাস্কের প্রয়োজন এক কোটি, পাঁচ কোটি, নাকি আরো বেশি? আগামী পৃথিবীতে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদনসামগ্রীর নাম- মাস্ক। সমস্ত দুনিয়া কাঁপানো ডিজাইনারদের মাথায় এখন একটাই চিন্তা কেমন হবে কোট প্যান্ট টাইয়ের সঙ্গে মাস্ক? কেমন হবে শাড়ী ব্লাউজের সমগোত্রীয় মাস্ক, পাঞ্জাবি টুপির সেেঙ্গ কোন ধরণের মাস্ক পরলে পবিত্র মনে হবে? নামাবলীর রঙের মাস্কটি কি মানাবে ঠাকুরের মুখে? ঠিক জানি না কেউ। আমরা সবাই সেই মাস্কের পৃথিবীর পথে চলেছি। যেখানে বিভিন্ন গোত্রীয়, বিভিন্ন বংশীয় মাস্কের সঙ্গে থাকবে, অতি অত্যাধুনিক তথ্যবহুল প্রযুক্তিনির্ভর দামি মাস্ক। যা দেখে শুনে আমাদের মতো আমরা প্রায়শঃই ভিমরি খেয়ে যাবো। কেউ বলবে ‘ঐ দেখ ওটাকে বলে মাস্ক, যেটি শুধুমাত্র গাড়িতে থাকলেই ওর মালিককে আর ছুঁতে পারবে না করোনা। তখন হয়তো WHO এর নির্দেশনা আসবে যাদের এই মাস্ক কিনবার অর্থ কিংবা সামর্থ নেই, তারা শুধুমাত্র রাতে ডানদিকে কাত হয়ে শুয়ে থাকবেন। তাহলেই বেঁচে যাবেন করোনার হাত থেকে। আর আমরা বেঁচে থাকার জন্যে প্রশ্নহীন এমন নির্দেশনা মেনেই করোনা নাটকের পথে হেঁটে চলেছি।