আজ বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস

আজ বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস

আজ বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। করোনা মহামারিতে স্বাস্থ্য খাত ব্যাপক চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে চলছে। ২০২০ সালে করোনার কারণে কেবল ২ লাখ ২৮ হাজার শিশু ও ১১ হাজার মায়ের মৃত্যু হয়েছে। করোনার কারণে এই সময় স্বাস্থ্য সেবা, প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা চরমভাবে বিঘ্নিত হয়েছে। শিশু, মাতৃমৃত্যুর এই  হার বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি। যার প্রভাব বরিশালেও পড়েছে। গোটা বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাত ও অর্থনীতির ওপরও ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে করোনা।  
বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে কৃষির সঙ্গে যুক্ত নারীরা স্বাস্থ্যসেবার দিক থেকে আরও পিছিয়ে রয়েছে। গ্রামাঞ্চলে সুবিধা কম থাকায় নারীরা চিকিৎসা সেবা নিতে পারছে না। একইভাবে কিশোরীরা সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ায় চরম স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসে করোনার সঙ্গে সঙ্গে শিশু মৃত্যু, মাতৃমৃত্যু বন্ধেও উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। করোনার সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজন প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা উপেক্ষিত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা। করেনার কারণে শিশু শ্রম বৃদ্ধি, বাল্য বিবাহের প্রবণতা বৃদ্ধি ঠেকাতেও উদ্যোগ প্রয়োজন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস, প্রতি বছর ৭ এপ্রিল বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য  সংস্থা প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করে দিনটি পালন করে। বাংলাদেশও বিভন্ন আয়োজনে দিবসটি পালন করে থাকে। তবে কোভিড-১৯ বিবেচনায় এবারের আয়োজন সীমিত হবে তা বলাই বাহুল্য। করোনা বাস্তবতায় বদলে যাওয়া পৃথিবীর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অনেকটাই দুর্বল হয়েছে। কোভিড-১৯ দুর্বল করেছে বিশ্বের শক্তিশালী রাষ্ট্রের স্বাস্থ্যখাত এবং দেখিয়েছে জীবন জীবিকার বৈষম্য ও ভারসাম্যহীনতা।
জাতিসংঘ বলছে কোভিডের নানামুখী প্রভাবে ২০২০ সালে প্রায় ২ লাখ ২৮ হাজার শিশুমৃত্যু এবং ১১ হাজার মায়ের মৃত্যু হয়েছে। ইউএনএফপিএ এর প্রতিবেদন বলছে, করোনার প্রভাবে অতিরিক্ত ৩ দশমিক ৫ লাখ শিশু গর্ভবতী হয়েছে। ১ দশমিক ৯ লাখ শিশু পুষ্টিকর খাবারের সুযোগ বঞ্চিত হয়েছে। আর ইউনিসেফ, ইউএনএফপিএ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, কভিডের কারণে সাউথ এশিয়ার ছয়টি জনবহুল দেশে আশঙ্কাজকনহারে বেকারত্ব বেড়ে গেছে। একই সঙ্গে স্কুল বন্ধ থাকায় শিশুর অনিশ্চত ভবিষ্যৎ এর আশঙ্কায় বেড়েছে বাল্যবিবাহ। স্কুল বন্ধ থাকায় ৪ লাখ ২০ হাজার শিশুকে অনিশ্চত ভবিষ্যতের পথে যেতে হয়েছে। ছয় দেশ হচ্ছে- আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, নেপাল, ভারত, পাকিস্তান এবং শ্রীলংকা।
কভিড-১৯ এর কারণে স্বাস্থ্য সেবা ব্যহত হওয়ায় ৮০ শতাংশ শিশু তীব্র পুষ্টহীনতার শিকার হয়েছে। যা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গঠনে হুমকীস্বরূপ। এতে করে শারীরিক স্বাস্থ্য যেমন ভেঙে পড়েছে, ঠিক তেমনি হুমকীর সম্মুখীন মানসিক স্বাস্থ্যও। বিশেষ করে গ্রামীণ জনপদে স্বাস্থ্যসেবা বিশেষ করে প্রজনন স্বাস্থ্যসেবাও মাত্মকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে।
লকডাউন পরিস্থিতি অব্যাহত থাকায় কর্মসংস্থান, অর্থনীতি, মানসিক স্বাস্থ্য এবং সামাজিক শৃঙ্খলার ওপর এর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে (বিশেষত যেখানে সামাজিক সুরক্ষা বলয় সীমিত)। তাই লকডাউনের ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সঙ্কট কাটিয়ে উঠার ক্ষমতা ধনী রাষ্ট্রগুলোর থাকলেও নিম্ন ও মধ্যম আয়ের রাষ্ট্রগুলি এ বাস্তবতায় কতদূর টিকে থাকতে পারবে, সেটি একটি কঠিন প্রশ্ন।
এই অবস্থাায় প্রতিদিনই করোনা সংক্রমণের হার বেড়ে চলেছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ দ্বিতীয়, তৃতীয় ঢেউয়ের সম্মুখীন হচ্ছে। বর্তমান সময়ে সবথেকে কঠিনতম সময় পাড় করছে বাংলাদেশ। বাড়তি সংক্রমণ আর অপ্রতুল চিকিৎসা সেবা নিয়ে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে স্বাস্থ্য খাত। এর মধ্যে স্বাস্থ্য দিবস উদযাপনে বাংলাদেশের জন্য সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ হবে কোভিড মোকাবিলায় স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ এবং তার যথাযথ বাস্তবতায়ন।