আজ মে দিবস, করোনা মুক্ত পরিবেশে শ্রমিকরা যেন ন্যায্য অধিকার ফিরে পায়

আজ মে দিবস, করোনা মুক্ত পরিবেশে শ্রমিকরা যেন ন্যায্য অধিকার ফিরে পায়

সারা বিশ্বে করোনার সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে আমরা ক্লান্ত। আর গোটা বিশ্বের শ্রমিকরা ক্লান্ত কর্মহীন, ন্যায্য মজুরী এবং খাদ্য সংকটের কারণে। করোনার সঙ্গে সঙ্গে নতুনভাবে যুদ্ধ করতে হচ্ছে শ্রমিকদের। করোনা মুক্ত পরিবেশে শ্রমিকরা যেন তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পায়। এই মহামারীর মধ্যে তারা যেন স্বস্তিতে থাকতে পারে। সেদিকে নজর দিতে হবে। আমদের সরকারসহ গোটা বিশ্বের সরকার সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করুক।

আজ মহান মে দিবস। ন্যায্য অধিকার আদায়ের সংগ্রামে ১৮৮৬ সালের মে মাসে আমেরিকার শিকাগো শহরের রাজপথ শ্রমিকের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল। ১ মে পৃথিবীর ৮০টি দেশে মে দিবস বা আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষে সরকারি ছুটি থাকে। এই ৮০টি দেশসহ পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং স্বার্থ রক্ষায় এই দিনে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়। এবছর করোনার প্রাদুর্ভবের মধ্যে মে দিবস পালন হবে। আমাদের বিশ্বাস এ বছরের মেদিবসও বাংলা নববর্ষের মতো পালিত হবে। সামাজিক দূরত্বের কারণে আমরা যেন সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছি। কোন অধিকার আদায়ের কথা বলার সুযোগ দিচ্ছে না করোনা। তাই করোনার দুর্যোগ মোকাবেলার সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিকরা যেন তাদের অধিকার ফিরে পায় সেই প্রত্যাশা করছি।

ইতিহাস বলে, ১৮৮৬ সালের এই দিনে শ্রমের সময়সীমা ৮ ঘণ্টা করার দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের ‘হে মার্কেট’ চত্বরে শ্রমিকরা লাগাতার আন্দোলন শুরু করেন। আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর পুলিশের নির্বিচার গুলিবর্ষণে বহু শ্রমিক হতাহত হন। প্রতিবাদে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এরপর গড়ে ওঠে মেহনতি জনতার ঐক্য। শেষ পর্যন্ত শ্রমিকদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিলো যুক্তরাষ্ট্র সরকার।

১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে শিকাগোর রক্তঝরা দিনটিকে স্বীকৃতি দিয়ে ‘মে দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়। তারপর ১৮৯০ সাল থেকে প্রতিবছর সারাবিশ্বে পালিত হচ্ছে মে দিবস। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও এদিনে সরকারি-বেসরকারি সংগঠন নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করে আসছে। তবে এ বছর করোনার কারণে সব অনুষ্ঠান হবে বাড়িতে। কোনভাবেই বাইরে কোন ধরণের জমায়েত করা যাবে না। আমরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই মে দিবস পালন করবো। একই সঙ্গে শ্রমিকের ন্যায্য দাবি তুলে ধরবো।

১৩০ বছর ধরে কাদের জন্য এই দিবস? কাদের জন্য শুধু একটি দিনেই মানববন্ধন, সভা-সমাবেশ, আলোচনা, মিটিং-মিছিল, এসি রুমের টক-ঝাল শো? শ্রমিকদের ঘাম এখনো অনবরত ঝরছে শোষণ, বৈষম্যে আর পারিশ্রমিকের অন্যায্যতায়। শহরের পথেঘাটের শ্রমিকরা কেউই জানেন না কি এই মে দিবস, কেন এই দিবস। আর এ বছর তো জানার প্রশ্নই থাকবে না। সরকারি বেসরকারি কোন পর্যায়েই এ বছর মে দিবস পালন করা সুযোগ থাকবে না। দিবস পালন না হলেও আমরা চাই, করোনার কারণে যেসব শ্রমিকরা কর্মীহীন হয়েছে তারা যেন তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পায়।

বঞ্চনা, নির্যাতন ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের সংগ্রাম আর অধিকার আদায়ের রক্তাক্ত স্মৃতিবিজড়িত গৌরবময় দিন। কিন্তু, ন্যায্য মজুরি, কাজের সময়সীমা, নির্দিষ্ট ছুটি ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত অনেক অধিকারের ব্যাপারে অবগত নন শ্রমজীবীরা। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই শ্রমিকরা বঞ্চিত হচ্ছেন তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে। তাই, বৈষম্য দূর করতে সচেতনতাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। কাজ চলছে কাজের মতো। অন্যদিকে কেউ কেউ বসে আছেন কাজের অপেক্ষায়, না হলে জুটবে না খাবার। আরেকদল ছুটছেন নিজ নিজ কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে।

এসব শ্রমজীবী মানুষেরা কী জানেন শ্রম আইন বা সেখানে তাদের দেয়া সুযোগ সুবিধা কিংবা অধিকারগুলো সম্পর্কে? শ্রম অধিকারের ব্যাপারের সচেতন করতে অনেক সংগঠন কাজ করছে। তবে শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চত হচ্ছে না। এবারের করোনার কারণে অনেক শ্রমিক যেমন কর্মহীন হয়েছে, তেমনি আবার শ্রমিক ছাটাইও হচ্ছে। সব মিলে  এবারের মে দিবস শ্রমিকদের জন্য বড় অসনি সংকেত। আমরা চাই, শ্রমিকরা কেবল কর্ম ঘন্টা ৮ ঘন্ট নয়, তাদের সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করা হোক। করোনার এই মহামারী হয়তো থাকবে না। আমার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে পাবো। সেই সঙ্গে আমাদের শ্রমিকরাও যেন তাদের জীবনের স্বাভাবিক নিশ্চয়তা পায়।