আমতলীতে বালুর পানিতে তলিয়ে রয়েছে পরিবার,সংঘর্ষে সাত জন আহত

বরগুনার আমতলী পৌর শহরের চারটি পরিবারের বসত বাড়ী গত তিন দিন ধরে বালুর পানিতে তলিয়ে রয়েছে। এ কারনে মানবেতর জীবন যাপন করছেন এই পরিবারগুলো। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গতকাল রবিবার রাত আট টার দিকে সংঘর্ষে উভয় পক্ষের সাত জন আহত হয়েছেন। আহতদের আমতলী ও বরিশাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে আমতলী পৌরশহরের ফেরিঘাট সংলগ্ন স্লুইজগেট এলাকার পৌরসভার গরুর হাট সংলগ্ন সরকারী জমি দখল করে আমতলী পৌরসভার সংরক্ষিত আসনের মহিলা কাউন্সিলর মাকসুদা বেগমের স্বামী ও স্থানীয় বালু ব্যবসায়ী ফোরকান গাজী বালুর ব্যবসা করে আসছে। গতকাল দুপুরের পরে বৃষ্টির মধ্যে ফোরকান গাজী সেখানে বালু উত্তোলন করতে গেলে মামুন মৃধা ও প্রতিবেশী অন্যান্য পরিবারের লোকজন ফোরকান গাজীকে নিষেধ করে। তাদের নিষেধ অমান্য করে সেখানে বালু উত্তোলন করে ফোরকান গাজী। এতে প্রতিবেশী চারটি পরিবারের বসতঘর বালুর পানিতে তলিয়ে যায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গত দুই দিন ধরে স্থাণীয় বাসিন্ধা মামুন মৃধা, মৌসুমী, কালাম ও আলেয়া বেগমের বসত ঘর হাটু পরিমান বালুর পানিতে তলিয়ে রয়েছে। রান্না করার পাকের ঘরসহ ঘরের মধ্যে থাকা অন্যান্য আসবাবপত্র পানিতে তলিয়ে গেছে। চারটি পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছে।
গতকাল (রবিবার) রাত আট টার দিকে এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও ঝগড়াঝাটির এক পর্যায়ে ফোরকান গাজী, সজল গাজী ও তাদের সাথে থাকা লোকজন প্রতিবেশী মামুন মৃধা (৪০) উপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে তাকে পিটিয়ে আহত করে। এসময় তার ছোট ভাই তৌহিদ মৃধা (২৫) মামুনকে রক্ষায় এগিয়ে এলে তাকেও রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাঁটিয়ে দেয় ফোরকান গাজীর লোকজন। তাদের ডাকচিৎকারে ঘরের মধ্যে থাকা ও পার্শ্ববর্তী প্রতিবেশী রাসেল মীরের স্ত্রী মৌসুমী (৩০) এগিয়ে আসলে তাকেও মারধোর করেন তারা।
স্থানীয়রা ওই সময় ঘটনাস্থলে এসে তৌহিদসহ আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য আমতলী হাসপাতালে নিয়ে যান। আহত তৌহিদ মৃধার অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় রাতেই তাকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
এঘটনায় অপরপক্ষ ফোরকান গাজী (৫৫), তার স্ত্রী মহিলা কাউন্সিলর মাকসুদা বেগম (৪৫), পুত্র সজল গাজী (২৫), ভাগিনা হাফেজ (২২) আহত হয়ে আমতলী ও বরিশাল হাসপাতালে চিকিৎসাধিন আছে বলে ফোরকান গাজী মুঠোফোনে জানান।
বসতঘর পানিতে তলিয়ে থাকা ভূক্তভোগী আলেয়া বেগম বলেন, ফোরকান গাজীর বালুর পানিতে আজ দুই দিন ধরে আমার বসতঘর তলিয়ে আছে। আমার বসত ঘর হাটু পরিমান পানির নিচে। তিনি আরো বলেন, আমরা এখন ঘরে বসে রান্না করতে পারছিনা। রোজার মধ্যে বাহিরের আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ী থেকে রান্না করে এনে তারপর পরিবার পরিজন নিয়ে খেতে হচ্ছে। আমরা চারটি পরিবার আজ দুই দিন ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছি।
আহত মামুন মৃধা বলেন, সরকারী জমি দখল করে পৌরসভার মহিলা কাউন্সিলরের স্বামী ফোরকান গাজী বালুর ব্যবসা করে। গতকাল দুপুরের পরে বৃষ্টির মধ্যে সেই জমিতে বালু উত্তোলন করতে গেলে আমি তাদের নিষেধ করি। আমার নিষেধ অমান্য করে সে বালি উত্তোলন করে। সেই বালির পানিতে আমার বসত ঘরসহ প্রতিবেশীদের চারটি বসত ঘর হাটু পরিমাণ পানিতে তলিয়ে যায়। এনিয়ে রবিবার রাতে তার সাথে আমার কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে আমাকে ও প্রতিবেশী ঘরের মৌসুমী বেগমকে পিটিয়ে ও আমার ছোট ভাই তৌহিদকে রড দিয়ে বাড়ি মেরে মাথা ফাঁটিয়ে আহত করেছে ফোরকান গাজী ও তার সাথে থাকা লোকজন। আমি এর বিচার চাই।
এ বিষয়ে ফোরকান গাজী মুঠোফোনে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বিকার করে বলেন, মামুন মৃধার লোকজন আমাকে, স্ত্রী, ছেলে ও ভাগনিা হাফেজকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে রক্তাত্ব জখম করেছে। আমরা সকলে আমতলী ও বরিশাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছি।
এ ব্যপারে আমতলী থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ শাহআলম হাওলাদার বলেন, ঘটনা শুনে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। এখোনো এ বিষয়ে কোন অভিযোগ পাইনি। লিখিত অভিযোগ পলে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।