একবার আপনার নাগরিকদের দেখে আসুন

একবার আপনার নাগরিকদের দেখে আসুন

মাননীয় মেয়র, একবার আপনার নাগরিকদের দেখে আসুন। জেনে আসুন তারা কেমন আছে। করোনা মোকাবেলায় গোটা নগরবাসী আপনার পরামর্শ চায়। কারণ করোনা নিয়ে গোটা দুনিয়ার সঙ্গে আমরাও বিপর্যস্ত। এটা একটা অজানা দুর্যোগ। সবার মনেই এক অজানা আশঙ্কা কাজ করছে। করোনা মহামারী আকার ধারণ করলে আমরা অনেকেই হয়তো আক্রান্ত হয়ে...। এই মুহূর্তে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে একবার নাগরিকদের পাশে দাঁড়ান।

করোনার ভয়ে কি আমরা হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকবো। তাতে কি আমরা এই দুর্যোগ থেকে বাঁচতে পারবো? পারবো না। আমাদের অবশ্যই সাধ্য মতো করোনা মোকাবেলায় কাজ করতে হবে। বরিশালের নাগরিকদের আশ্বস্ত করতে হবে। বিভাগীয় প্রশাসন, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, র‌্যাব এবং সেনাবাহিনী সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন। এর সঙ্গে বেশ কিছু রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনও কাজ করছে। তারপরও মানুষ ভীতসন্ত্রস্ত। আপনি একবার আপনার নগরের বাসিন্দাদের দেখে আসুন। তাদের আশ্বস্ত করুন। আপনি আশ্বাস দিলে তারা অনুপ্রাণিত হবে। করোনা মোকাবেলায় তারাই আপনার শক্তি হিসেবে কাজ করবে। আপনার কাউন্সিলরদের মাঠে থাকতে বলুন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই তারা মাঠে থাকলে মানুষ ভরসা পাবে। চিকিৎসকদের ভয় দূর করতে তাদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। নিজে উদ্যোগ নিন, সরকারের কাছ থেকে সহযোগিতা নিন। তারপরও মানুষের পাশে থাকুন।

কথায় আছে ‘মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভূবনে, মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই’। কে মরতে চায় বলুন? সবাই বাঁচতে চায়। আমরাও বাঁচতে চাই। কিন্তু কেমন করে বাঁচবো, আমি, আপনি এবং আমরা? এটাই এখন সবার প্রশ্ন। তারপরও বাঁচার আকুতি আছে। আছে আশা। আছে স্বপ্ন। আমি হয়তো বাঁচবো না। কিন্তু অনাগতদের বাসযোগ্য করার দায়িত্ব তো আমাদের ওপরই। তাই মরণকে সঙ্গে নিয়েই আমাদের জয়যাত্রা। মরণকে জয় করেই তো আগামীর বরিশাল এবং আগামীর বাংলাদেশ গড়তে হবে। আগামীর বরিশাল গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে আমাদের দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হবে। সেজন্য আমাদের মানুষের জয়গান গাইতেই হবে। থাকতে হবে মানুষে পাশে। ‘মানুষের মাঝে ঢেলে দিয়ে যাবো, মানুষের দেওয়া প্রাণ’। এই পণ নেওয়ার সময় এসেছে। নাগরিকদের ঘরে রাখতে হলে আমাদের বাইরে থেকে তাঁদের সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নিতে হবে।
মাননীয় মেয়র একবার পুরো বরিশাল নগরটি দেখে আসুন। গত কয়েকদিন ধরে গোটা বরিশাল একটি নির্জন দ্বীপ মনে হয়েছে। সকাল-সন্ধ্যা-রাত সবই এক মনে হচ্ছে। একটা ভয়-আতঙ্ক বিরাজ করছে সবার মনে। তারপরও এই ভয় জয় করার জন্য বরিশালের অলিতে গলিতে গণমাধ্যম কর্মীরা কাজ করে চলেছেন। বিশেষ করে ব্যক্তিগত সুরক্ষা না থাকার পরও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার বন্ধুরা করোনার সর্বশেষ অবস্থা জানাতে মাঠেই অবস্থান করছেন। আছেন সব হাসপাতালের চিকিৎসকরা। চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) নেই। তারপরও তারা মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের আশ্বস্ত করতেও আমাদের উদ্যোগ নেওয়া দরকার।

আমাদের জেলা প্রশাসন দিন-রাত তার কর্মকর্তা-কর্মচারিদের নিয়ে মাঠে আছেন। ছুটে যাচ্ছেন হতরিদ্র মানুষের বাড়িতে খাদ্য পৌঁছে দিতে। এর সঙ্গে পুলিশ প্রশাসন, র‌্যাব, সেনাবাহিনী সর্বাত্মক শক্তি নিয়ে মাঠে আছে। কখনো রাস্তায় জীবানুনাশক ছিটিয়ে, আবার কখনো বাজার, বন্দরে নিরাপদ দূরত্ব চিহ্ন এঁকে দিচ্ছেন। এর সঙ্গে অনেক সামাজিক সংগঠনও কাজ করছেন। কাজ করছে সিটি করপোরেশনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশও। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে তারা মানুষকে আতংকিত না হতে আহ্বান জানাচ্ছেন। একজন মণিষা যে উদ্যোগ নিয়ে চলেছেন, তাতে গোটা নগর আশ্বস্ত হচ্ছে। তার সঙ্গে আমরা সবাই মিলে উদ্যোগ নিলে ভয়কে জয় কর অসম্ভব নয়।

করোনায় সবচেয়ে বড় উদ্যোগ হচ্ছে, বরিশাল সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীদে। অনেকেই বলবেন তাদের কাজই তো এটা। এরকম অনেকেরই তো কাজ ও দায়িত্ব আছে কে কোন কাজটা সঠিকভাবে করছেন? আমি বলবো, কতজন কর্মকর্তা আছেন যারা মানুষদের সচেতন করতে এবং সহযোগিতা দিতে এই দুর্যোগে মাঠে আছেন? কতাজন আছেন যারা রাস্তার ময়লা ঘেঁটে পরিষ্কার করছেন? নেই অনেকেই। কেউ কেউ আছেন। আর যারা আছেন তারা হচ্ছেন ওই পরিচ্ছন্নতা কর্মী। এই পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নগরের ময়লা পরিষ্কার করে চলেছেন। করোনা সংক্রমণ কি এদের ছুঁতে পারবে না বলে মনে হচ্ছে। বাস্তবে তা নয়। আমরা মনে করি ওরাই এই দুর্যোগে আমাদের সাহস যোগাচ্ছে। আমাদের উচিত এই পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা পোশাক দিয়ে সহযোগিতা দেওয়া।

তাই আবারো অনুরোধ জানাই, মাননীয় মেয়র আপনি সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে অন্তত একটি খোলা মাইক্রোবাসে ঘুরে আপনার নাগরিকদের দেখে আসুন। দূর থেকে হাত মাইকে সতর্ক ও সচেতন থাকার আহ্বান জানান। আপনার পরিষদসহ সকলকে এই দুর্যোগ মোকাবেলায় সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে বলুন। আপনার এমন আহ্বানের অপেক্ষায় আছে পুরো নগর। আছি আমরাও। আপনি সেই উদ্যোগ নিন।