করোনা ওয়ার্ডের চিকিৎসায় রোগীরা যেন আস্থা ফিরে পায়

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে করোনা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীদের মৃত্যুর মিছিল বাড়ছে। প্রতিদিনই এক থেকে চারজন রোগী মারা যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে শিশু, যুবক থেকে শুরু করে বৃদ্ধরা রয়েছে। সাধারণ রোগীরা নিরুপায় হয়ে করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি হয়। বাড়িতে অক্সিজেনসহ অন্যান্য ব্যবস্থা না থাকায় প্রচ- শ^াসকষ্টের রোগীরা করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি হচ্ছেন। সেই রোগীরা মৃত্যুর শঙ্কা নিয়েই হাসপাতলে যায়। কিন্তু হাসপাতালে গিয়ে তারা যদি চিকিৎসায় আশ^স্ত না হয় সে দায় কেবল চিকিৎসকদেরই নয়, সে দায় আমাদের সবার। করোনা ওয়ার্ডের চিকিৎসা নিয়ে আমরা নানা রকম অভিযোগ শুনি। সেসব অভিযোগ বিশ^স করতে চাই না। যেভাবে রোগীর সেবা পাওয়ার কথা সেরকম ব্যবস্থা হয়তো নেই। সব ব্যবস্থা থাকলে সেবার মান আরো উন্নত হতে পারতো। কিন্তু আমরা বলতে চাই, করোনা ওয়ার্ডের চিকিৎসায় রোগীরা যেন আস্থা ফিরে পায়। তা না হলে স্বাস্থ্য সেবার প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাবোধ হারাবে। সেটা কোনভাবেই কাম্য নয়। করোনা ওয়ার্ডের রোগীদের প্রতি মানবিক হতে হবে।
গত রোববার শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাত্র ১৩ বছর বয়সের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। প্রচ- শ^াসকষ্ট থাকার পরনও তাকে অক্সিজেন দেওয়া যায়নি। তাকে জিং খাওয়াতে বলা হয়েছ। এর আগে ৩৬ বছর বয়সের এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। তিনিও শ^াসকষ্টজনিতকারণে মারা গেছেন। এরকম অনেক রোগী মারা গেছে কেবল অক্সিজেন কিংবা আইসিইউ সাপোর্ট না দেওয়ার কারণে। হাসপতালে অক্সিজেন এবং আইসিইউ সাপোর্ট পাবে এমন আশায় হাসপাতালে এলেও সেই সুযোগ মেলেনি। স্বজনদের অভিযোগ বাড়িতে থাকলে হয়তো এমন অবস্থা নাও হতে পারতো। এমন অভিযোগ কোনভাবেই কাম্য নয়।
রোগী ও রোগীর স্বজনদের অভিযোগ করোনা ওয়ার্ডে পর্যাপ্ত সেবা নেই। ডাক্তাররা রোগীর কাছেও আসে না। পর্যাপ্ত অক্সিজেন সিলি-ার নাই। আবার কিছু কিছু সিলি-ারে মিটার নেই। সিলি-ার থাকলেও রোগীকে সময় মতো দেওয়া হচ্ছে না। করোনা ওয়ার্ডে পর্যাপ্ত জনবলও নেই। মাত্র দুইজন ওয়ার্ড বয় দিয়ে চলছে ওয়ার্ড। চিকিৎসার জন্য কমবেশি নার্সের ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে রোগীদের। করোনা ওয়ার্ডের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও সেরকম নেই। ওষুধ সরবরাহ না থাকায় করোনা রোগীরা ফার্মেসিতে গিয়ে ওষুধ কিনছেন। যার ফলে করোনা আরো ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
করোনা ওয়ার্ড থেকে ফিরে একজন অভিযোগ করেছেন, ওয়ার্ডের নোংড়া পরিবেশ। পরিচ্ছন্ন করা হয় না। করোনা ওয়ার্ডের চিকিৎসাও সাধারণ ওয়ার্ডের মতো দেওয়া হচ্ছে। সবারই একই চিকিৎসা। ১৩ বছরের শিশু মারা গেছে প্রচ- শ^াসকষ্ট হলেও ডাক্তার পাওয়া যায়নি। ডাক্তারকে বলার পর বলেছে অক্সিজেন লাগিয়ে দিলেই তো হয়। তারা কেউ কাছেও আসে না। বয়স্ক একজন মারা গেছে, তাকে আইসিইউতে শিফট করা লাগবে বলার পরও ডাক্তার বলেছে একটা কটসন দেন ঠিক হয়ে যাবে। ৩৬ বছরের এক নারী মারা গেছে। তার আইসিইউ দরকার ছিল। কেবল আইসিইউ সাপোর্ট না দেওয়ার কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে। অক্সিজেন এবং আইসিইউ ব্যবস্থা থাকার পরও রোগীদের সেবা দেওয়া যাচ্ছে না এটা আমাদের নতুন চিন্তায় ফেলেছে। আমরা এমন উদাহরণ শুনতে চাই না। অবশ্যই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এব্যাপারে নজর দেবেন।
আমরা জানি, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেনের তত্তাবধানে ভালোভাবেই করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা করা হচ্ছে। মিডলেভেলের বেশ কিছু ডাক্তার ঝুঁকি নিয়েও কাজ করে চলেছেন। তারপরও যে অভিযোগগুলো এসেছে সেগুলো আমলে নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানাবো। অবশ্যই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এব্যাপারে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।