করোনা মোকাবেলায় সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন

করোনা প্রাদুর্ভাব শুরুর পর থেকেই সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক পড়া, সচেতন ও সতর্ক থাকতে ব্যাপক কাজ হয়েছে। এখনও অনেক উদ্যোগ চলছে। ব্যক্তি উদ্যোগগুলো আগের তুলনায় সংকুচিত হয়ে আসছে। তবে বেশি কিছু দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি এখনো সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি সহযোগী হয়ে আছেন। ত্রাণ দেওয়া থেকে শুরু করে যার যার অবস্থান থেকে কর্মহীন মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা অব্যাহত আছেন। এই কাজে শুরু থেকেই এক দপ্তরের সঙ্গে অন্য দপ্তরের মধ্যে সমন্বয় তেমন একটা লক্ষ্য করা যায়নি। করোনা মোকাবেলায় সচেতনতা, ত্রাণসহ সব বিষয়ে সমন্বয় থাকলে করোনা নিয়ন্ত্রণ করা অনেক ক্ষেত্রে সহজ হতে পারতো।
পোষাক কারখানা খোলা আবার বন্ধ করার ঘোষণায় মানুষের মিছিল আমাদের চরম ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এরপর ঈদের আগে মার্কেট খোলার সিদ্ধান্ত আমাদের আরেক ঝুঁকির মধ্যে ফেলে। ঈদের ছুটিতে ফেরীঘাটে মানুষের ভীড় এবং ঢাকা-নারায়নগঞ্জ থেকে গ্রামে গ্রামে মানুষের আশা-যাওয়ায় নতুন সংকটে ফেলেছে। এক দিকে প্রশাসন লকডাউন মানতে অীভযান চালিয়েছ্ েঅন্যদিকে সবকিছু খুলে দেওয়া হয়েছে। সমন্বয়হীনতার কারণে করোনা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। দিন দিন করোনা ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশের হাসপাতালগুলোতে করেনানা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত নমুনা সংগ্রহের ব্যবস্থা নেই। নেই পর্যাপ্ত জনবল। যারা আছেন তাদের মধ্যে নেই সমন্বয়। মানুষ করোনা পরীক্ষা করাতে গিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়ছেন। দিনের পর দিন ঘুরেও নমুনা দিতে পারছেন না। আবার যারা দিতে পারছেন তারা মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি। নমুনা দিতে ও নিতে গিয়েও আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। জেলা প্রশাসন, পুলিশ, সিভিল সার্জন, জেলা ও উপজেলা হাসপাতাল এবং মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সঙ্গে সমন্বয় থাকলে সমস্যা কিছুটা কমতো।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের একমাত্র পিসিআর ল্যাবের ওপর নির্ভর করে চলছে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলার করোনা পরীক্ষা। যদিও ভোলায় একটি নতুন মেশিন স্থাপন করার কথা রয়েছে। বরিশালের ল্যাবে নমুনা পাঠানো এবং মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভাইরে নমুনা সংগ্রহে রয়েছে নানা জটিলতা। সিভিল সার্জন, সিটি করপোরেশন, জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মধ্যেও সমন্বয় নেই। ফলে মানুষের দুর্ভোগ কোনভাবেই কমছে না। এই মুহূর্তে করোনার নমুনা পরীক্ষা, করোনার চিকিৎসা, স্বাস্থ্যবিধি মানতে সমন্বিত উদ্যোগের কোন বিকল্প নেই। যে কোন মূল্যে মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করতে হবে। তা না হলে করোনা মোকাবেলা করা আরো কঠিন হবে।
বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে সরকারি নির্দেশনা কার্যকর করতে এবং স্বাস্থ্যবিধি মানতে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসহ সবাই কমবেশি কাজ করছে। বর্তমানে করোনায় চিকিৎসকের পরামর্শ পাওয়া ছাড়াও বাড়িতে থেকে করোনা মোকাবেলা করার চেষ্টাও চলছে। মানুষ হাসপাতালে না গিয়ে বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা নিতে আগ্রহী হচ্ছেন। তবে স্বাস্থ্যবিধি মানার সংখ্যা খুবই কম। শহর এলাকার কিছু মানুষ স্বস্থ্যবিধি মানলেও বেশিরভাগ মানুষ যথেচ্ছারভাবে চলাচল করায় কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। এমন অবস্থার প্রেক্ষিতে সরকার সারা দেশে অধিকহাররে করোনা আক্রান্ত অঞ্চলগুলোকে লকডাউন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেখানে লাল, হলুদ এবং সবুজ জোনে ভাগ করা হয়েছ। সেই অনুযায়ী লকডাউন হবে। সেখানেও মাঠ প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, পুলিশ, সিভিল সার্জনসহ অন্যান্য বিভাগের মধ্যে সমন্বয় করা সম্ভব হচ্ছে না। অঞ্চলভিত্তিক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ লকডাউন করতে হলেও সব প্রশাসনের একযোগে সিদ্ধান্ত নিয়ে এগোতে হবে। তা না হলে করোনা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না।
আমরা বলতে চাই, করোনা মোকাবেলায় আমাদের কঠোর হওয়া জরুরী। সেক্ষেত্রে সব প্রশাসন এবং নাগরিকদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে এগোতে হবে। জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রেখেই লাল চিহ্নিত ছোট্ট ছোট্ট এলাকায় লকডাউন করার নির্দেশনা রয়েছে। স্বাভাবিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ছাড়া এই মহামারি থেকে রক্ষ পাওয়া কঠিন। শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং স্বাস্থ্যবিধি মানার ওপর আমাদের বেশি বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। সেটা কেবল বরিশালের মানুষ মানলে হবে না। লঞ্চ-বাসে যারা আসছেন তাদের সুরক্ষা ব্যবস্থার দিকে জোর দিতে হবে। ঢাকা নদীবন্দরসহ সকল বাস টার্মিনালে কঠিনভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ এবং বাড়িতে গরম পানি, গরম ভাপ নিয়ে প্রতিরোধ করতে হবে। নিজের সুরক্ষায় নিজেকেই উদ্যোগী হতে হবে।
সরকার লাল চিহ্নিত এলাকাগুলোতে লকডাউন করার নির্দেশনা দিয়েছে। তবে লকডাউন করতে গিয়ে যেন স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যহত না হয় সেদিকেও নজর রাখতে বলেছে। বরিশাল মহানগরসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় লকডাউন দেওয়ার ব্যাপারে সিটি করপোরেশন, সিভিল সার্জন, পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। এই ক্ষেত্রে কেবল প্রশাসন নয় নাগরিকদেরও সহযোগী হয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমরা চাই, ছোট্ট ছোট্ট জোন লকডাউন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নিতে হবে। অবশ্যই লকডাউন এলাকার বাসিন্দাদের দৈনন্দিন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের জন্য সমস্যায় পড়তে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।