করোনাজয়ী সাংবাদিক অপু প্লাজমা দিলেন করোনার চিকিৎসায়

করোনাজয়ী সাংবাদিক অপু প্লাজমা দিলেন করোনার চিকিৎসায়

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার পর সেরে ওঠাদের একজন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন নিউজের সাংবাদিক আশিকুর রহমান অপু। কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠা এই সাংবাদিক করোনার চিকিৎসায় স্বেচ্ছায় প্লাজমা দিয়েছেন। সাংবাদিক অপুর শরীর থেকে চারশ এমএল প্লাজমা সংগ্রহ করা হয়েছে।

করোনাজয়ী দু’জন চিকিৎসকের পর রবিবার দুপুরে অপুর প্লাজমা সংগ্রহ করা হয় বলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হেমাটোলজি বিভাগের প্রধান ও প্লাজমা থেরাপি সাব কমিটির প্রধান প্রফেসর ডাক্তার এম এ খান নিশ্চিত করেছেন।

বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে করোনা চিকিৎসায় প্লাজমা থেরাপি শুরু করা হয়েছে। দেশেও কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হওয়া ব্যক্তির শরীর থেকে প্লাজমা সংগ্রহ করা হচ্ছে। পরবর্তীতে এই প্লাজমা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে আক্রান্ত রোগীদের থেরাপি দেয়া হবে।
নিজের প্লাজমাতে অন্য একজন অসুস্থ মানুষ সুস্থ হবেন এটাকে সবচেয়ে বড় পাওয়া হিসেবে দেখছেন সাংবাদিক আশিকুর রহমান অপু।

তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্লাজমা দেওয়ার বিষয়টি রক্ত দেওয়ার মতোই। মানসিকভাবে ভীষণ শান্তি পাচ্ছি। আমার প্লাজমাতে কেউ সুস্থ হবেন এবং অন্তত একজন মানুষও যদি আমাকে দেখে উৎসাহিত হন সেটাই প্রাপ্তি।’

রক্তের তরল হলুদাভ অংশকে প্লাজমা বা রক্তরস বলা হয়। রক্তের মধ্যে তিন ধরনের কণিকা ছাড়া বাকি অংশই রক্তরস যা রক্তের প্রায় ৫৫ শতাংশ।

প্লাজমা থেরাপিতে শতভাগ সাফল্য নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও চিকিৎসকরা বলছেন, যেহেতু কোভিড-১৯-এর কোনও চিকিৎসা এখনও নেই আর প্লাজমা থেরাপির কোনো ক্ষতি নেই তাই পরীক্ষামূলকভাবে এটা দিতেও সমস্যা নেই।

গত ১০ এপ্রিল সাংবাদিক আশিকুর রহমান অপু করোনা পজেটিভ বলে শনাক্ত হন। এরপর ২৪ এবং ৩০ এপ্রিলের দুই টেস্টে নেগেটিভ আসে তার। এরপর তাকে করোনামুক্ত ঘোষণা করা হয়। করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার পরই তিনি এগিয়ে আসেন প্লাজমা দিয়ে অন্য একজনকে সুস্থ করার প্রক্রিয়ায়।

অপু বলেন, গত কয়েকবছরে রক্তের প্লাজমা নিয়ে বেশ আলোচনা হয়। কারণ ডেঙ্গু আক্রান্তদের বেলায় রক্তের প্লাটিলেট দিয়ে এই চিকিৎসা সম্পর্কে জানতে পারি। তাই এবার ইচ্ছা ছিল অফিস শুরু করার পর প্লাজমা দেব। এর মধ্যে এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী সম্পাদক মুন্নী সাহা আমাকে প্লাজমা দেওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন।

প্লাজমা দেওয়ার আগে ঢামেকের হেমোটোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এম এ খানের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলেছিলেন বলেও জানান অপু।

 সিআইডির পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলামও তাকে প্লাজমা দিতে উৎসাহিত করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, এরপর ঢামেকে গিয়ে প্লাজমা দিয়ে আসি।

ঢামেকের হেমাটোলজি বিভাগের প্রধান ও প্লাজমা থেরাপির জন্য গঠিত কমিটির প্রধান অধ্যাপক ডা. এম এ খান বলেন, ‘যারা প্লাজমা দিচ্ছেন তাদের ভয়ের কোনও কারণ নেই, তারা নিরাপদ থাকবেন। কোনও ধরনের রি-ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কাও নেই।’

কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে যারা সুস্থ হয়েছেন প্লাজমা দিয়ে অন্য আক্রান্তদের সুস্থ করার প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখতেও আহ্বান জানিয়েছেন এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।

অধ্যাপক এম এ খান বলেন, ‘হাসপাতালে ভর্তির পরপরই যেসব রোগীদের শ্বাসকষ্ট শুরু হবে তাদের যদি সঙ্গে সঙ্গে এক ব্যাগ বা ২০০ মিলিলিটার প্লাজমা দেওয়া যায় তাহলে তার অবস্থা খারাপের দিকে না গিয়ে ফল ভালো আসে। কারণ প্লাজমা শরীরের রক্তের মধ্যে যে ভাইরাস থাকে তাকে অকেজো করে দেয়। অ্যান্টিবডি তৈরি করে ভাইরাসের বিপক্ষে।’

গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের এফডিএ (ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) প্লাজমা থেরাপি অনুমোদন দেওয়ার পর অধ্যাপক ডা. মহিউদ্দিন এ উদ্যোগ নেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরকে জানানো হলে, ১২ এপ্রিল এ নিয়ে বৈঠক হয়। ১৮ এপ্রিল তাকে প্রধান করে চার সদস্যের টেকনিক্যাল সাব কমিটি গঠন করে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

বাকি তিন সদস্য হলেন ঢামেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির এবং ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মাজহারুল হক তপন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সি।